Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
State News

পিকনিকে গিয়ে ডুবে মৃত ৩, নিখোঁজ ১

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম টোকন হালদার, প্রসেনজিৎ দাস, সুরেশ সিংহ। তাঁদের সঙ্গী শুভঙ্কর নন্দনের খোঁজ চলছে। সকলেরই বয়স তিরিশের কোঠায়। বাড়ি, গড়িয়াহাটের পণ্ডিতিয়া রোডে।

(উপরে, বাঁ-দিক থেকে) প্রসেনজিৎ দাস (মৃত), টোকন হালদার (মৃত),  (নীচে, বাঁ-দিক থেকে ) সুরেশ সিংহ (মৃত), শুভঙ্কর নারুয়া (নিখোঁজ)

(উপরে, বাঁ-দিক থেকে) প্রসেনজিৎ দাস (মৃত), টোকন হালদার (মৃত), (নীচে, বাঁ-দিক থেকে ) সুরেশ সিংহ (মৃত), শুভঙ্কর নারুয়া (নিখোঁজ)

নিজস্ব সংবাদদাতা
কুলপি শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ২৩:১৪
Share: Save:

পিকনিকে এসে নদীতে স্নান করতে নেমেছিলেন চার সঙ্গী। কেউই সাঁতার জানতেন না। ঢেউয়ের তোড়ে তলিয়ে যান সকলে। তিন জনের দেহ উদ্ধার করা গেলেও একজনের হদিস মেলেনি। রবিবার দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির পয়লা নম্বর ঘেরি গ্রামের কাছে হুগলি নদীতে।
পুলিশ জানিয়েছে মৃতদের নাম টোকন হালদার, প্রসেনজিৎ দাস, সুরেশ সিংহ। তাঁদের সঙ্গী শুভঙ্কর নারুয়ার খোঁজ চলছে। সকলেরই বয়স তিরিশের কোঠায়। বাড়ি, গড়িয়াহাটের পণ্ডিতিয়া রোডে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকালে গড়িয়াহাটের একটি ক্লাব থেকে ষোলো জনের দলটি কুলপির নিশ্চিন্তপুরে হুগলি নদীর চরে পিকনিক করতে আসে। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার সেরে বেলা আড়াইটে নাগাদ চার জন নদীতে নেমেছিলেন। তার পরেই ঘটে বিপত্তি। দলের কয়েক জন সদস্য জানিয়েছেন, চার জন জলে নামলেও বাকিরা ছিলেন পাড়ের কাছেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধুদের চিৎকার শুনে সকলে এগিয়ে যান জলের দিকে। কার্যত সকলের চোখের সামনেই ভেসে যান প্রসেনজিৎরা। জোয়ারের স্রোতে কিছুটা দূর পর্যন্ত হাবুডুবু খেতে দেখা যাচ্ছিল সকলকে। কিন্তু সে সময়ে জলে নেমে উদ্ধার করার মতো পরিস্থিতি ছিল না।
দলের এক সদস্য বিশ্বজিৎ নস্কর বলেন, ‘‘জোয়ার চলছিল। ওরা নদীতে নামার পরেই কিছুটা দূরে একটি জাহাজ ডায়মন্ড হারবারের দিকে এগোচ্ছিল। উঁচু ঢেউ এগিয়ে আসে। তাতেই তলিয়ে যায় সকলে। কেউই সাঁতার জানত না।’’
বাকি বন্ধুদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন জড়ো হয়ে যায়। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। লঞ্চ, নৌকা থেকে জাল ফেলে সকলের সন্ধান শুরু হয়। চরের কাছাকাছি অংশেই জলে ভাসতে দেখা যায় দেহগুলি। একে একে তিন জনকে পাড়ে তোলা হয়। নিয়ে যাওয়া হয় কুলপি গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা সকলকে মৃত বলে জানিয়ে দেন। পরে দেহগুলি ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে পাঠানো হয় ময়না-তদন্তের জন্য।
রাতের দিকে ১৬ পণ্ডিতিয়া রোডে ওই পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, ছোট ছোট ঘুপচি ঘর। কোথাও কোথাও জটলা। মহিলাদের কান্নার রোল শোনা যাচ্ছে এখান ওখান থেকে। পুরো পাড়ায় শোকের ছায়া। প্রসেনজিৎ একটি বুটিকে কাজ করতেন। টোকন

আরও পড়ুন: সম্পত্তি হাতিয়ে জীবিত মায়ের শ্রাদ্ধ করল মেয়ে, মায়ের ঠাঁই হল নদীর চরে

আরও পড়ুন: শ্মশানে শেষ শয্যায় মৃত মা! সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াল ছেলে

দোকান। সুরেশ নিজের অ্যাপক্যাব চালাতেন। কেউই বিয়ে-থা করেননি।
পরিবার সূত্রের খবর, মাঝে মধ্যেই সকলে এক দিনের ছুটিতে বেরিয়ে পড়তেন ঘুরতে। রবিবার ভোর ৫টা নাগাদ দু’তিনটি গাড়ি এবং কয়েকটি মোটর বাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন হইহই করতে করতে। কথা ছিল, রাতেই ফিরবেন সকলে। জানা গেল, আগেও বার কয়েক কুলপিতে নদীর পাড়ে পিকনিক করতে গিয়েছেন প্রসেনজিৎরা। পরিবারগুলির আফসোস, সাঁতার না জেনেও কেন যে তাঁরা জলে নামতে গেলেন!
প্রসেনজিতের মা কাঁদতে কাঁদতে জানালেন, ছেলেকে এ দিন যেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু সে কথা কানে তোলেননি প্রসেনজিৎ। বলেছিলেন, ‘‘কিচ্ছু ভেবো না, রাতের দিকে ফিরে আসব।’’
শুভঙ্করের পরিবারের অবস্থা আরও শোচনীয়। ঘরের সামনে মা বসেছিলেন গুম হয়ে। ছেলের কী খবর আসবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় খাওয়া-দাওয়া ভুলেছেন।
পাড়ার কয়েক জন বিকেলে খবর পেয়েই রওনা দেন কুলপির দিকে। সেখানকার পুলিশ জানিয়েছে, দেহ শনাক্ত করে ময়নাতদন্ত হবে। তারপরে দেহগুলি তুলে দেওয়া হবে পরিবারের হাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Accident Gariahat Hooghly River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE