Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Saraswati Puja 2023

নিজের স্কুলের পরে ছেলের স্কুলেও বাণী-বন্দনায় পুরোহিত জয়া

প্রথা ভাঙা বছর চৌত্রিশের মহিলা পুরোহিতের নাম জয়া চক্রবর্তী। তিনি জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া বিবেকানন্দ হাই স্কুলের শিক্ষিকা। পুরোহিত বংশেই জন্ম জয়ার।

জয়া চক্রবর্তী।

জয়া চক্রবর্তী।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫৩
Share: Save:

“মা, তোমাকে আমাদের স্কুলের সরস্বতী পুজো করতে হবে,” দিন কয়েক আগে, স্কুল থেকে ফিরে ছেলে বলেছিল মাকে। মা হাই স্কুলের শিক্ষিকা। কয়েক বছর আগে, নিজের স্কুলে সরস্বতী পুজো করে আলাদা পরিচিতি পেয়েছেন। তাঁর ছেলে পড়ে জলপাইগুড়ি শহরের শতাব্দীপ্রাচীন প্রথম সারির ফণীন্দ্রদেব স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে। মা ভেবেছিলেন, এ বুঝি ছেলের আবদার। কিন্তু তার পরেই ছেলের স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাঁকে জানান, এ বছর সরস্বতী পুজো করার জন্য মহিলা পুরোহিতকে চাইছে স্কুল।

প্রথা ভাঙা বছর চৌত্রিশের মহিলা পুরোহিতের নাম জয়া চক্রবর্তী। তিনি জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া বিবেকানন্দ হাই স্কুলের শিক্ষিকা। পুরোহিত বংশেই জন্ম জয়ার। ছোটবেলায় ঠাকুরদার সঙ্গে পুজো মণ্ডপে যেতেন। জয়ার স্বামীও পুরোহিত। ২০১০ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হওয়ার পরে, স্নাতকোত্তর এবং বিএড করেছেন জয়া।

২০১৯ সালে সরস্বতী পুজোর আগে, জলপাইগুড়ির বিবেকানন্দ হাই স্কুলে হয় এক ‘বিভ্রাট’। যে পুরোহিত প্রতিবছর পুজো করতেন, তাঁর সময়ের সঙ্গে স্কুলের সময় মিলছিল না। তখনই স্কুলের কয়েক জন শিক্ষিকা জয়াকে অনুরোধ করেন পুজো করতে। জয়া রাজি হন। পুরোহিতের আসনে বসে তিনি প্রশ্ন তুলে দেন, কেন স্কুলের পুজো মহিলারা করতে পারবেন না?

সেই স্কুলে ছেলেমেয়ে একসঙ্গে পড়ে। তবে ফণীন্দ্রদেব প্রাথমিকে শুধুই ছাত্রেরা পড়ে। সেখানে পুজো করার জন্য পুরুষ পুরোহিত পেতে সমস্যা ছিল না। হঠাৎ মহিলা পুরোহিত কেন? প্রধান শিক্ষক সুব্রত সিংহ বলেন, “চিরাচরিত সব বিধিনিষেধ ভেঙে মেয়েরা যে সব-কিছুতে পাল্লা দিচ্ছেন, তাঁরা সব পারেন— এই কথাগুলি তো ছেলেদের ছোট থেকে জানতে হবে। সেই বার্তা দিতেই এই উদ্যোগ।”

তবে রাতারাতি এমন সিদ্ধান্ত হয়নি। কেউ কেউ আপত্তি তুলেছিলেন। প্রধান শিক্ষক বলেন, “সবাইকে বুঝিয়েছি, এই সময়ে সমাজে এই বার্তাগুলি দেওয়া খুব প্রয়োজন। যে কোনও সামাজিক ন্যায় শুরুর কেন্দ্র তো প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিই।”

নিজের স্কুলে সরস্বতী পুজো করার পরে জয়া দুর্গাপুজোও করেছেন। এ বার ছেলের স্কুল থেকে ডাক পেয়ে জয়া বলেছেন, “যাঁরা আমাকে প্রথম পুজো করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তাঁরা স্রোতের উল্টো দিকে হেঁটেছেন। এখন আর একটি স্কুল থেকে ডাক পাওয়ায় মনে হচ্ছে, আমরা যাঁরা প্রথার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলতে ভয় পাই না, তাঁরা দলে ভারী হচ্ছি।”

মহিলাদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রধান দীপশ্রী রায় বলেন, “চাইব, শত শত জয়ার জন্ম হোক। মেয়েদের কেউ জায়গা ছাড়বে না। জয়ার মতো এগিয়ে গিয়ে জায়গা তৈরি করে নিতে হবে, এটা সবার মনে রাখা উচিত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Saraswati Puja 2023 Jalpaiguri woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE