Advertisement
E-Paper

‘আমার পরিণতির জন্য কমিশন দায়ী’, নোট লিখে কৃষ্ণনগরে আত্মঘাতী বিএলও! আর কত প্রাণ যাবে? প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর

সুইসাইড নোটে নিজের মৃত্যুর জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করে ওই বিএলও লিখেছেন, “আমার এই পরিণতির জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী। আমি খুবই সাধারণ মানুষ। কিন্তু এই অমানুষিক কাজের চাপ আমি নিতে পারছি না।”

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৫ ১২:৩৭
মৃত বিএলও রিঙ্কু তরফদার।

মৃত বিএলও রিঙ্কু তরফদার। —নিজস্ব চিত্র।

এ বার নদিয়ার কৃষ্ণনগরে আত্মঘাতী হলেন এক বুথ স্তরের আধিকারিক (বিএলও)। বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) সংক্রান্ত কাজের চাপের কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার। মৃত ওই বিএলও-র নাম রিঙ্কু তরফদার (৫১)। তাঁর দেহের পাশ থেকে একটি সুইসাইড নোট-ও উদ্ধার হয়েছে। সেখানে নিজের মৃত্যুর জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেছেন তিনি। এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, এসআইআর-এর জন্য কত প্রাণ যাবে?

নদিয়ার চাপড়া থানার বাঙালঝি এলাকার স্বামী বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের পার্শ্বশিক্ষক ছিলেন রিঙ্কু। চাপড়ার ২০১ নম্বর বুথে বিএলও-র দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। কৃষ্ণনগরের ষষ্ঠীতলায় ভাড়াবাড়িতে থাকতেন তিনি। শনিবার সকালে ওই বাড়ি থেকেই তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। দেহের পাশেই পড়েছিল সুইসাইড নোটটি।

সুইসাইড নোটে নিজের মৃত্যুর জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করে ওই বিএলও লিখেছেন, “আমার এই পরিণতির জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী। আমি কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না। খুবই সাধারণ মানুষ। কিন্তু এই অমানুষিক কাজের চাপ আমি নিতে পারছি না। আমি একজন পার্শ্বশিক্ষিকা। বেতন পরিশ্রমের তুলনায় খুবই কম। কিন্তু এরা আমাকে ছাড় দিল না।” তাঁর মৃত্যুর জন্য পরিবারের কেউ দায়ী নয় বলেও জানান রিঙ্কু। তিনি লেখেন, “আমার স্বামী, ছেলে, মেয়ে কেউ দায়ী নয়। ওরা আমাকে যথেষ্ট যত্নেই রাখে।” তিনি বাঁচতে চান জানিয়ে রিঙ্কু এ-ও লিখেছেন যে, “আমি বাঁচতে চাই। আমার সংসারে কোনও অভাব নেই।”

কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়ে সুইসাইড নোটে রিঙ্কু লিখেছেন, “অফলাইনের ৯৫ শতাংশ কাজ সেরে ফেলেছি, কিন্তু অনলাইনের কাজ আমি কিছুই জানি না। সুপারভাইজ়রকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।” তার পরই লেখা রয়েছে, “বিএলও কাজ তুলতে না-পারলে প্রশাসনিক চাপ এলে তা আমার পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়।” মৃতার স্বামী অসীম তরফদার বলেন, “ফর্ম বিলি সঠিক সময়ে করেছে। কিন্তু ডিজিটাল আপলোডের ব্যাপারে কিছু জানত না। বার বার জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। এটা আত্মহত্যা নয়, কমিশনের দ্বারা হত্যা।”

এই ঘটনায় এ বার নদিয়ার জেলাশাসক তথা ডিইও-র কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজকুমার আগরওয়াল। কী কারণে ওই বিএলও-র মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

দেহের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোট।

দেহের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোট। ছবি: সংগৃহীত।

ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় কমিশন এবং বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনের জটিল ডিজিটাল প্রক্রিয়া, অবাস্তব সময়সীমা, শাস্তির আতঙ্ক ও রাতভর তদারকির নামে যে মানসিক নির্যাতন কর্মীদের ওপর চাপানো হচ্ছে— তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। অমানবিক চাপে যখন বিএলও-দের প্রাণ যাচ্ছে, তখন বিজেপি শুধু রাজনৈতিক ফয়দা লুটতে ব্যস্ত। এটাই বিজেপির নিষ্ঠুর, অমানবিক ও দায়িত্বহীন রাজনীতির প্রকৃত চেহারা।”

দিনকয়েক আগেই পূর্ব বর্ধমান জেলায় ব্রেন স্ট্রোক হয়ে মৃত্যু হয় বিএলও নমিতা হাঁসদার। মেমারির চক বলরামপুরে ২৭৮ নম্বর বুথের বিএলও ছিলেন তিনি। অসুস্থ নমিতাকে কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। তাঁর পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছিল, অত্যধিক কাজের চাপেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। বুধবার ভোরে জলপাইগুড়ির মাল ব্লকের নিউ গ্লেনকো চা বাগান এলাকায় শান্তিমুনি ওঁরাও নামের এক বিএলও-র ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। সে ক্ষেত্রেও অভিযোগ ওঠে যে, কাজের চাপে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই তরুণী। অন্য দিকে, এসআইআর-এর কাজ করতে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে কলকাতা মেডক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন হুগলির কোন্নগরের এক বিএলও। এই আবহে নির্বাচন কমিশনকে দুষেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর অভিযোগ, কমিশনের ‘অপরিকল্পিত কাজের’ জন্য একের পর এক মৃত্যু ঘটছে বাংলায়। তিনি এসআইআরের কাজ বন্ধ রাখার জন্য কমিশনকে আবেদন করেছেন।

BLO Krishnanagar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy