Advertisement
E-Paper

শিল্পীর স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন ৭০ হাজারের

ওঁরা সকলেই চান শিল্পীর সম্মান। সম্মান বলতে সরকারি স্বীকৃতি। সংখ্যাটা ৭০ হাজার! বুধবার প্রশাসনিক বৈঠকে ‘লোক প্রসার প্রকল্প’-এ পুরুলিয়া জেলায় আবেদনকারী শিল্পীর এই সংখ্যা শুনে তাজ্জব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৬ ০৪:২২

ওঁরা সকলেই চান শিল্পীর সম্মান। সম্মান বলতে সরকারি স্বীকৃতি। সংখ্যাটা ৭০ হাজার! বুধবার প্রশাসনিক বৈঠকে ‘লোক প্রসার প্রকল্প’-এ পুরুলিয়া জেলায় আবেদনকারী শিল্পীর এই সংখ্যা শুনে তাজ্জব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘কী বলছেন! রাজ্যে ৫৮ হাজার লোককে ওই ভাতা দেয় সরকার! এখানে আবেদনকারী এত বেশি কেন?’’

রাজ্যে সরকারি ভাবে স্বীকৃত লোকশিল্পীরা প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা পান। জেলা স্তরে সরকারি অনুষ্ঠান (মাসে সর্বোচ্চ চারটি) হলে তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিলে এক হাজার টাকা করে ‘সাম্মানিক’ মেলে। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারের কাজ করলেও সরকার টাকা দেয়।

প্রশাসন সূত্রে খবর, এ দিন মমতা পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে ওই প্রকল্প সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে আবেদনকারীর সংখ্যা শোনেন। সঙ্গে সঙ্গে জেলার আধিকারিকদের কাছে বিশদে কারণ জানতে চান। এর পরে তিনি তথ্য-সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে দ্রুত বিষয়টি দেখতে নির্দেশ দেন। প্রশাসনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, পুরুলিয়ার মতো আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং বীরভূমেও ওই প্রকল্পে আবেদনকারীর সংখ্যা অনেক।

২০১৩ সালে লোক প্রসার প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। ২০১৪-র অগস্টে প্রকল্পটি চালু হয়। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের কর্তারা বলছেন, প্রতিটি জেলাতেই সরকারি স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য হাজার-হাজার শিল্পীর আবেদন জমা পড়ে। প্রতি জেলায় জেলাশাসককে মাথায় রেখে একটি করে বাছাই কমিটি গড়া হয়েছে। শিল্পী হিসেবে আবেদনকারীর দক্ষতা পরীক্ষা করেই সরকারের খাতায় তাঁর নাম ওঠে।

সরকারি হিসেবে এই মুহূর্তে পুরুলিয়াতে ৪,৯৭০ জন শিল্পী ভাতা পাচ্ছেন। বীরভূম ও বর্ধমানেও প্রায় পাঁচ হাজার করে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন। বাকিরা বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন। তা হলে পুরুলিয়ায় এ বার আবেদনকারীর সংখ্যা ৭০ হাজারে পৌঁছল কেন?

জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক মানসী মণ্ডল বলেন, ‘‘কত আবেদন জমা পড়েছে, রাজ্যকে জানিয়েছি। আর কিছু বলব না।’’ তবে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ২০১৪-র ডিসেম্বরে জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের এক দিনের শিবিরে প্রায় ১৫ হাজার আবেদন জমা পড়েছিল। গত ২ ডিসেম্বর বান্দোয়ানে প্রশাসনিক সভা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জেলায় কত লোকশিল্পী রয়েছেন, কত লোকশিল্পী আবেদন করেছেন, কত জন আবেদন করেও স্বীকৃতি পাননি— বিশদে জানতে চান দফতরের আধিকারিকদের কাছে।

কাজের গতিতে অসন্তুষ্ট মমতা সভা-মঞ্চ থেকেই লোকশিল্পীদের আবেদন জমা দিতে বলেন। সভা শেষে প্রায় ১,৩০০ আবেদন জমা পড়ে। তার পর থেকেই জেলার সমস্ত এলাকার শিল্পীদের ভিড় জমতে থাকে পুরুলিয়া সদরে জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে। অফিস খোলার আগে থেকেই লম্বা লাইন পড়তে দেখা যায়। তখন ১০ দিন অফিসের বাইরে শিবির করে আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয়। আবেদনপত্র জমা পড়ে প্রায় ৬০ হাজার। আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছেন ঝুমুর, বাউল, ছৌ-নাচ, নাটুয়া, শবর-নৃত্য, ভাদু, টুসু, নাচনী এবং সাঁওতালি নৃত্যশিল্পীরা।

প্রশাসনের এক কর্তার ব্যাখ্যা, পুরুলিয়ায় লোকশিল্পের শাখা বেশি। চাষ বা শিল্পে এই জেলা তেমনটা এগোয়নি। সেখানে ভরা সভায় ভাতা পেতে আবেদন করতে বলা হলে, লোকে করবেই। ফলে, আবেদনকারীর সংখ্যা ৭০ হাজারে পৌঁছনোটা অস্বাভাবিক নয়। তবে প্রশাসনেরই আর এক কর্তার দাবি, পুরুলিয়া জেলায় ছৌ নাচের স্বীকৃত দলের সংখ্যা একশোর কম। ঝুমুর, নাটুয়া শিল্পীদের সংখ্যা এখন হাতে গোনা। সেখানে ৭০ হাজার আবেদন জমা পড়াটা তাঁদের কাছে ‘সন্দেহজনক’ ঠেকছে।

recognition artists
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy