Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বঙ্গে বর্ষা

উত্তরে এ বার বিপর্যয়ের মেঘ, সতর্ক দক্ষিণও

দক্ষিণবঙ্গ ভাসিয়ে এ বার বুঝি উত্তরবঙ্গের পালা! বাংলার বর্ষার মতিগতি দেখে হাওয়া অফিস অন্তত তেমনই মনে করছে। কয়েক দিন আগে অতি বর্ষণের দরুণ বানভাসি হয়েছিল দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩৮
Share: Save:

দক্ষিণবঙ্গ ভাসিয়ে এ বার বুঝি উত্তরবঙ্গের পালা! বাংলার বর্ষার মতিগতি দেখে হাওয়া অফিস অন্তত তেমনই মনে করছে।

কয়েক দিন আগে অতি বর্ষণের দরুণ বানভাসি হয়েছিল দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা। সেখানকার অবস্থা সবে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। অন্য দিকে বৃষ্টির দৌড়ে উত্তরবঙ্গ গোড়ায় পিছিয়ে পড়েছিল। কিন্তু সোমবার নয়াদিল্লির মৌসম ভবনের দেওয়া পূর্বাভাসে উত্তরবঙ্গের জন্য দেখা যাচ্ছে অশনি সঙ্কেত।

হাওয়া অফিস জানিয়েছে, হিমালয় লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, নেপাল ও উত্তর বিহারে আগামী চার দিন অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। উত্তর বিহারের জল নেমে আসবে মালদহে। সিকিমের জল এসে ভাসাবে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলা। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ জুড়েও চার দিন ধরে তুমুল বৃষ্টি চললে ওই তল্লাটে নদী উপচে বান ডাকতে পারে বলে মৌসম ভবন হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে।

একই সঙ্গে ফের বিপদ ঘনাতে পারে দক্ষিণবঙ্গেও। কেন?

কারণ, চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি বাকি বিহারেও প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। উত্তরপ্রদেশেও তা-ই। সেই জল নেমে এলে দক্ষিণবঙ্গে, বিশেষত রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে আবহবিদদের অনেকের আশঙ্কা। এই মর্মে রাজ্য সরকারকেও সতর্ক করা হয়েছে।

চলতি মরসুমে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে এ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের ২০% বেশি। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় দক্ষিণবঙ্গের জেলায় জেলায় রোজই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে। হাওয়া অফিসের খবর: আগামী তিন দিন আবহাওয়া এমনই থাকবে। উপরন্তু বিহারের উপরে থাকা ঘূর্ণাবর্তের জেরে সপ্তাহের শেষাশেষি দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দানা পাকছে।

অর্থাৎ উত্তর-দক্ষিণ মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা দরাজ। সামগ্রিক ভাবে কিন্তু দেশের হাল এ রকম ‘ডুবুডুবু’ নয়। বরং মৌসম ভবনের পর্যবেক্ষণ বলছে, দেরিতে হলেও এল নিনো ধীরে ধীরে প্রভাব বাড়াচ্ছে। রাশ পড়ছে বর্ষার গতিতে। জুলাই ইস্তক সারা দেশে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের সামান্য বেশি। অগস্টের প্রথম ১৬ দিনে সারা দেশে স্বাভাবিকের ১৭% কম বৃষ্টি হওয়ায় ছবিটা আমূল পাল্টে গিয়েছে। সোমবারের হিসেব মোতাবেক, সর্বভারতীয় নিরিখে বর্ষা দৌড়চ্ছে ১০% গড় ঘাটতি ঘাড়ে নিয়ে।

ফলে কিছু জায়গায় অনাবৃষ্টি চোখ রাঙাচ্ছে। এদের পুরোভাগে রয়েছে মারাঠওয়াড়া (ঘাটতি ৪৮%), উত্তর কর্নাটক (ঘাটতি ৪৫%) এবং রায়লসীমা (ঘাটতি ৩৮%)। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে বৃষ্টির ঘাটতি যথাক্রমে ৩৬% ও ৩২%। যদিও ঘূর্ণাবর্ত, নিম্নচাপ-অক্ষরেখার প্রভাবে বিহার-উত্তরপ্রদেশে আগামী চার দিন প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় সেখানে ঘাটতির বহর কমে যাওয়ার আশা দেখছেন আবহবিদেরা।

তবে মারাঠওয়াড়া, উত্তর কর্নাটক কিংবা রায়লসীমায় আপাতত ভারী বৃষ্টির কোনও ইঙ্গিত নেই। এটা মৌসম ভবনের বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওখানে বিকল্প চাষের কথা ভাবার জন্য মৌসম ভবন ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রককে পরামর্শ দিয়েছে। আবার উল্টো ভাবনা দক্ষিণবঙ্গ নিয়ে। সেখানে দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দিলে খরিফ চাষ মার খাওয়ার সমূহ আশঙ্কা।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি দফতরের এক অফিসার এ দিন বলেন, জুলাইয়ের শেষ থেকে অগস্টের প্রথম সপ্তাহের সেই প্রবল বৃষ্টি আর ডিভিসি’র ছাড়া জলে দক্ষিণবঙ্গে বিস্তর ফসল নষ্ট হয়েছে। ‘‘ফের বন্যা হলে সামলানো মুশকিল হবে।’’— মন্তব্য তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE