E-Paper

চালকের ৭৯১টি শূন্যপদ নিয়ে ধুঁকছে রাজ্য দমকল

দমকল দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের ১৬৭টি দমকলকেন্দ্রে ১৫০০ জন ‘ফায়ার ইঞ্জিন অপারেটর কাম ড্রাইভার’ (এফ ই ও ডি) থাকার কথা। যাঁরা গাড়ি চালান। কিন্তু আদতে আছেন মাত্র ৭০৯ জন।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:১৯
রাজ্য দমকল দফতরের সঙ্গিন দশা সামনে আসছে বলে অভিযোগ!

রাজ্য দমকল দফতরের সঙ্গিন দশা সামনে আসছে বলে অভিযোগ! —প্রতীকী চিত্র।

মাস কয়েক আগের ঘটনা। দার্জিলিংয়ে গলগল করে আগুনে পুড়ছে বিশাল অফিসবাড়ি। স্থানীয় ফায়ার স্টেশনে দমকলের গাড়ি থাকলেও সেই গাড়ি চালানোর ‘চালক’ নেই। যিনি ছিলেন, তাঁর ছুটি হওয়ায় বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। আগুন নেভাতে বাধ্য হয়ে সমতলের শিলিগুড়ি ফায়ার স্টেশন থেকে গাড়ি যখন দার্জিলিংয়ে পৌছঁল, তখন পুরো বাড়ি ভস্মীভূত। রাজ্য দমকল দফতরের সঙ্গিন দশাটা এমন ঘটনায় সামনে আসছে বলে অভিযোগ!

দমকল দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের ১৬৭টি দমকলকেন্দ্রে ১৫০০ জন ‘ফায়ার ইঞ্জিন অপারেটর কাম ড্রাইভার’ (এফ ই ও ডি) থাকার কথা। যাঁরা গাড়ি চালান। কিন্তু আদতে আছেন মাত্র ৭০৯ জন। অর্থাৎ, ৭৯১টি পদ শূন্য!

রাজ্যে পালাবদলের পরে নিত্যনতুন দমকল কেন্দ্রের উদ্বোধন হচ্ছে। দমকল সূত্রের খবর, তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগে ১০২টি দমকলকেন্দ্র ছিল। এখন সেই সংখ্যা ১৬৭। রয়েছে বাড়তি দশটি অস্থায়ী দমকলকেন্দ্রও। আসছে হাজার হাজার টাকার আধুনিক প্রযুক্তির গাড়ি। কিন্তু সে সব চালানোর লোক কোথায়?

দার্জিলিংয়ের ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়ে দমকল দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘দার্জিলিংয়ের ঘটনা সত্যি। চালকের অভাবে নানা ভাবে ভুগতে হচ্ছে দমকলকে। পাহাড় এলাকার কাছাকাছি দমকলকেন্দ্র খুব কম। তা ছাড়া সমতলে যে গাড়ি ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছবে, পাহাড়ে সেই গাড়ি পৌঁছতে স্বভাবতই বেশি সময় লাগবে। দার্জিলিংয়ের ঘটনা থেকে বড় শিক্ষা পেয়েছি আমরা।’’ চালকের অভাবে রাজ্যের সমতল এলাকাতেও সমস্যা কি হচ্ছে? ওই আধিকারিকের পর্যবেক্ষণ, ‘‘সমস্যা হচ্ছে তো বটেই। ওভারটাইম দিয়ে কাজ সারতে হচ্ছে। বছরখানেক আগে কলকাতায় কোনও দমকল কেন্দ্রের অবস্থা এমনও হয়েছে যে চালক কাজ শেষে বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নিচ্ছেন। কিন্তু আগুনের খবর আসায় ওই চালককেই ফের গাড়ি চালিয়ে আগুন নেভাতে যেতে হয়েছে। কারণ, অন্য চালক নেই।’’

দমকলের সদর দফতরে কর্মরত এক চালকের আবার ক্ষোভ, ‘‘বাড়তি ডিউটি করতে হচ্ছে বেশির ভাগ দিন। অথচ ওভারটাইমের টাকা পাই না। কোনও কোনও দিন বাড়িই যেতে পারি না। ব্যারাকে রাত কাটিয়ে পরের দিন ডিউটি ধরতে হয়।’’

চালকের সমস্যার কথা স্বীকার করে দমকলের ডিজি রণবীর কুমার বলেন, ‘‘চালকের সমস্যা রয়েছে ঠিকই। তবে কঠিন সমস্যা নেই। কারণ যাঁরা ইতিমধ্যে পদোন্নতি পেয়েছেন, সেই সব আধিকারিকেরা চালকের অভাব মেটাতে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে যান।’’ শূন্যপদে নিয়োগ প্রসঙ্গে ডিজি বলেন, ‘‘ফায়ার ইঞ্জিন অপারেটর কাম ড্রাইভার পদে নিয়োগের ব্যাপারে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে প্রক্রিয়া চলছে।’’

অভাব কেবল চালকেরই নয়, সারা রাজ্যে দমকলের ২৩টি ডিভিশনে ৩৪ জন ডিভিশনাল অফিসার (ডি ও) থাকার কথা। কিন্তু আছেন ১৪ জন। এক এক জন ডিভিশনাল অফিসারকে একাধিক জেলার কাজ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। দমকলের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘পুরো দমকল দফতর লোকবলের অভাবে ধুঁকছে। কেবল নিত্যনতুন ফায়ার স্টেশন, গাড়ি উদ্বোধন হচ্ছে। কিন্তু কাজ চালানোর লোক কোথায়?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Fire Brigade Vacancy

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy