Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

উত্তরপাড়ার বিয়েতে অতিথি তালিকায় প্রধান আকর্ষণ কাশ্মীরি শালওয়ালা

শুধু ব্যবসার জন্য এক দিন দরজার কড়া নেড়েছিলেন বছর কুড়ির আফাক শাহ। তাঁর কাপড়ের গাঁটরি থেকে বেরিয়েছিল শাল, কম্বল।

এ মহাসংগ্রাম গণতান্ত্রিক ভাবেই শেষ হোক, অগণতান্ত্রিকতা যেন স্পর্শ করতে না পারে, রইল এই প্রার্থনা। ফাইল চিত্র।

এ মহাসংগ্রাম গণতান্ত্রিক ভাবেই শেষ হোক, অগণতান্ত্রিকতা যেন স্পর্শ করতে না পারে, রইল এই প্রার্থনা। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯ ০২:৩৪
Share: Save:

শুধু ব্যবসার জন্য এক দিন দরজার কড়া নেড়েছিলেন বছর কুড়ির আফাক শাহ। তাঁর কাপড়ের গাঁটরি থেকে বেরিয়েছিল শাল, কম্বল। ন’বছর আগের সে দিনের কথা আজও মনে আছে হিন্দমোটরের ডালিয়া অধিকারীর। তার পর এক দিন কাশ্মীরি আফাক হয়ে ওঠেন বাঙালি পরিবারটির কাছের মানুষ। তাই মেয়ের বিয়ের ঘরোয়া অনুষ্ঠানেও তাঁকে ভুলতে পারেননি ডালিয়া।

রবিবার ডালিয়ার মেয়ে মিমির বিয়ের রেজিস্ট্রেশনে সারা দিন কাটিয়েছেন আফাক, তাঁর স্ত্রী আসিয়া এবং তাঁদের দেড় বছরের ছেলে আদি। ‘বোনে’র জন্য এনেছেন তাঁর পছন্দের সাদা-কালো সিল্কের শাড়ি৷ ‘‘বহেন হি তো হ্যায়,’’— চটজলদি মুখে দু’টো সন্দেশ গুঁজে হাসেন আফাক।

২০১৫ সালে ডালিয়া আর মিমি কাশ্মীর গিয়েছিলেন। ছিলেন আফাকের বাড়িতেই৷ সেই স্মৃতি মিমির আজও টাটকা, ‘‘শ্রীনগরে ওঁদের বাড়িটা কী সুন্দর! বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে তিনতলা কাঠের বাড়ি৷ ওঁদের বাড়ির সকলের সঙ্গে কয়েকটা দিন কী ভাল কেটেছিল!’’ মিমির বাবা শঙ্কর অধিকারীও ছিলেন নিশ্চিন্ত, ‘‘স্ত্রী-মেয়েকে ওখানে একলা যেতে দিয়েছিলাম শুধু আফাকের ভরসায়।’’

গত দশ বছর উত্তরপাড়া, হিন্দমোটর, কোন্নগরে ব্যবসা করতে করতে আফাক এখন প্রায় বাঙালি! ফর্সা ত্বক রোদে পুড়ে বাদামি। বাংলা ভাষাও অনেকটাই পরিষ্কার। আসিয়া জানান, এখানে এক বাঙালি-বাড়িতেই ভাড়া থাকেন তাঁরা৷ বাড়িওয়ালা ‘নানা-নানি’র কাছে সারাদিন থেকে বাংলা ভাষাটাই বলতে শিখেছে আদি। এ বার তাকে কাশ্মীর নিয়ে যাবেন আসিয়া-আফাক। সামনের বছর সেখানকার স্কুলে ভর্তি হবে আদি।

আফাক অবশ্য ফিরে আসবেন উত্তরপাড়ায়৷ এখানেই তাঁর রুটি-রুজি৷ অতিথি কাশ্মীরের শাল বিক্রেতা

পুলওয়ামা-কাণ্ডের পরে আফাকের মতো কাশ্মীরি ‘শালওয়ালা’দের উপর নেমেছে আক্রমণ। আফাক মনে করেন, ‘‘ও সব করেছে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ৷ সকলে এ রকম নন। আমার সঙ্গেও এমন ঘটেছে হিন্দমোটরেই।’’

সেনা কনভয়ে জঙ্গি হামলার পর একদিন আফাক গিয়েছিলেন এক বাঙালি খদ্দেরের কাছ থেকে প্রায় হাজার দশেক টাকা পাওনা আনতে। আফাক বলেন, "ওই ভদ্রলোক আমাকে টাকা দিতে চাইলেন না। কারণ, আমি নাকি পাকিস্তানি! অনেক গালাগালিও দেন।’’ সে দিনের বচসায় অবশ্য আফাকের পাশে দাঁড়ান বাঙালিরাই। পাড়ার লোকজন এসে আফাককে থানায় যাওয়ার

পরামর্শ দেন। আফাক বলেন, ‘‘থানায় যাওয়ার সময়ই ওই ভদ্রলোকের স্ত্রী ফোন করে বলেন, তুমি তো আমার ভাই। তার মানে যে কটূক্তি তোমাকে করা হয়েছে, তা আসলে আমাকে করা হয়েছে। ক্ষমা করো। তোমার টাকা নিয়ে যাও।’’

দিদির কথা ফেলতে পারেননি আফাক। তিনি বলেন, ‘‘আমার বোন কাশ্মীরে পড়াশোনা করে। আর এখানেও মিমির মতো বোনেরা রয়েছে। ওঁদের জন্য সব করতে পারি।’’ যে দিন মিমির বিয়ের অনুষ্ঠান হবে, সে দিনও তিনি আসবেন কথা দিয়ে গিয়েছেন আফাক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage Registration Kashmiri Shawl Seller
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE