Advertisement
E-Paper

ফের মাসুল বৃদ্ধি বিদ্যুতের, পাঁচ বছরে ১৪ বার

পাঁচ বছরে বিদ্যুৎ মাসুল বাড়ল ৬০ শতাংশের বেশি। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এলাকায় শুক্রবার ইউনিট পিছু গড়ে ১১ পয়সা বিদ্যুতের মাসুল বাড়াল রাজ্য সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০৪

পাঁচ বছরে বিদ্যুৎ মাসুল বাড়ল ৬০ শতাংশের বেশি।

রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এলাকায় শুক্রবার ইউনিট পিছু গড়ে ১১ পয়সা বিদ্যুতের মাসুল বাড়াল রাজ্য সরকার। নবান্নের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের সময় বণ্টন এলাকায় ইউনিট পিছু গড় বিদ্যুৎ মাসুল ছিল ৪ টাকা ২৭ পয়সা। শুক্রবারের পরে সেই বৃদ্ধির অঙ্কটা দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৮৯ পয়সা। অর্থাৎ, গত পাঁচ বছরে মমতা সরকারের আমলে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ইউনিট পিছু ২ টাকা ৬২ পয়সা। সব মিলিয়ে যা ৬০ শতাংশেরও বেশি।

অথচ ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, মানুষের ঘাড়ে যাতে বোঝা না চাপে তার জন্য মাসুল বাড়াবে না তাঁর সরকার। সেই মতো ২০১১-র মে মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বণ্টন এলাকায় এক পয়সাও মাসুল বাড়েনি। নবান্নের কর্তাদের ওই সিদ্ধান্তের ফলে বিপুল লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছিল বণ্টন সংস্থাকে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মাসুল বৃদ্ধিতে সায় দেন মমতা। আর তার পর থেকে এ পর্যন্ত জ্বালানি খরচ-সহ মাসুল বৃদ্ধি পেয়েছে ধাপে ধাপে ১৪ বার।

দেশের বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কর্তাদের বক্তব্য— উন্নত মানের বিদ্যুৎ পেতে গেলে গ্রাহকদের উপযুক্ত দাম দিতেই হবে। উৎপাদনের খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বণ্টন সংস্থাগুলি মাসুল না বাড়ালে বিদ্যুৎ শিল্প লোকসানের মুখে পড়তে বাধ্য। কয়েকটি রাজ্যে এমনটা হয়েছে।

প্রত্যাশিত ভাবেই মাসুল বৃদ্ধির সমালোচনা করেছে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সংগঠন অ্যাবেকা এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। সিটু নেতা শ্যামল চক্রবর্তী যেমন বলছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বল্গাহীন ভাবেই বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের ঘাড়ে বোঝা চাপিয়ে চলেছে। ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাস্তবে তার উল্টোটা করছেন।’’ অ্যাবেকা-র সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যোৎ চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মাসুল বাড়াবেন না বলেছিলেন। অথচ গত পাঁচ বছরে যে ভাবে ইউনিট পিছু মাসুল বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের বিল মেটাতে কালঘাম ছুটছে। আমরা এর প্রতিবাদে অনেক আন্দোলন করেছি। তবু জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে প্রতি বছর বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে চলেছে সরকার।’’

রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার প্রতি বছরই কয়লার দাম, রেলের ভাড়া-সহ অন্যান্য কর বাড়িয়ে চলেছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মন্ত্রীর দাবি, ‘‘কেন্দ্রের এই নীতির কারণে খরচ যে ভাবে বাড়ছে, মাসুল সেই হারে বাড়ানো হচ্ছে না।’’

মাসুল বৃদ্ধি নিয়ে বিদ্যুৎ শিল্প মহলের একটি অংশ অবশ্য অন্য কথা বলছেন। তাঁদের মতে, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো বহু রাজ্য রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে মাসুল বাড়াতে না দিয়ে ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকেছে। ওই সমস্ত রাজ্যের বণ্টন সংস্থাগুলি কোটি-কোটি টাকা দেনা করে লোকসানে চলে গিয়েছে। দিনের মধ্যে ৮-১০ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এদের ঋণ দিতে চাইছে না কোনও ব্যাঙ্ক। ওই কর্তাদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ পরিষেবার চেহারাটা একেবারেই উল্টো। এখানে বাম জমানার শেষ দিক থেকে লোডশেডিং কার্যত হয় না।

নবান্নের খবর, চলতি বছর থেকে কিছু গৃহস্থকে অতিরিক্ত মাসুলের বোঝা থেকে রেহাই দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার। বলা হয়েছে, যে সব পরিবার ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ খরচ করবে, তাদের বর্ধিত হারে বিদ্যুৎ মাসুল দিতে হবে না। মাসুল যা বাড়বে, ভর্তুকি বাবদ ওই টাকা বণ্টন সংস্থাকে দিয়ে দেবে সরকার। সূত্রের খবর, রাজ্যের এই প্রস্তাবে সিলমোহর দিয়েছে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন।

Electricity Charge increase
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy