Advertisement
E-Paper

কাল নয়, আর্তি আজ বৈশাখীর

কাল কাল করে বসে থাকলে সেই কাল আর কখনওই আসে না। কিন্তু আলস্য ত্যাগের এই নীতিকথাটা প্রকৃতিকে শেখায় কে! কাল-বৈশাখী নয়, এখন যে আজ-বৈশাখীই জরুরি, সেটা প্রকৃতির কানে তোলার দায়িত্ব অগত্যা কাঁধে নিয়েছে এক খুদে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৪৮

কাল কাল করে বসে থাকলে সেই কাল আর কখনওই আসে না। কিন্তু আলস্য ত্যাগের এই নীতিকথাটা প্রকৃতিকে শেখায় কে! কাল-বৈশাখী নয়, এখন যে আজ-বৈশাখীই জরুরি, সেটা প্রকৃতির কানে তোলার দায়িত্ব অগত্যা কাঁধে নিয়েছে এক খুদে।

এবং কী আশ্চর্য! অন্তর্জালে ছড়িয়ে পড়া শিশুমুখের আর্তিতে, দেখা গেল, প্রকৃতিরও টনক নড়ে!

সোমবার সকাল থেকেই হোয়্যাটসঅ্যাপে ঘুরছিল ছবিটা। ফোকলা মুখের একটি শিশু বলছে, ‘আর কালবৈশাখী নয়। একটা আজবৈশাখীর দরকার।’

হয়তো নিছক কাক আর তালেরই গল্প। তবু এ দিন বিকেলেই কালবৈশাখী হাজির হয়েছে বর্ধমান, বাঁকুড়া আর পশ্চিম মেদিনীপুরে! কলকাতা এবং লাগোয়া জেলাগুলির কপালে অবশ্য তার ছিটেফোঁটাও জোটেনি। সকালে-বিকেলে আংশিক মেঘলা আকাশ আর পারদের পতন নিয়েই খুশি থাকতে হয়েছে মহানগরী এবং তার পড়শি জেলাগুলিকে।

সেই স্বস্তিটুকুও আজ, মঙ্গলবার থেকে আর থাকবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। কারণ, ঝাড়খণ্ডের একটি ঘূর্ণাবর্তের দাক্ষিণ্যে বাংলার পশ্চিমের কয়েকটি জেলায় ঝড়বৃষ্টি হয়েছে এবং সেটি শক্তি হারাতে শুরু করেছে এ দিনই। তার জলীয় বাষ্প টানার ক্ষমতা উবে গেলে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনাও যাবে মিলিয়ে। শুধু তা-ই নয়, প্রবল দহনের পরে দু’দিন ধরে পারদ আস্তে আস্তে নামতে শুরু করলেও ফের সে ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে। আশঙ্কা আছে তাপপ্রবাহেরও।

হাওয়া অফিসের হিসেব অনুযায়ী মহানগরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রবিবার ছিল ৩৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রায় দু’ডিগ্রি কমে এ দিন সেটা দাঁড়িয়েছে ৩৬.৬ ডিগ্রিতে। বাতাসে আর্দ্রতার জেরে বেড়েছে ঘামের অস্বস্তিও। এই পরিস্থিতিতে ত্রাতার ভূমিকা নেয় কালবৈশাখীই। জীর্ণ, পুরাতনকে তো সে উড়িয়ে নিয়ে যায়ই। সেই সঙ্গে রস সিঞ্চন করে তাপিত মৃত্তিকায়।

কালবৈশাখীর জন্মরহস্যটা কী?

আবহবিদদের ভাষ্য অনুযায়ী গ্রীষ্মের সূচনা পর্বে ছোটনাগপুর এলাকার হাওয়া ক্রমশ গরম হতে হতে উপরে উঠে যায়। বাতাসের উপরের স্তরে সেই উষ্ণ হাওয়া ঘনীভূত হয়ে উল্লম্ব বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি করে। সেই মেঘই কালবৈশাখীর ঝড়বৃষ্টি বয়ে আনে। এ ভাবে দহন ও দহনমুক্তির ক্ষেত্রে একই সঙ্গে দ্বিমুখী ভূমিকা পালন করে বৈশাখ। কোনও কোনও বছর প্রকৃতি কালবৈশাখীর ব্যাপারে এতটাই দরাজহস্ত হয় যে, নিয়মিত ঝড়বৃষ্টির দরুন দারুণ দহনের জ্বালা তেমন চেপে ধরতে পারে না।

এ বার তা হয়নি। দীর্ঘদিন পরে এ দিন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে যে-ঝড়বৃষ্টি হয়েছে, তার পটভূমি গড়ে দিয়েছিল বেশ কয়েক দিনের অগ্নিবাণ। আবার তাতে ঝাড়খণ্ডের একটি ঘূর্ণাবর্তেরও অবদান আছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, ওই ঘূর্ণাবর্তের টানে ওড়িশা থেকে কিছুটা জলীয় বাষ্প ঢুকে পড়েছিল। সেটাই ঘনীভূত হয়ে ঝড় এনেছে। বৃষ্টিও নামিয়েছে কমবেশি। এ দিন সকাল থেকে দক্ষিণবঙ্গের আকাশে যে-মেঘ দেখা গিয়েছে, তার পিছনেও আছে ওই জলীয় বাষ্পের হাতযশ।

আবহাওয়া দফতরের তথ্য বলছে, সাধারণ ভাবে মার্চে কলকাতায় অন্তত একটি কালবৈশাখী হওয়ার কথা। এপ্রিলে ২-৩টি। মে মাসে ৩-৪টি কালবৈশাখী হওয়াটা স্বাভাবিক। এ বছর দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলায় ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি কালবৈশাখী হয়ে গেলেও কলকাতার কপালে মার্চে জুটেছে মাত্র একটি। এবং সেটাও নিতান্ত দুর্বল কালবৈশাখী। আসলে এপ্রিল থেকেই বদলে গিয়েছে গরমের চরিত্র। পরিচিত দখিনা বাতাসকে ঠেলে সরিয়ে বাংলায় ঢুকে পড়েছে ঝাড়খণ্ডের ‘লু’ বা গরম হাওয়া। তার সঙ্গে তাপপ্রবাহ মিলে যাওয়ায় নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় বাংলার। দগ্ধ হতে হতে ঝড়বৃষ্টির প্রার্থনা যেমন চলছে, প্রশ্নও উঠছে— পরিত্রাতা কালবৈশাখী গেল কোথায়?

আবহবিদদের অনেকেই বলছেন, কালবৈশাখী মিলবে কী ভাবে! গরমের চেনা চরিত্রই তো বদলে গিয়েছে। তার চরিত্রবদলের জেরেই তৈরি হচ্ছে না কালবৈশাখীর পরিস্থিতি। গরমকালে সাধারণত বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে তাপমাত্রা বেশি থাকে, উপরের স্তরে কম। ফলে জলীয় বাষ্প গরম হয়ে উপরে ওঠে এবং কম ঠান্ডায় ঘনীভূত হয়ে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি করে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুব্রতকুমার মিদ্যার মতে, চলতি মরসুমে যে-ভাবে লু বইছে, তাতে বাতাসের উপরের স্তরের তাপমাত্রাও তুলনামূলক ভাবে বেড়েছে। ফলে যেটুকু জলীয় বাষ্প মিলছে, তা-ও ঘনীভূত হতে পারছে না। তৈরি হচ্ছে না বজ্রগর্ভ মেঘ। টানা লু-এর দাপট বা শুকনো গরমের পিছনে ঠিক কোন কারণ কাজ করছে, তা নিয়ে সবিস্তার গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করেন আবহবিদ্যার ওই অধ্যাপক।

রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে এ দিনের কালবৈশাখীর পরে একটু হলেও আশা জেগেছে দক্ষিণবঙ্গবাসীর মনে। তাঁরা বলছেন, এ বার কি শুকনো গরমের জ্বলুনি থেকে রেহাই মিলবে?

হাওয়া অফিস কিন্তু এখনই তেমন কোনও আশ্বাসবাণী শোনাতে পারছে না। তারা বলছে, ঝাড়খণ্ডের ঘূর্ণাবর্ত এর মধ্যেই দুর্বল হতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার থেকে সে আর জলীয় বাষ্প টানতে পারবে না। ফলে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনাও বিশেষ থাকছে না। উল্টে ঝাড়খণ্ড থেকে গরম হাওয়া আবার ঢুকতে থাকবে বাংলায়। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে আবার তেড়েফুঁড়ে মাথাচাড়া দেবে পারদস্তম্ভ। পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে আবার তাপপ্রবাহের আশঙ্কাও থাকছে।

kalbaisakhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy