Advertisement
E-Paper

দুই জেলায় প্লাবনের বলি পাঁচ

ডিভিসি জল ছাড়ার পরিমাণ কমানোয় নতুন করে আর বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। তবে, আটকানো গেল না প্রাণহানি। হাওড়া ও হুগলি— দুই জেলায় নদীর স্রোতে তলিয়ে গিয়ে এবং সাপের ছোবলে মৃত্যু হল মোট পাঁচ জনের।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০১:২১
জলের তোড়ে খানাকুলে ভেঙে গিয়েছে বাড়ি। ছবি: মোহন দাস

জলের তোড়ে খানাকুলে ভেঙে গিয়েছে বাড়ি। ছবি: মোহন দাস

ডিভিসি জল ছাড়ার পরিমাণ কমানোয় নতুন করে আর বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। তবে, আটকানো গেল না প্রাণহানি। হাওড়া ও হুগলি— দুই জেলায় নদীর স্রোতে তলিয়ে গিয়ে এবং সাপের ছোবলে মৃত্যু হল মোট পাঁচ জনের।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খানাকুলের ঘোষপুর এলাকার নবম শ্রেণির ছাত্র আদর্শ কুমার (১৫) বাড়ির কাছে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুল চত্বরে বন্যার জল ঢোকা দেখতে গিয়েছিল। তখনই তার এক পায়ের জুতো খুলে যায়। জুতো ধরতে গিয়ে সে হুমড়ি খেয়ে কালভার্টে পড়ে যাওয়ায় নদীর জলের তোড়ে তলিয়ে যায়। রাতে তার দেহ মেলে। ওই সকালেই জলমগ্ন ঘর থেকে থেকে মালপত্র বের করতে গিয়ে দ্বারকেশ্বরের স্রোতে তলিয়ে যান আরামবাগ শহরের বাসিন্দা কালীপদ ওরফে কৃষ্ট দিগার (৬০)। তলিয়ে গিয়েছিলেন উদয়নারায়ণপুরের কুর্চি গ্রামের বাসিন্দা সৌম্যময় সরখেলও (৩৪)। বুধবার দু’জনেরই দেহ মিলল। কালীপদবাবুর দেহ মেলে বাড়ির কাছের একটি ঝোপে। সৌম্যময়বাবুর দেহ মেলে মজা দামোদরের পাড়ে একটি পাঁচিলের পাশ থেকে। তবে, মঙ্গলবার বিকেলে আরামবাগের দক্ষিণনারায়ণপুরে কানা মুণ্ডেশ্বরী খালে স্নান করতে নেমে তলিয়ে যাওয়া এক দিনমজুরের এখনও খোঁজ মেলেনি।

বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে দুর্গতেরা যখন নাজেহাল, তখন তাঁদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে সাপের উপদ্রব। বুধবার সকালেই সাপের ছোবল খেয়ে আরামবাগ হাসপাতালে ভর্তি হন চার জন। তাঁদের মধ্যে একটি শিশু-সহ দু’জন মারা যান। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের মধ্যে রয়েছে খানাকুলের গড়বেড়িয়ার দুষ্টু সিংহ (৫) এবং গুজরাতের নীতীশ মণ্ডল (৫০)। দু’জনকেই ঘুমের মধ্যে সাপে ছোবল মারে।

ত্রাণ শিবিরের পথে। উদয়নারায়ণপুরে ছবিটি তুলেছেন সুব্রত জানা।

তবে বুধবার আরামবাগ মহকুমায় নদীগুলিতে জল একটু কমেছে। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মুণ্ডেশ্বরী এবং দ্বারকেশ্বরে প্রাথমিক বিপদসীমার নীচে দিয়ে জল বইছে। দামোদরের জল চরম বিপদসীমা থেকে নেমে বিপদসীমা দিয়ে বইছে। প্রশাসন জানিয়েছে, বুধবার বিকেল পর্যন্ত আরামবাগ মহকুমায় ২২০টি বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে। ৪৮০টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত। ৪১টি সাঁকো ভেঙেছে। প্রায় মুছে গিয়েছে ১১০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা এবং ১১৮ কিলোমিটার মোরাম রাস্তা। গ‌োটা মহকুমায় ক্ষতিগ্রস্ত মোট ৬৮ হাজার ৩৯০ জন। পান্ডুয়া ব্লকে প্রায় দু’হাজার বিঘা কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে।

জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক অশোক ঘোষ বলেন, ‘‘আরামবাগ মহকুমায় মোট ২৩টি ত্রাণ শিবিরে ৩০৩২টি দুর্গত পরিবারকে রাখা হয়েছে। নতুন করে প্লাবনের সম্ভাবনা কম। বিভিন্ন জায়গায় জমা জলের পরিমাণও কমছে। তবে, চাঁপাডাঙা এলাকায় দ্বারকেশ্বর এবং দামোদরের জল এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। আরামবাগ এলাকার কিছু স্কুলে অস্থায়ী শিবির খোলা হয়েছে।’’

পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির খবর এসেছে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর থেকেও। এখনকার ৮টি পঞ্চায়েত এলাকা প্লাবিত হয়। ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, ১১টি ত্রাণ শিবিরে ৬২৬ জন গ্রামবাসীকে রাখা হয়েছে। এ দিন বিকেলে হাওড়া জেলা পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল উদয়নারায়ণপুরে আসে। জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সীতানাথ ঘোষ বলেন, ‘‘পানীয় জল এবং শিশুখাদ্যের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কানুপাট মনসুখা থেকে ডিহিভুরসুট পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ১৯টি জায়গায় ভেঙে গিয়েছে। কারণ মেরামতির কাজ ঠিক ভাবে হয়নি। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজাও। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, বাঁধ ভাঙার খবর তাঁর কাছে নেই।

দুই জেলার বহু চাষজমি এখনও জলের নীচে রয়েছে। বুধবার বলাগড়ে কৃষি দফতরের এক অ‌নুষ্ঠানে এসে কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু জানান, টানা ১০ দিন জমিতে জল থাকলে চাষের ক্ষতি হতে পারে। তবে, তেমন সম্ভাবনা নেই। চাষে ক্ষতি হলে চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy