পরিষ্কারের লোক ভেবে অনেকেই ভুল করেন। কিন্তু বিশ্বাস করলেই নিমেষের মধ্যে খোয়াতে হতে পারে আপনার সঙ্গে থাকা নগদ টাকা। স্কুটার কিংবা বাইকের ডিকি খুলে টাকা সরানোতে এরা ‘শিল্পী’। সম্প্রতি নদিয়ার শান্তিপুরে একটি চুরির ঘটনার তদন্তে নেমে সন্ধান মিলেছে নতুন করে সক্রিয় হওয়া ‘বিহারী গ্যাং’-এর। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে এক জন। চক্রের বাকি সদস্যদের খোঁজে তৎপর পুলিশ।
অবসরপ্রাপ্ত পুরকর্মীর স্কুটারের ডিকি ভেঙে দু’লক্ষ টাকা চুরির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বিহারের কাটিহার জেলার বাসিন্দা গণেশ যাদবকে। ধৃত ব্যক্তি পেশায় ভ্যানচালক হলেও বিগত বেশ কিছু দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহরে ‘বিহারী গ্যাং’-এর হয়ে কাজ করছিলেন তিনি। হাসনাবাদ, বারুইপুর ও মালদহের একাধিক জায়গায় ডিকি ভেঙে টাকা চুরির ঘটনায় সন্দেহভাজনের তালিকায় ছিলেন অভিযুক্ত। তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে উদ্বেগজনক তথ্য এসেছে পুলিশের হাতে। জানা গিয়েছে, জেলা তথা রাজ্য জুড়ে নতুন করে সক্রিয় হয়েছে ‘বিহারি গ্যাং’।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শান্তিপুর পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী তাঁর প্রভিডেন্ট ফান্ডের দুই লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে তা রেখেছিলেন নিজের স্কুটারের সিটের নিচে। মাত্র দশ মিনিট। তার মধ্যেই সবার চোখ এড়িয়ে ‘সুনিপুণ’ভাবে বিহারি গ্যাং সাফ করে দিয়েছিল সেই টাকা। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে বিহারের কাঠিয়ার জেলার রাউতাড়া এলাকার বাসিন্দা গণেশের নাম। অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন:
পুলিশ জানাচ্ছে, এই চক্র বিহারের কাটিহার, মুঙ্গের, জামুই এলাকার দুষ্কৃতীদের নিয়ে গঠিত। পশ্চিমবঙ্গের রেল বস্তি এলাকার ছোট ছোট ঝুপড়ি ভাড়া নিয়ে এরা আস্তানা গড়ে। এদের সাহায্য করে বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে আসা পূর্বপরিচিতেরা। পরবর্তী সময়ে তারা তিন থেকে চার জনের দলে বিভক্ত হয়ে মিশে যায় শহরের লোকজনের ভিড়ে। গাড়ির মালিক ব্যাঙ্কে ঢুকলে এক জন ‘গার্ড’ সেজে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। আর এক জন কৌশলে ডিকি খুলে টাকা সরিয়ে নেয়। চুরি শেষ হলে কেউ ট্রেনে, কেউ বাইকে বা লোকাল বাসে করে পালিয়ে যায়। এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, এরা এতটাই ‘পেশাদার’ যে কোনও রকম শব্দ না করেই যে কোনও গাড়ির ডিকি খুলতে পারে। মূলত জেলার ছোট শহরগুলিই তাদের নিরাপদ টার্গেট। কারণ বড় শহরের তুলনায় এখানে সিসিটিভি বা পুলিশি টহল কম। গত বছর নদিয়া-মুর্শিদাবাদে অন্তত বারোটি চুরির ঘটনায় ‘বিহারি গ্যাং’ জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।