Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

এমএ করেও ঘর মোছার চাকরি, আত্মঘাতী যুবক

দুই ধরনের সমীক্ষার যোগাযোগ যে গাঢ়, তা আগেও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে কিছু মৃত্যু। মঙ্গলবার গভীর রাতে সোনারপুরে ঘটে যাওয়া একটি দুর্ঘটনায় ফের সামনে এল, কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি।

অতনু মিস্ত্রি

অতনু মিস্ত্রি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৭ ০২:৩৬
Share: Save:

ইংরেজিতে এমএ পাশ। বয়স ৩০ ছুঁয়েছে। হাতে শুধুই বেসরকারি সংস্থায় ঘর মোছার চাকরি।

বছর খানেক আগেই এক সমীক্ষা রিপোর্ট দেখিয়েছে, প্রতি বছর এ দেশে অন্তত ৪৫ হাজার আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বেকারত্বের কারণে। পশ্চিমবঙ্গে যে বেকারত্বের জেরে বেড়েই চলেছে আত্মহত্যার ঘটনা, তা-ও বেরিয়ে আসছে বিভিন্ন সমীক্ষায়। এই দুই ধরনের সমীক্ষার যোগাযোগ যে গাঢ়, তা আগেও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে কিছু মৃত্যু। মঙ্গলবার গভীর রাতে সোনারপুরে ঘটে যাওয়া একটি দুর্ঘটনায় ফের সামনে এল, কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি।

সোনারপুর থানার দক্ষিণ-পূর্ব পাড়ায় ওই রাতে মৃত্যু হয় অতনু মিস্ত্রি (৩০) নামে এক যুবকের। তদন্তে নেমে পুলিশের ধারণা, উচ্চ শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন চাকরি না পাওয়ায় অবসাদের জেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন ওই যুবক। পুলিশ জেনেছে, সম্প্রতি প্রাথমিক ও হাইস্কুলের চাকরির লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন অতনু। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষায় আটকে যান। তার পর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন মৃতের বাবা চন্দ্রকান্তবাবু।

কী হয়েছিল মঙ্গলবার? চন্দ্রকান্তবাবুর কথায়, ‘‘মঙ্গলবার ছেলে আমাকে এসে বলল, ‘বাবা আমি ইংরেজিতে এমএ। বিএডও করেছি। কিন্তু বেসরকারি সংস্থায় ঘর মোছার কাজ পেয়েছি। ওরা বলছে, ‘হাউস কিপিং’। আমি কি ঘর মোছার জন্যই এত পড়াশোনা করেছি?’ আমি ছেলেকে বোঝানোর চেষ্টা করি। তার পরে ঘরে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল ও।’’ অতনুর মা ঊষাদেবী বলেন, ‘‘সন্ধ্যার পরেই ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল অতনু। রাতে ধাক্কা দেওয়ার পরেও খুলছিল না। দরজা ভেঙে দেখি, গলায় শাড়ির ফাঁস দিয়ে ঝুলছে।’’

আরও পড়ুন:মোদী-মুক্ত রাখা হলো ডিএম-দের

চন্দ্রকান্তবাবু আরও বলেন, ‘‘ও আমাকে বলত, পরীক্ষার পরে টাকা দিলে চাকরি পাওয়া যাবে। আমি তাতেও রাজি হয়েছিলাম। ওর অনেক বন্ধু চাকরি পেয়ে পরে মোটরসাইকেল কিনে ফেলেছিল। আমার কাছে নানা সময়ে চাকরি না পাওয়ার জন্য কান্নাকাটিও করত। আমি বোঝাতাম, মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।’’ কিন্তু তা আর পেরে ওঠেননি অতনু।

প্রসঙ্গত, গত বছর রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশনে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয় নীলাদ্রি দত্ত নামে এক ইঞ্জিনিয়ারের। পরে তাঁর বাবা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, দীর্ঘ দিন চেষ্টা করেও উপযুক্ত চাকরি না পেয়ে অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। কয়েক মাস আগে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ডোমের চাকরির জন্য জমা পড়ে ৩৫৩টি আবেদন। যার মধ্যে কিছু চিঠি দেখে চমকে উঠেছিলেন কর্তারা। আবেদনকারীদের মধ্যে ছিলেন এক গবেষক, তিন জন মাস্টার্স ডিগ্রিধারী এবং সাত জন বিএ পড়ুয়া। তাঁদের পছন্দের তালিকা থেকে বাদও দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত শিক্ষিত হওয়ার কারণে। সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরির জন্যে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ জেলাতেও জমা পড়েছে এমএ পাশদের আবেদন। এই সব ঘটনা ঘিরে রাজ্য জুড়ে হইচইও কম হয় না। কিন্তু আদতে পরিস্থিতি যে রয়েছে সে তিমিরেই, অতনুর মৃত্যু ফের তা-ই দেখাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE