E-Paper

শ্রমিককে নার্সিংহোম থেকে ছাড়াতে পথে পরিবার

হাড়ের চোট সংক্রান্ত চিকিৎসার জন্য চাঁচলের অনেকেই পূর্ণিয়ায় যান। গণেশকে ৩১ অক্টোবর পূর্ণিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর শাশুড়ি মৃদুলা দাস জানান, দিন পনেরো আগে সুস্থ হন গণেশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৩০
হরিশ্চন্দ্রপুরের বাড়ির সামনে গণেশের পরিবার।

হরিশ্চন্দ্রপুরের বাড়ির সামনে গণেশের পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।

ভিন্ রাজ্য থেকে বাড়ি ফেরার সময় চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে দু’পায়ে চোট পান মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের পরিযায়ী শ্রমিক গণেশ দাস। মালদহ মেডিক্যালে তাঁর ‘ঠিকঠাক’ চিকিৎসা হচ্ছিল না, দাবি পরিবারের। গণেশকে ভর্তি করানো হয় লাগোয়া বিহারের পূর্ণিয়ার একটি নার্সিংহোমে। আপাতত তিনি সুস্থ। কিন্তু নার্সিংহোমের বিল মেটাতে না পারায়, তাঁকে ছাড়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। গণেশকে বাড়ি ফেরাতে সাহায্য চেয়ে দোরে দোরে ঘুরছেন তাঁর মা, স্ত্রী ও শাশুড়ি। মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া মঙ্গলবার বলেন, ‘‘বিষয়টি অতিরিক্ত জেলাশাসককে (সাধারণ) খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। সব দেখে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ মালদহের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ্ত ভাদুড়ি বলেন, ‘‘বিষয়টি গুরুতর। আমরাও খোঁজ নিচ্ছি।’’

এই ঘটনায় সামগ্রিক ভাবে পরিযায়ীদের আর্থিক অবস্থা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনাচক্রে, এ দিনই বাগডোগরা বিমানবন্দরে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখা করে রাজ্যে কাজ চেয়ে আর্জি জানান মালদহেরই এক পরিযায়ী শ্রমিক মহম্মদ নাজিমুল। শুভেন্দু বলেন, ‘‘বাগডোগরা বিমানবন্দরের বাইরে উনি আমার জন্য দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলেন। উনি মুম্বইয়ে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। কবে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে হাতে কাজ পাবেন, জানতে চেয়েছেন। বলেছি, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দিন প্রাক্তন হবেন, সে দিন আপনারা বাইরের রাজ্য থেকে ফিরবেন’।’’ নাজিমুলের দাবি, ‘‘কাজের জন্য বাইরে থাকতে হয়। বাড়ি ফিরতে চাই। কাজের কথা জানাতে বাগডোগরায় গিয়েছিলাম।’’

হরিশ্চন্দ্রপুরের পিপলার বাসিন্দা বছর চল্লিশের গণেশও মাঝেমধ্যেই কাজে ভিন্ রাজ্যে যান। পরিবারে দুই নাবালক ছেলে, স্ত্রী ও মা রয়েছেন। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে দিল্লি থেকে বাড়ি ফেরার জন্য গণেশ যে ট্রেনে ওঠেন, তার স্টপ হরিশ্চন্দ্রপুরে ছিল না। হরিশ্চন্দ্রপুরে চলন্ত ট্রেন থেকে নামার সময় দু’পায়ের গোড়ালিতে গুরুতর চোট পান তিনি। হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতাল থেকে তাঁকে মালদহ মেডিক্যালে ‘রেফার’ করা হয়। কিন্তু সেখানে ঠিক মতো চিকিৎসা হচ্ছিল না বলে দাবি পরিবারের। যদিও মালদহ মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গণেশ দাসের ঘটনাটি ঠিক কী হয়েছিল, আমরা তা খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে চিকিৎসা নিয়ে ওঁরা লিখিত অভিযোগ জানাননি।’’

হাড়ের চোট সংক্রান্ত চিকিৎসার জন্য চাঁচলের অনেকেই পূর্ণিয়ায় যান। গণেশকে ৩১ অক্টোবর পূর্ণিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর শাশুড়ি মৃদুলা দাস জানান, দিন পনেরো আগে সুস্থ হন গণেশ। তাঁর দাবি, ‘‘১৫ দিন আগেই ৭০ হাজার টাকা বাকি আছে বলে জানিয়েছিল নার্সিংহোম। তা জোগাড় করতে আমরা লোকের কাছে সাহায্য চাইছি।’’ মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে পূর্ণিয়ার ওই নার্সিংহোমের কর্মী মহম্মদ গুড্ডু বলেন, ‘‘গণেশ দাসের সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার বিল বাকি রয়েছে। বিল না মেটালে, আমরা কী ভাবে ছাড়ব? টাকা মিটিয়ে দিয়ে ওঁরা গণেশকে নিয়ে যান।’’

পরিবারটি জানিয়েছে, তারা স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের আবেদন করেছে। এখনও কার্ড হাতে আসেনি। গণেশের বৃদ্ধা মা কুন্তি দাস, স্ত্রী অণিমা দাসের বক্তব্য, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকলেও, পরিবারের একমাত্র রোজগেরে লোকটাকে (গণেশ) দ্রত সারিয়ে তোলাই মাথায় ছিল আমাদের। তাই পূর্ণিয়ার নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়েছিলাম।’’ স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে আশ্বাস মহকুমাশাসক (চাঁচল) শৌভিক মুখোপাধ্যায়ের।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

migrant worker Nursing Home West Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy