Advertisement
০৮ অক্টোবর ২০২৪
Rose Valley Scam

জেলে চার লগ্নিকর্তার চার রোজনামচা

প্রেসিডেন্সি জেলের সেলে কারও সঙ্গে তেমন কথা বলেন না সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। প্রায় সর্বদাই আত্মমগ্ন। মন দিয়ে বই পড়েন। পত্রপত্রিকার পাতা ওল্টান।

সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায়, গৌতম কুণ্ডু ও প্রমথনাথ মান্না। ফাইল চিত্র।

সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায়, গৌতম কুণ্ডু ও প্রমথনাথ মান্না। ফাইল চিত্র।

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:২০
Share: Save:

কারও সময় কাটে নিজেকে ঘিরেই। কেউ হাসপাতালে থাকলেও খামতি রাখতে চান না শারীরচর্চায়। আর এক জনেরও সময় কাটে হাসপাতালে। তবে নিজে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য নয়, অন্যের সুস্থতা চেয়ে সাহায্যের হাত বাড়ান তিনি। বাকিদের দৈনিক দিন গুজরানের পথ থেকে কিছুটা ভিন্ন ভাবেই সময় কাটছে তাঁর। ওঁদের মিল মূলত তিনটি জায়গায়। প্রথমত, ওঁরা সকলেই অর্থ লগ্নি সংস্থার মালিক-কর্ণধার বা ‘সেকেন্ড-ইন কমান্ড’ (মেজো কর্তা বা কর্ত্রী)। দ্বিতীয়ত, তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে প্রতারণার অভিযোগ। তৃতীয়ত, চার জনেরই বর্তমান সাকিন জেল।

প্রেসিডেন্সি জেলের সেলে কারও সঙ্গে তেমন কথা বলেন না সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। প্রায় সর্বদাই আত্মমগ্ন। মন দিয়ে বই পড়েন। পত্রপত্রিকার পাতা ওল্টান। বাংলা, ইংরেজি খবরের কাগজের পাতায় নিয়মিত চোখ বোলান ২০১৩-র এপ্রিলের শেষে কাশ্মীরে ধরা পড়া সুদীপ্ত। সেলের বাইরে বিশেষ চলাফেরা করতে দেখা যায় না তাঁকে। বেশির ভাগ সময়েই সেলে একা একা চুপচাপ থাকেন। কেউ কিছু জানতে চাইলে জবাব দেন, তবে ‘টু দ্য পয়েন্ট’ অর্থাৎ যতটুকু না-দিলেই নয়। আদালতের ভিডিয়ো-সম্মেলনের জন্য অবশ্য বাইরে বেরোতেই হয় তাঁকে।

অলিপুরের ঠাকরে রোডের প্রেসিডেন্সি জেলেই আছেন রোজ় ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু। এখন তিনি রয়েছেন জেলের হাসপাতালে। কারা সূত্রের খবর, তাঁকেও অন্য বন্দিদের সঙ্গে খুব একটা কথা বলতে দেখা যায় না। নিজেকে ফিট রাখতে তিনি সকাল-বিকেল শারীরচর্চা করেন হাসপাতালের করিডরে।

আরও পড়ুন: ‘রাজ্য চালাচ্ছেন ভাইপো’, নাম না করে ফের অভিষেককে তোপ কৈলাসের

আরও পড়ুন: নীলবাড়ির লক্ষ্যে মমতা-মোকাবিলা, বঙ্গ বিজেপির বাছাই একাদশ

রোজ় ভ্যালির মালিকের মতোই হাসপাতালে দিন কাটে সারদা গোষ্ঠীর তছরুপ মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের। তবে তাঁকে প্রায় সময়েই দেখা যায় চিকিৎসাধীন রোগীদের শিয়রে। দমদম সেন্ট্রাল জেলের খবর, মহিলা ওয়ার্ডের অন্যতম ভরসা জোগানো নার্সের ভূমিকা নিয়েছেন দেবযানী! সাড়ে সাত বছরের বন্দিজীবনে ওই অভিযুক্ত বার বার প্রমাণ করেছেন, যে-কোনও কাজে দ্রুত নিজেকে দক্ষ করে তুলতে তিনি অভ্যস্ত। বন্দিদের সময়মতো ওষুধ দেওয়া, খাওয়াদাওয়া, পরিচর্যা— সব দিকেই নজর রাখেন সারদার তৎকালীন দ্বিতীয় কর্ত্রী। করোনা আবহেও দায়িত্ব পালনে বিন্দুমাত্র ইতস্তত করেন না তিনি। সারদার কর্মী-আধিকারিকদের কাছে ‘ম্যাডাম’ ছিলেন রীতিমতো রাশভারী কর্ত্রী। সেবিকা দেবযানীকে সেই দাপটের ধারপাশ দিয়ে যেতে দেখা যায় না বলেই বন্দিশালার সাক্ষ্য। হাসপাতালে তাঁর এক্তিয়ারভুক্ত যে-কোনও বিষয় ঠান্ডা মাথায় সামলে পদক্ষেপ করেন তিনি। কিছু জানতে চাইলে মন দিয়ে শুনে উত্তর দেন।

হাজার কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে ধৃত এমপিএস গ্রিন লগ্নি সংস্থার মালিক প্রমথনাথ মান্নারও বর্তমান ঠিকানা দমদম জেল। একটু ভিন্ন ধারায় কারাগারে নিজেকে ‘মানিয়ে নিয়েছেন’ তিনি। সেখানে ‘ভাল’ থাকার জন্য কখনও কখনও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করেন বলে কারা সূত্রের খবর। অন্য বন্দিদের সঙ্গে মিলেমিশে, কথা বলে, গল্প করে সময় কাটছে এমপিএস-কর্তার।

লৌহকপাটে চার লগ্নিকর্তা নিজের নিজের মতো দিন গুজরান করছেন। তবে তাঁদের মিল আরও একটি বিষয়ে। প্রতারণা মামলার তদন্ত ও বিচার কবে শেষ হয়, সে-দিকেই চোখ সুদীপ্ত, গৌতম, দেবযানী, প্রমথদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE