সিজিও কমপ্লেক্সে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, দোলা সেন, অনুপম হাজরা, সৌমিত্র খান, নির্মল মাজি। ছবি: শৌভিক দে।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই সিজিও কমপ্লেক্স জুড়ে চাপা উত্তেজনা। বোঝা যাচ্ছিল, কিছু একটা হতে চলেছে।
সকাল ৯:৩০। জনা কু়ড়ি পুলিশ কর্মী মূল ফটকের সামনেটা ঘিরে ফেললেন। সাংবাদিকরা ভিড় করে রয়েছেন। আসতে শুরু করেছেন মধ্য ও উত্তর কলকাতার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। ভিড়ে চাপা গুনগুন, কখন আসবেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। আসার পরেই বা ঠিক কী হবে।
সকাল ১০:৫০। সাদা এসইউভি করে এসে পৌঁছলেন সুদীপ। নিরাপত্তারক্ষীরা গাড়ির দরজা খুলে নামতে সাহায্য করলেন। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবির উপর হাতকাটা নীল কোট। নামামাত্র শ’খানেক সাংবাদিকের ভিড়টা আক্ষরিক অর্থেই ঝাঁপিয়ে পড়ল তাঁর উপর। একটি মাইক্রোফোনের আঘাতও লাগল সুদীপের মাথায়। প্রশ্ন ছিটকে এল, ‘‘কী বলবেন আজ?’’ সুদীপ উত্তর দেন, ‘‘আসব বলেছিলাম, তাই এসেছি। জানব কী অভিযোগ রয়েছে। জেনে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করব।’’ ফের প্রশ্ন, ‘‘এর পিছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা আছে কি?’’ সুদীপের জবাব, ‘‘দলই বলবে সে কথা।’’
সকাল ১১:০০। একগোছা কাগজপত্র নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন তৃণমূল সাংসদ। সূত্রের খবর, নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি নিয়ে এসেছিলেন তিনি। একতলায় সে সব জমা দিয়ে সোজা তিনতলায় চলে গেলেন আধিকারিকদের সঙ্গে।
সকাল ১১:৩০। জেরা শুরু। সময় যত গড়াচ্ছে ততই ভিড় বাড়ছে দলীয় কর্মীদের। চোখেমুখে আশঙ্কা। তবু বেশির ভাগই বলছেন, ‘‘আজ ডেকে আজই গ্রেফতার করবে না নিশ্চয়!’’
বেলা ১২:০০। আচমকা বেড়ে গেল পুলিশের আনাগোনা। সাংবাদিকদের এক পাশে সরাতে লাগলেন তাঁরা। চার দিকে যেন হঠাৎ বে়ড়ে গিয়েছে ছোটাছুটি। বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে, দফতরের ভেতরেও ব্যস্ততা। ঘন ঘন উপর-নীচ করছেন আধিকারিকরা। এর মধ্যেই সিবিআই সূত্রে খবর এল, তদন্তে সহযোগিতা করছেন না সুদীপ।
দুপুর ১:০০। উত্তেজনা ও জল্পনা তুঙ্গে। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা বারবার সাংবাদিকদের প্রশ্ন করছেন, কী হবে। সবার চোখ তিনতলার দিকে।
দুপুর ২:০০। তিনতলা থেকে একতলায় নামতে দেখা গেল সুদীপকে। কিছু ক্ষণ পর ফের উঠে গেলেন তিনি। ক্রমশ এ বার দুশ্চিন্তা ছড়াচ্ছে বাইরে।
দুপুর ৩:০০। ফের পুলিশের আনাগোনা শুরু। আবার জল্পনা, এ বার কি কিছু জানা যাবে?
দুপুর ৩:২০। খবর এল, দিল্লির সিবিআই সদর দফতর থেকে কিছু নির্দেশ এসেছে। কী নির্দেশ, কেউ নিশ্চিত নয়।
দুপুর ৩:৩০। দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল খবর, গ্রেফতারই হয়েছেন সুদীপ। অনেকেই ফোনে খবর দিচ্ছেন বিভিন্ন জায়গায়। তবে চেঁচামেচি নেই। সকলেই যেন অস্বাভাবিক রকমের শান্ত, নিস্তব্ধ।
বিকেল ৫:০০। আসতে শুরু করলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, নির্মল ঘোষ, ববি হাকিম, সব্যসাচী দত্ত, সুজিত বসু...। গেটের বাইরে অপেক্ষা করছেন তাঁরা। সাদা চুড়িদার পরে এসে পৌঁছলেন সুদীপের স্ত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ভিতরে ঢুকে গেলেন তিনি। সুদীপকে এ দিনই ভুবনেশ্বর নিয়ে যাওয়া হবে বলে শোনা গেল।
বিকেল ৫:৩০। বেরিয়ে পড়তে শুরু করেছেন সিবিআইয়ের আধিকারিক-কর্মীরা। চার দিকে উদ্বেগের পরিবেশ। দফতরের একটা ছাড়া বাকি সব ফটক বন্ধ।
সন্ধে ৬:০০। এসে পৌঁছলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মুকুল রায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, শশী পাঁজা, ইদ্রিস আলি, দোলা সেন, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়রা। সকলে একসঙ্গে ভেতরে ঢুকলেন।
সন্ধে ৬:২০। ববি হাকিম বেরিয়ে বললেন, ‘‘সুদীপদা আমাদের নেতা। ওঁর পাশে দাঁড়াতে এসেছি। দিদির নির্দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি চলবে।’’
সন্ধে ৬:৩০। ডেরেক ও’ব্রায়েন বেরিয়ে বললেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত লড়ব আমরা। বুধবারই সংসদে তৃণমূল সাংসদরা ধর্নায় বসবেন।’’ এর পরেই বেরোলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘নোটবন্দির প্রতিবাদে তৃণমূল অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। তাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে এমন করা হচ্ছে। বুধবার পথে নামবে তৃণমূল।’’
সন্ধে ৭:৩০। সুদীপের মেডিক্যাল পরীক্ষা সারা হল। পুলিশের গাড়ি এসে গিয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে বের করা হতে পারে সাংসদকে। ভুবনেশ্বরের উড়ান রাত ১১-৩৫ মিনিটে।
রাত ৮:২০। বেরিয়ে এলেন নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছু বললেন না। সাংবাদিকদের প্রবল ভিড়ে ফের ধস্তাধস্তি। এক মহিলা সাংবাদিককে নিরাপত্তারক্ষী ধাক্কা মারায় সাময়িক উত্তেজনা।
রাত ৯:৩৫। সুদীপের জন্য গাড়ি দাঁড় করানো হল ফটক ঘেঁষে।
রাত ৯:৪৫। সুদীপ বেরোলেন। প্রবল ভিড়, ধাক্কাধাক্কি। দলীয় কর্মীরা গাড়ি ঘিরে স্লোগান দিচ্ছিলেন। সুদীপ হাসিমুখে হাত নেড়ে গাড়িতে উঠলেন। গাড়ি ছাড়ল বিমানবন্দরের উদ্দেশে।
রাত ১০: ২৫। বিমানবন্দরে ঢুকে গেল সুদীপের গাড়ি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy