Advertisement
E-Paper

সুটিয়া-বারাসত, দুই দিদি যেন এক সূত্রে বাঁধা

সুখসাধুর ভিটে। সুটিয়া এখনও মনে রেখেছে তাকে। এ-ওর গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়া অগুন্তি আসশ্যাওড়ার ঝোপের আড়ালে থমকে রয়েছে বাড়িটা। চলাচলের পথে ভাঙাচোরা ভিটেটার দিকে চোখ পড়লে এখনও হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে দেড় দশক আগের দিনগুলো। সুখসাধুর ভিটের প্রলম্বিত সেই ছায়া এখনও ছড়িয়ে আছে সুটিয়ায়। সে ভিটেয় ঘুঘু চড়িয়ে গাইঘাটার এই প্রান্তিক গ্রামে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার ‘শাস্তি’ হিসেবে আড়াই বছর আগে যাঁর মাথায় গুলি সেঁদিয়ে দিয়েছিল স্থানীয় দুষ্কৃতীরা।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:০০
টিভিতে চোখ বরুণ বিশ্বাসের দিদি প্রমীলা বিশ্বাসের।—নিজস্ব চিত্র।

টিভিতে চোখ বরুণ বিশ্বাসের দিদি প্রমীলা বিশ্বাসের।—নিজস্ব চিত্র।

সুখসাধুর ভিটে।

সুটিয়া এখনও মনে রেখেছে তাকে।

এ-ওর গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়া অগুন্তি আসশ্যাওড়ার ঝোপের আড়ালে থমকে রয়েছে বাড়িটা। চলাচলের পথে ভাঙাচোরা ভিটেটার দিকে চোখ পড়লে এখনও হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে দেড় দশক আগের দিনগুলো। সুখসাধুর ভিটের প্রলম্বিত সেই ছায়া এখনও ছড়িয়ে আছে সুটিয়ায়।

সে ভিটেয় ঘুঘু চড়িয়ে গাইঘাটার এই প্রান্তিক গ্রামে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার ‘শাস্তি’ হিসেবে আড়াই বছর আগে যাঁর মাথায় গুলি সেঁদিয়ে দিয়েছিল স্থানীয় দুষ্কৃতীরা।

বরুণ নেই, কিন্তু তাঁর নিতান্ত আটপৌরে বাড়িটা রয়ে গিয়েছে। অবিকল আগের মতো। রয়ে গিয়েছে, তাঁর হাতে তৈরি ‘সুটিয়া প্রতিবাদী মঞ্চ’ আর দিদি প্রমীলা রায়।

খুব ধীর গলায় যিনি বলছেন, “ভাইটাকে খুব মনে পড়ছে আজ।”

টিভি-র খবরে তখন বারাসত আদালতে রিঙ্কু দাসের কান্না ভেজা মুখ। বলছেন, “দোষীদের চরম শাস্তি হলে তবেই স্বস্তি পাব। তার আগে শান্তি নেই।” সুটিয়া-বারাসতের দুই ভাই-হারা দিদি যেন এ দিন সকাল থেকে এ ভাবেই এক অদৃশ্য সুতোয় জড়িয়ে রইলেন।

দিদির সম্মান বাঁচাতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে মারা গিয়েছিলেন বারাসতের রাজীব দাস। এ দিন বারাসত আদালতে রাজীব খুনে ধৃত দুষ্কৃতীদের দোষী সাব্যস্ত করায় যেন রিঙ্কুর স্বস্তি ছুঁয়ে গেল প্রমীলাকেও।

টিভির পর্দায় দুষ্কৃতীদের সাজার খবর শুনে তাই প্রমীলা বলছেন, “ওদের সমাজে বেঁচে থাকবার কোনও অধিকার নেই। ওদের চরম শাস্তি চাইছি।” জানান, রিঙ্কুর সঙ্গে বেশ কয়েক বার কথা হয়ে তাঁর। দেখাও হয়েছে। বলছেন, “আজ বারাসত যেতে পারিনি। তবে রিঙ্কুর পাশেই আছি আমি। ভাই হারানোর কষ্টটা তো জানি।” ভাই হারানোর পর থেকে শ্বশুরবাড়ি থেকে সুটিয়ায় বাপের বাড়িতেই আছেন তিনি। সমানে লড়াই করে চলেছেন বরুণের হাতে গড়া প্রতিবাদী মঞ্চের হয়ে। তিনি বলছেন, “মহিলাদের উপর আক্রমণ হলেই আমি ছুটে যাই। কামদুনি থেকে বামনগাছি, এ সব কাজের মধ্যেই ভাইকে খুঁজে পাই। এটাই স্বস্তি।”

বরুণের বাবা জগদীশবাবু ছেলের মৃত্যুর পর থেকেই কলকাতায় থাকেন। ফোনে বলছেন, ‘‘রাজীব দাসের খুনিরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে শুনে ভাল লাগছে। কী জানেন, সন্তান হারানোর যন্ত্রণাটা বুঝিয়ে বলা যায় না।” এ দিন সুটিয়ার প্রতিবাদী মঞ্চের পক্ষ থেকেও বরুণ বিশ্বাসের আবক্ষ মূর্তির সামনে ফুল দেওয়া হয়েছে। সুটিয়ার পথে হেঁটেছে মঞ্চের মিছিলও। তাঁরা রাখঢাক না রেখেই বলছেন, “রাজ্য প্রশাসনের উপর আমাদের ভরসা নেই। আমরা বরুণের খুনিদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।”

barun biswas sutia simanta moitra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy