বোলপুর আদালতে ধৃতরা। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
শান্তিনিকেতনের তালতোড় গ্রাম লাগোয়া একটি রিসর্টের পিছনের দিকে ফাঁকা এলাকায় বাগান ঘেরা একটি একতলা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছিল ওরা চার জন। এলাকায় বিশেষ মেলামেশা করত না। বলেছিল, রংয়ের কাজ করতে এখানে এসেছে। সেই চার জনকেই আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক-সহ পুলিশ গ্রেফতার করার পরে জানা গেল, তারা সকলেই বাংলাদেশি দুষ্কৃতী! পুলিশের দাবি, ধৃতদের কাছ থেকে একটি ৯ এমএম ও একটি ৭ এমএম পিস্তল, প্রায় পাঁচ কেজি বিস্ফোরক, স্প্লিন্টার-সহ নানা জিনিস পাওয়া গিয়েছে।
ধৃতেরা হল, রফিক ফকির ওরফে বাবু সরকার, মহম্মদ মুরাদ মুন্সি, মহম্মদ বেলা মিয়াঁ ওরফে দেলওয়ার বা দিলু এবং মহম্মদ বিল্লাল হোসেন। শেষ জনের বয়স ১৯, বাকিরা ত্রিশের আশেপাশে। ওই চার জনকে জেরা করে পুলিশ সৈয়দ আনোয়ার আলি এবং শেখ কাজল নামে বীরভূমের দুই যুবককেও গ্রেফতার করেছে। এদের যোগসাজশে ওই দুষ্কৃতীরা জেলায় এসে গা ঢাকা দিয়ে ছিল বলে দাবি পুলিশের। আনোয়ারের বাড়ি শান্তিনিকেতন থানার খোশমহম্মদপুরে। কাজল ওই থানারই মুলুকের বাসিন্দা। দু’জনেরই আদি বাড়ি নানুর থানার পাপুড়ি এলাকায়।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, বোলপুর মহকুমার তৃণমূলের এক প্রভাবশালী নেতাকে খুনের ‘সুপারি’ নিয়ে ওই বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা অবৈধ ভাবে এখানে এসেছে। সূত্রের খবর, ওই নেতার দাপটে বেশ কয়েক বছর ধরে আনোয়ার ও কাজলের পরিবারকে ঘরছাড়া হয়ে থাকতে হচ্ছিল বলেই তাঁকে খতম করার ছক কষা হয়। দুষ্কৃতীদের দিয়ে কাজ হাসিল করিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর মতলব ছিল। নেপথ্যে আরও কেউ কেউ থাকতে পারে বলে তদন্তকারীদের ধারণা। পুলিশেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, আনোয়ার ও কাজলের সঙ্গে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার পিছনে মেদিনীপুর জেলে বন্দি লাভপুরের এক দুষ্কৃতীর হাত রয়েছে।
খুনের মতলব ছাড়া আরও কোনও বড় হামলার ছক ছিল কি না ধৃতদের, সেটাও পুলিশ খতিয়ে দেখছে। বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা বাংলাদেশের কোথা থেকে কী উদ্দেশ্যে এসেছে, সেটা তদন্ত সাপেক্ষ। সংবাদমাধ্যমকে সব কথা বলা যাবে না। তবে জেলা পুলিশের পাশাপাশি এসটিএফ-এর একটি দলও ঘটনার তদন্ত করছে।’’ ইতিমধ্যেই ওই দল জেলায় এসে তদন্ত শুরু করেছে বলে সূত্রের খবর। সোমবার ধৃতদের বোলপুর আদালতে তুলে ১৪ দিন নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে। এপিপি ফিরোজ কুমোর পাল জানান, ধৃতদের বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্ট এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরক রাখা-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
ধৃতদের সঙ্গে জঙ্গি-যোগ রয়েছে কি না, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। কারণ বীরভূমের সঙ্গে এর আগেও খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডে বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর যোগ প্রকাশ্যে এসেছে। তাই এসটিএফ-ও তদন্তে নেমেছে। মুর্শিদাবাদ থেকে আল কায়দা যোগে একাধিক যুবকের গ্রেফতারির পরেই আশপাশের জেলাগুলিতে সতর্কবার্তা পৌঁছেছিল। পুলিশ সুত্রে খবর, তালতোড় গ্রামের ওই বাড়িতে কয়েক জন যুবকের গতিবিধি সন্দেহজনক— এমন খবর পৌঁছয় জেলা পুলিশের এক শীর্ষকর্তার কানে। খোঁজ নেওয়ার পরেই শুরু হয় অপারেশন। জেলার দুই অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে রবিবার ওই অপারেশনে ধরা পড়ে যায় ৪ বাংলাদেশি। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রং মিস্ত্রির কাজে যুক্ত এই পরিচয়েই ৪ সন্দেহভাজনকে এখানে আনিয়েছিল আনোয়ার, কাজলেরা। যারা নিজেরাও রাজমিস্ত্রি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy