E-Paper

বিস্ফোরণেও হুঁশ ফেরেনি, সাড়ে পাঁচ হাজার বেআইনি বাজির কারখানা রাজ্যে, মামলা পরিবেশ আদালতে

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানাচ্ছে, রাজ্যে বৈধ সবুজ বাজি তৈরির কারখানার সংখ্যা সাতটি। অর্থাৎ বাকি কারখানাগুলি যে অবৈধ, তা মেনে নিয়েছে প্রশাসন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৩০
firecracker.

২০১১ সাল থেকে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন বেআইনি বাজি কারখানায় অন্তত ২৬টি বিস্ফোরণের ঘটনায় কমপক্ষে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। —ফাইল চিত্র।

বেআইনি বাজি কারখানায় বিরামহীন বিস্ফোরণ ও জাতীয় পরিবেশ আদালতের একের পর এক সতর্কবার্তা— গত ১২ বছরে চলেছে ধারাবাহিক এই আকচা-আকচি। তার প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারকে সরাসরি আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন আফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চে মামলা করলেন।

অভিযোগ উঠেছে, পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা এবং তার পরবর্তী বিস্ফোরণের ঘটনার পরে গত ৫ অগস্ট নবান্নে মুখ্যসচিব রাজ্য আতসবাজি সমিতির সদস্য এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে যে দীর্ঘ বৈঠক করেন, তার বিবরণীতেই রয়েছে রাজ্যে প্রায় ৫৫৫৬টি
বেআইনি বাজি তৈরির কারখানা। সংখ্যাটা বেশিও হতে পারে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানাচ্ছে, রাজ্যে বৈধ সবুজ বাজি তৈরির কারখানার সংখ্যা সাতটি। অর্থাৎ বাকি কারখানাগুলি যে অবৈধ, তা মেনে নিয়েছে প্রশাসন। প্রশ্ন হল, এত দিন ধরে চলা এতগুলি কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন?

কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ন্যাশনাল কন্ট্রোলার অব এক্সপ্লোসিভ’ বিভাগের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার এক কর্তা বলেন, ‘‘এ রাজ্যে বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব। রাজ্য সরকারকে সতর্ক করলে কিংবা খোঁজ পেয়ে কোথাও অভিযান চালালে শাসক দলের তরফেই বাধা দেওয়া হয়। যুক্তি দেখানো হয়, রেল দুর্ঘটনার পরে কি ট্রেন চালানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তা হলে বাজি কারখানা বন্ধ করা হবে কেন!’’

বিশ্বজিৎ বলছেন, ‘‘এই যদি যুক্তি হয়, তা হলে আমাদের পরের বিস্ফোরণের জন্য অপেক্ষা ছাড়া আর কী বা করার আছে!’’

তবু লড়াই না ছাড়ার লক্ষ্যে পরিবেশ অ্যাকাডেমি নামে একটি অসরকারি সংস্থার পক্ষে মামলা দায়ের করে রাজ্যের প্রাক্তন দূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্তা বিশ্বজিৎ জানান, ২০১১ সাল থেকে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন বেআইনি বাজি কারখানায় অন্তত ২৬টি বিস্ফোরণের ঘটনায় কমপক্ষে ৮৩ জনের মৃত্যুর পরেও রাজ্য সরকারের কাছে নিছক আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি। তার পরিণতিতেই গত ২৭ অগস্ট দত্তপুকুরের ঘটনা।

বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘পরিবেশ আদালত বারবার সতর্ক করলেও রাজ্য সরকারের ফাঁকা আশ্বাস দেওয়া একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বার একটা বিহিত হওয়া প্রয়োজন।’’ প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তৎপরতায় রাজ্যে যে শব্দবাজি নিষিদ্ধ হয়েছিল, তাতে বিশ্বজিতেরও উদ্যোগ ছিল। পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, রাজ্যে পালাবদলের পরে সেই আইন যে ফের ঢিলেঢালা হয়ে পড়েছে গত ১২ বছরে হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা এমনকি কলকাতায় ক্রমান্বয়ে ঘটে চলা ঘটনা তারই প্রমাণ।

বিশিষ্ট বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ বা ‘এক্সপ্লোসিভ এক্সপার্ট’ মেজর তুহিন সেন বলেছেন, ‘‘গত মে মাসে এগরায় বাজি বিস্ফোরণে ১১ জনের প্রাণহানির ঘটনার পরে খোদ মুখ্যমন্ত্রী দুঃখপ্রকাশ করে পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া হাতে বেআইনি বাজির কারবার রুখতে বলেছিলেন। কিন্তু প্রশাসনের নড়েচড়ে বসার সময় হয়নি। তাই ওই ঘটনার পরেও বজবজ, বীরভূমের দুবরাজপুর, মালদহের ইংরেজবাজার কিংবা দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Death Duttapukur Blast

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy