E-Paper

মা-বাবার নাম নেই তালিকায়, ভোটার কার্ডও পাননি আমির

২০০২ সালের ভোটার তালিকায় অভিভাবকদের নাম থাকলে, সন্তানের বৈধ ভোটার বলে গণ্য হওয়ার কথা জানিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ০৬:১৪
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’, সেখানে জেল খেটে দেশে ফেরা। তার পরে দু’মাসের বেশি কাটলেও উদ্বেগ ঘোচেনি মালদহের কালিয়াচকের জালালপুরের পরিযায়ী শ্রমিক আমির শেখের। এ বার তাঁর উদ্বেগ ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে। কারণ, তাঁর ভোটারকার্ড নেই! ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম নেই আমিরের বাবা জিয়েম শেখের। ফলে, নতুন করে সমস্যায় পড়তে হবে কি না, দুশ্চিন্তা রয়েছে আমিরের। আমিরের মতো দুশ্চিন্তা বীরভূমের অন্তঃসত্ত্বা পরিযায়ী শ্রমিক সোনালি বিবির থাকার কথা ছিল না। তাঁর বাবা ও মায়ের নাম রয়েছে ২০০২-এর তালিকায়। অথচ, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে দিল্লি পুলিশ সোনালি, তাঁর স্বামী ও সন্তানকে বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করেছে। তাঁরা রয়েছেন সে দেশের সংশোধনাগারে।

২০০২ সালের ভোটার তালিকায় অভিভাবকদের নাম থাকলে, সন্তানের বৈধ ভোটার বলে গণ্য হওয়ার কথা জানিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। পরিবারের প্রশ্ন, সোনালির বাবা-মা-দাদার নাম ওই তালিকায় রয়েছে। তা হলে সোনালি কী করে বাংলাদেশি হলেন! সোনালির মামাতো ভাই রকি শেখ বলছেন, ‘‘কমিশন এসআইআরের কথা ঘোষণা করার পরেই তালিকা বের করে রেখেছি, প্রমাণ হিসাবে!’’

আমির যদিও চিন্তায় বাবার নাম ২০০২-এর তালিকায় না থাকায়। তাঁর বাবা বছর চল্লিশের জিয়েম বলেন, ‘‘সে সময় ভোটের তালিকায় নাম তোলার মতো বয়স হয়নি। ওই তালিকায় আমাদের নাম না থাকলেও, আমার বাবা-মায়ের আছে। তার পরেও চিন্তা কাটছে না। কারণ, যে ভাবে বৈধ নথি থাকার পরেওছেলেকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তার পরে আর কেন্দ্রের সরকারের উপরে বিশ্বাস রাখতে পারছি না।” আমিরের মা রেণু বিবি পাঁচ বছর আগে মারা গিয়েছেন। তাঁর নাম ছিল না ২০০২-এর তালিকায়। পরে জিয়েম দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী সরিফা বিবির নামও তালিকায় নেই।

আমির আর ভিন্ রাজ্যে কাজে যাননি। কালিয়াচকেই টোটো চালান। তাঁর কথায়, “ভোটার কার্ড না থাকলেও, ছিল জন্মের শংসাপত্র, স্কুলের শংসাপত্র, আধার কার্ড। তার পরেও বাংলাদেশি সন্দেহে রাজস্থান থেকে বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করা হয়েছিল। পরে, অনেকের সাহায্যে ঘরে ফিরেছি। ভোটের কার্ডের জন্য আবেদন করেছি। এখনও কার্ড পাইনি।”

সোনালির বাবার নাম ভদু শেখ (ভোটার তালিকায় ভোদু সেখ)। তাঁর নাম ২০০২ ও ২০২৫-এর ভোটার তালিকায় মুরারই বিধানসভার অধীনে রয়েছে। ২০২৫-এর ভোটার তালিকায় বিধানসভা এক থাকলেও, পার্ট বদলে সোনালির বাবা-মা এবং দাদা সুরজ শেখের নাম রয়েছে।

বাংলাদেশ আদালত ইতিমধ্যেই সোনালি বিবি, সুইটি বিবি-সহ ছ’জনকে ভারতীয় বলে উল্লেখ করেছে। কলকাতা হাই কোর্টও ওই ছ’জনকে ভারতে ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু সে নির্দেশ কার্যকর না করে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে কেন্দ্র। অন্য দিকে, সোনালি ও সুইটিদের পরিবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেছে।

বৃহস্পতিবার ভদু শেখকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর পুত্রবধূ সীমা বিবি বলেন, ‘‘শ্বশুরবাড়ির পারিবারের সদস্যেরা বাংলাদেশি হলে ২০০২ ও ২০২৫-এর ভোটার তালিকায় নাম থাকে কী করে? আমি চাই, ননদদের দ্রুত দেশে ফেরানো হোক।’’ সীমার সংযোজন, ‘‘যে কোনও দিন সন্তান হবে সোনালির।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Suri Malda

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy