Advertisement
E-Paper

সাড়ে তিন ফুট উচ্চতা নিয়েই লড়াই

জন্ম থেকেই অসুখ-বিসুখে জর্জরিত অপুষ্ট সাড়ে তিন ফুটের বাইশ কিলোগ্রাম ওজনের ছোট্ট শরীরটা। চরম অভাবের সংসারে যথাযথ চিকিৎসাও হয়নি। তবুও বড় হওয়ার অদম্য জেদ, পড়া আর পড়ানোর আগ্রহ তাকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে চলেছে লক্ষ্যপূরণের পথে। ক্যানসার রোগাক্রান্ত মাকে সদ্য হারিয়েও অবিচল লক্ষ্যে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে মথুরাপুর ১ ব্লকের রানাঘাটা হাইস্কুলের ছাত্র পূর্ব রানাঘাটা গ্রামের বাসিন্দা সুরজিত দেবনাথ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ নাইয়া বলেন, “৮৫ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ও যে ভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তা অনুকরণযোগ্য।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৯

জন্ম থেকেই অসুখ-বিসুখে জর্জরিত অপুষ্ট সাড়ে তিন ফুটের বাইশ কিলোগ্রাম ওজনের ছোট্ট শরীরটা। চরম অভাবের সংসারে যথাযথ চিকিৎসাও হয়নি। তবুও বড় হওয়ার অদম্য জেদ, পড়া আর পড়ানোর আগ্রহ তাকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে চলেছে লক্ষ্যপূরণের পথে। ক্যানসার রোগাক্রান্ত মাকে সদ্য হারিয়েও অবিচল লক্ষ্যে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে মথুরাপুর ১ ব্লকের রানাঘাটা হাইস্কুলের ছাত্র পূর্ব রানাঘাটা গ্রামের বাসিন্দা সুরজিত দেবনাথ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ নাইয়া বলেন, “৮৫ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ও যে ভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তা অনুকরণযোগ্য।”

বাঁশ কঞ্চির গায়ে মাটি ছিটানো টালির চালার দু’কামরার ঘুপচি ঘর। কর্মহীন অশক্ত বৃদ্ধ বাবা কালীদাসবাবু জানান, সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। বড় ছেলে স্বপন সদ্য কলকাতার একটি ছোট্ট কারখানায় শ্রমিকের কাজ নিয়েছে। দু’একদিন অন্তর অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে যায় সুরজিৎ। ঠিক মতো পড়াশোনাও করতে পারে না। কাকিমা অনিমাদেবী বলেন, “ জন্ম থেকেই ওর শরীর বিকলাঙ্গ ছিল। ছ’দিন বয়সে অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু তেমন লাভ হয়নি। ওর মেরুদণ্ড বাঁকা, শরীরে হাড় সংখ্যায় কম, কিডনির অসুখ, হাইপ্রেসার। মিনিট পাঁচেক হাঁটার পরে কোমর যন্ত্রণায় শুয়ে পড়ে।” কালীদাসবাবু বলেন, “অর্থাভাবে ও দূরত্বের কারণে আর কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসা করানো যায় না। ওর শরীরের অবনতি হচ্ছে বুঝতে পেরেও কিছু করতে পারি না। শুধু নিজেকে অভিশাপ দিই।” বিজ্ঞান প্রিয় বিষয় সুরজিতের। গল্প ও প্রবন্ধের বই পড়তে ভালোবাসে। মাঠে গিয়ে অন্যদের খেলা দেখে। পাড়ার বন্ধুদের বাড়িতে গিয়ে ক্যারম খেলে বা টিভিতে ডিসকভারি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেল দেখে সময় কাটায়। সুরজিৎ বলে, “পড়ানোটাই আমার প্যাশন। তাই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখি। পাশের প্রাথমিক স্কুলে যখন একজন মাত্র শিক্ষক ছিলেন, তখন স্যার মফিজুদ্দিন লস্করের ডাকে দিনের পর দিন পড়িয়ে এসেছি।”

উচ্চতায় বাড়েনি মথুরাপুরের আর এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী গৌরাঙ্গ হালদারও। কামারপোতা রামকৃষ্ণ হাইস্কুলের ছাত্র গৌরাঙ্গর পরীক্ষার সেন্টার পড়েছে কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলে। বেঞ্চে কখনও বাবু হয়ে বসে কখন পা ঝুলিয়ে বসে পাশেই খাতা রেখে লিখছে সে। জানা গেল, বছর চারেক বয়সে একবার পুকুরে পড়ে ডুবে যায় গৌরাঙ্গ। উদ্ধার পেলেও সেই থেকে শরীর আর বাড়েনি। দিনমজুর বাবা দিবাকর হালদার চিকিৎসার চেষ্টা করলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। দুর্বল শরীর নিয়ে পড়াশনার অদম্য ইচ্ছায় পঞ্চম শ্রেণি থেকে বাবার সাইকেলে চেপে এক কিলোমিটার দূরে নাটাবেড়িয়া গ্রাম খেকে স্কুলে যাতায়াত করেছে গৌরাঙ্গ। এখনও পর্যন্ত প্রতিবন্ধী শংসাপত্র জোগাড় করা যায়নি বলে জানালেন প্রধান শিক্ষক সুকুমার মালি। তিনি বলেন, “ছেলেটা পড়াশনায় যথেষ্ট ভাল।” কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি বলেন, “ওর যাতে পরীক্ষা দিতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে।”

raidighi mathurapur madhyamik southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy