নিজের খেতে আনন্দ দাস। নিজস্ব চিত্র।
খেতের পরিমাণ প্রায় ২২ বিঘা। কিন্তু সেই জমিতে কয়েক প্রজন্ম ধরে চাষ করার পরেও লাভ হবেই এমন নিশ্চয়তা ছিল না। শেষমেশ চাষ-পরিকল্পনায় বদল আনেন পূর্বস্থলীর বিদ্যানগর গ্রামের চাষি আনন্দ দাস। আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শুরু করেন বিকল্প চাষ। আর তাতেই কেল্লা ফতে। চাষের লক্ষ্মীলাভও হল আশাতীত। আনন্দবাবুর এই সাফল্যকেই ‘কৃষক রত্ন ২০১৭’ পুরস্কারে স্বীকৃতি জানাতে চলছে রাজ্য সরকার। আগামী সোমবার, মাটি উৎসবের দিনে তাঁর হাতে সম্মাননা তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গ্রামে তিন ভাইকে নিয়ে সংসার আনন্দবাবুর। গতানুগতিক শস্যে বিভিন্ন সমস্যা দেখে প্রায় এক দশক আগে চাষ-পরিকল্পনায় বদল আনেন আনন্দবাবু। শুরু করেন পেয়ারা চাষ। পেয়ারা জমি থেকে ফল মেলার আগে সেই জমিতেই আলু, হলুদ, কচু-সহ বিভিন্ন চাষ করেও মেলে মোটা অঙ্কের লাভ। আর পিছন ফিরে তাকাননি তিনি। ধীরে ধীরে নিজের ২২ বিঘা জমির পাশাপাশি আরও ১৫ বিঘা জমি চুক্তির ভিত্তিতে নিয়ে চাষ শুরু করেন।
জমিকে কী ভাবে ব্যবহার করতে হয়, তাও আনন্দবাবু নতুন করে শিখিয়েছেন বলে দাবি কৃষি আধিকারিকদের। কী রকম? শনিবার আনন্দবাবুর বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, তিনি নিজের জমিকে ছোট ছোট টুকরোয় ভাগ করে বিভিন্ন চাষ করেছেন। ১৪ বিঘায় পেয়ারা, সাত বিঘায় কুল, ছ’বিঘায় ধনচে, দু’বিঘা করে জমিতে পাতিলেবু, বোরো ধান প্রভৃতি চাষ করেছেন এই চাষি। আনন্দবাবুর দাবি, ‘‘এই সব ফসলেরই বাজারে ভাল কদর রয়েছে।’’ এ ছাড়া বাড়ির পাশে বিঘা চারেক পুকুরে ভেটকি মাছ ও পুকুরের পাড়ে কলা চাষ করছেন তিনি। দু’টি কলা গাছের মধ্যে ফাঁকা পড়ে থাকা জমিতে দিব্যি লতিয়ে উঠেছে লাউ গাছ।
চাষাবাদের সঙ্গে প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটাতেও আনন্দবাবু বিশেষ পারদর্শী বলে দাবি তাঁর ভাইদের। গোয়ালঘরে তৈরি করছেন জৈব সার। কৃষি দফতরের কর্তারা জানান, জমিতে নিয়মিত জীবাণু সারও প্রয়োগ করেন তিনি। ‘জেলার সেরা’ এই চাষি ধান চাষ করেন শ্রী পদ্ধতিতে। এ ছাড়াও নতুন পদ্ধতিতে চাষের কথা বলা হলেই, তার হাতে কলমে করার জন্য আনন্দবাবুর উৎসাহ নজরে পড়ার মতো বলে দাবি কৃষি আধিকারিকদের।
এই পদ্ধতিতে চাষ করে লাভ কেমন হচ্ছে? আনন্দবাবু শুধুমাত্র পেয়ারা চাষের পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করেন, বিঘা প্রতি জমিতে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকার ফসল বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া পেয়ারা গাছ বিক্রিরও সুযোগ রয়েছে। পেয়ারার বাজার রয়েছে নবদ্বীপ, কাটোয়া, কৃষ্ণনগর, জিরাট-সহ বিভিন্ন জায়াগায়।
কী ভাবে মিলল সেরা কৃষকের সম্মান? কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চাষে আনন্দবাবুর এমন সাফল্যের কথা জেলা প্রশাসন মারফত পৌঁছে যায় নবান্নেও। সেখান থেকেই ‘সেরা’র সম্মান দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের কৃষি আধিকারিক পরিতোষ হালদারের আশা, ‘‘আনন্দবাবুর এমন সম্মান অন্য চাষিদেরও পথ দেখাবে।’’ জেলার এক সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘ওনাকে দেখে অনেক চাষি পেয়ারা চাষ শুরু করেছেন।’’
তবে এখানেই থেমে থাকতে চান না আনন্দবাবু। এ বারের ফলনকে পরের মরসুমে ছাড়িয়ে যাওয়ায় তাঁর লক্ষ্য বলে জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy