ধ্বংসস্তূপ: বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত আশপাশের একাধিক বাড়ি। রবিবার, দত্তপুকুরের মোচপোল এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
সকালে বাড়ির পিছনের জমিতে কাজ করছিলাম। বৌ বলল, রান্নার জন্য কাঠ আনতে। কুড়ুল হাতে কাঠ কাটতে কাটতেই হঠাৎ শুনলাম বিস্ফোরণের শব্দ। আওয়াজে কান-মাথা ফেটে যাওয়ার জোগাড়! দেখি, আকাশ কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বাড়ির দিকে দৌড়ে এসে দেখি, সব কিছু লন্ডভন্ড। পাশের বাড়িটার কিছু আর অবশিষ্ট নেই। এ দিক-ও দিক মৃতদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। কারও ধড় থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন, কারও অর্ধেক হাত উড়ে গিয়েছে। সেই অবস্থাতেই সে মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে।
প্রথমে ভেবেছিলাম, আমার বাড়িতেও হয়তো কিছু হয়েছে। ছেলে-বৌ হয়তো আর বেঁচে নেই! দৌড়ে বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখি, দু’জনে কান্নাকাটি করছে। পাড়া জুড়েই কান্নার রোল উঠেছে ততক্ষণে। তড়িঘড়ি ওদের ঘর থেকে বার করে এনে উদ্ধারকাজে হাত লাগালাম। ততক্ষণে পাড়ার অনেকে জড়ো হয়েছেন। সকলে মিলে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা একের পর আহতকে বার করে আনতে শুরু করি। কিন্তু ধ্বংসস্তূপে লোহার বিম, ইট, কাঠের নীচে এমন ভাবে আটকে ছিল যে, সবাইকে আমাদের পক্ষে বার করা সম্ভব ছিল না। গোঙানির শব্দ শুনেও সাহায্যের জন্য এগোতে পারিনি। আরও কেউ আটকে আছে কি না, তা দেখতে ঝুঁকি নিয়ে যে ভিতরে যাব, তাতেও ভয় লাগছিল। মনে হচ্ছিল, এই বুঝি আবার বিস্ফোরণ হবে। এই বুঝি বাকি অংশটুকুও হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে!
পাড়ার সকলে মিলে যে ক’জনকে পেরেছি, বাইরে বার করে এনেছিলাম। একটা ছোট গাড়িতে তুলে তাঁদের হাসপাতালে পাঠাই। কিছু ক্ষণ পরে পুলিশ আসে। বাইরে এসে দেখি, দমকলের গাড়িও পৌঁছে গিয়েছে। তার পরে আমাদেরও বাইরে বার করে দিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করে ওরা।
টিভিতে, কাগজে মাঝেমধ্যে বিস্ফোরণের খবর পাই। বিস্ফোরণের ভয়াবহতা, মৃত্যুর খবরে শিউরে উঠি। কিন্তু আমার বাড়ির পাশেই যে সেই দৃশ্য দেখতে হবে, স্বপ্নেও ভাবিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy