Advertisement
E-Paper

সদ্য মা হারিয়ে মনের জোরেই উচ্চ মাধ্যমিকে

ঠিক চার দিন আগে তছনছ হয়ে গিয়েছে জীবন। পরীক্ষা কেন্দ্রে আসার পথে এক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে মাকে। তবে ভেঙে পড়েননি যূথী পাত্র। শনিবার মনের জোরেই উচ্চ মাধ্যমিক দিলেন মা-হারা এই ছাত্রী। 

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯ ০৩:৪৪
কাঁথির পরীক্ষাকেন্দ্রে বাবার সঙ্গে যূথী। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

কাঁথির পরীক্ষাকেন্দ্রে বাবার সঙ্গে যূথী। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

ঠিক চার দিন আগে তছনছ হয়ে গিয়েছে জীবন। পরীক্ষা কেন্দ্রে আসার পথে এক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে মাকে। তবে ভেঙে পড়েননি যূথী পাত্র। শনিবার মনের জোরেই উচ্চ মাধ্যমিক দিলেন মা-হারা এই ছাত্রী।

এ দিন ছিল পদার্থবিদ্যার পরীক্ষা। কাঁথির সাতমাইল হাইস্কুলের ছাত্রী যূথীর উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষা কেন্দ্র হয়েছে কাঁথি হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়ে। এতদিন মা ঝর্না পাত্র ও বাবা বিদ্যুৎ পাত্র পরীক্ষা চলাকালীন বাইরে বসে থাকতেন। এ দিন পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে ছিলেন বিদ্যুৎবাবু ও যূথীর জেঠতুতো দিদি। পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে যূথী বাবাকে বললেন, ‘‘পরীক্ষা ভাল হয়েছে।’’ তবে ছলছল চোখ বুঝিয়ে দিল মেয়ের মন ভাল নেই।

গত ৫ মার্চ উচ্চ মাধ্যমিকের অঙ্ক পরীক্ষার দিন যূথীর পরীক্ষা কেন্দ্রে আসার পথেই দুর্ঘটনায় মারা যান ঝর্নাদেবী। আগে অন্য গাড়িতে বান্ধবীদের সঙ্গে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে গিয়েছিলেন যূথী। পিছনে স্কুটিতে আসছিলেন বিদ্যুৎ ও ঝর্না। এগরা-কাঁথি সড়কে কাঁথি রেল ক্রসিংয়ের কাছে স্কুটি থেকে পড়ে যান ঝর্না। জখম অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে। তবে বাঁচানো যায়নি। পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে মায়ের মৃত্যুসংবাদ শোনেন যূথী।

তার পর এ দিনই ছিল পরীক্ষা। মাকে হারানোর যন্ত্রণা সামলে যূথী পরীক্ষা দিতে পারবেন কিনা, সে নিয়ে চিন্তায় ছিলেন পরিবারের সকলেই। পরিবার সূত্রে খবর, ঘটনার পরে দু’দিন একেবারে চুপ করে গিয়েছিলেন যূথী। মাঝে মধ্যে শুধু ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন। ৬ মার্চ যূথীর স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্থিতধী দাস ছাত্রীর বাড়িতে যান, মানসিক ভাবে ভেঙে না পড়ার পরামর্শ দেন। বাড়িতে থাকলে মায়ের কথা এক মুহূর্তও ভোলা যাবে না। তাই যূথীকে স্কুলের হস্টেলে নিয়ে আসেন প্রধান শিক্ষক। গত দিন হস্টেলেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন যূথী। এ দিন সেখান থেকেই রওনা হয়েছেন পরীক্ষা কেন্দ্রে।

যূথীর বাবা বিদ্যুৎ বলছিলেন, “আমার নিজের মনের অবস্থা দিয়েই বুঝতে পারছি কতটা কষ্ট সয়ে মেয়ে আজ পরীক্ষাটা দিল।’’ মনের জোরে নজির গড়লেন যূথী, মানছেন তাঁর স্কুলের প্রধান শিক্ষকও।

এতটা মনের জোর এল কোত্থেকে? যূথীর জবাব, ‘‘মা চেয়েছিল আমি উচ্চ মাধ্যমিকটা ভাল ভাবে দিই। সে জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রে আসত, ঠায় বসে থাকত। মায়ের ইচ্ছাই আমাকে শক্তি জুগিয়েছে।’’

Accident Death Higher Secondary Exam Girl
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy