Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Duttapukur Blast

নিষেধ উড়িয়ে বাজির ব্যবসা ভাইয়ের, আক্ষেপ আহত দাদার

শামসুলের বাড়িতে বিস্ফোরণে আহতদের নিয়ে আসা হয়েছে বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছিন্নভিন্ন সাতটি দেহ উদ্ধার করে সেখানকারই মর্গে নিয়ে গিয়ে রেখেছে পুলিশ।

An image of the injured person

হাসপাতালে সইদুল আলি। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৩ ০৫:১৮
Share: Save:

‘‘ভাই কেমন আছে? কত বার বারণ করেছিলাম। কথা শুনল না।’’ দু’পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় বারাসত হাসপাতালের শয্যায় বসে হাউহাউ করে কাঁদছিলেন সইদুল আলি। জানতে চাইছিলেন ভাই শামসুল আলির খবর। রবিবার সকালে ইছাপুর-নীলগঞ্জ পঞ্চায়েতের অধীন মোচপোল গ্রামে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয় শামসুলের বাড়িতে। পাশেই থাকেন সইদুল। বেআইনি বাজির কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে শামসুলের বিরুদ্ধে। বিস্ফোরণে আহত হয়ে সঙ্কটজনক অবস্থায় বারাসত হাসপাতালে ভর্তি শামসুল। তাঁকে রাখতে হয়েছে ভেন্টিলেশনে।

কাঁদতে কাঁদতে ভাইকে খানিক দোষারোপও করছিলেন সইদুল। তিনি বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরে ভাইকে বলছিলাম বাজির কারবার না করতে। কিছু দিন বন্ধ ছিল। ফের শুরু করে দিল। কথা শুনলে আজ এত বড় ঘটনা ঘটত না।’’ বিস্ফোরণের সময়ে সইদুল ও তাঁর স্ত্রী আসুরা বিবি নিজেদের বাড়ির ঠিক বাইরে ছিলেন। বিস্ফোরণে বাড়িটি ভেঙে চাপা পড়েন আসুরা। সইদুলের উপরেও বাড়ির ইট-পাথর উড়ে আসে। স্থানীয়েরা তাঁদের উদ্ধার করেন।

শামসুলের বাড়িতে বিস্ফোরণে আহতদের নিয়ে আসা হয়েছে বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছিন্নভিন্ন সাতটি দেহ উদ্ধার করে সেখানকারই মর্গে নিয়ে গিয়ে রেখেছে পুলিশ। এ দিন হাসপাতালে পৌঁছে দেখা যায়, সেখানে রয়েছে কড়া পুলিশি ব্যবস্থা। কান্নাকাটি করছেন আহতদের পরিজনেরা। একের পর এক অ্যাম্বুল্যান্স আর পুলিশের গাড়ি পৌঁছচ্ছে হাসপাতালে। এমনকি, দেহাবশেষ নিয়েও পুলিশকে আসতে দেখা যায়। আহতদের মধ্যে দুই শিশু ও এক মহিলাকে বার্ন ইউনিটে রাখা হয়েছে। বাকি চার আহতকে রাখা হয়েছে পুরুষদের ওয়ার্ডে। এরই মধ্য়ে বিকেলের দিকে রটে যায়, শামসুলের মৃত্যু হয়েছে। তার জেরে কান্নার রোল উঠে যায় হাসপাতালে। পরে অবশ্য সুপার সুব্রত মণ্ডল জানান, শামসুলের অবস্থা সঙ্কটজনক। তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। বিস্ফোরণে শামসুলের পরিবারের একাধিক সদস্য আহত হয়েছেন। বার্ন ইউনিটে ভর্তি রাখা হয়েছে শামসুলের নাতি, ছ’বছরের জুনায়েদউদ্দিনকে। সে দাদুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল বলে জানা গিয়েছে।

এ দিন হাসপাতালের মর্গের সামনে মৃতদের শনাক্তকরণের জন্য পুলিশ ও হাসপাতালের কর্মীদের নিয়ে শিবির খোলা হয়েছে। দু’তরফই জানিয়েছে, মৃতদের মধ্যে পাঁচ জনকে সন্ধ্য়া পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি। তাই দেহগুলির ময়না তদন্তও হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, একমাত্র বাজি ব্যবসায়ী কেরামত আলি ও তাঁর ছেলে রবিউল আলির দেহই শনাক্ত করছেন আত্মীয়েরা। কেরামতের ভ্রাতৃবধূ হালিমা বিবি বলেন, ‘‘কেরামত অনেক দিন ধরেই বাজির ব্যবসা করতেন। রবিউল ওঁর প্রথম পক্ষের সন্তান। দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানেরা সবাই ছোট। তাদের কী হবে, সেটাই চিন্তা করছি।’’

বিকেলে হাসপাতালে যান বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। আহতদের সঙ্গে তিনি কথা বলে জানতে চান, তাঁদের কী প্রয়োজন। তাঁর দাবি, বিস্ফোরণের সঙ্গে তৃণমূলের লোকজন কোনও ভাবেই জড়িত নন। কাকলি আরও
বলেন, ‘‘শামসুল তৃণমূল করতেন না। আমি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি। ওই এলাকায় আগে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন। তিনি বাজির ব্যবসা বন্ধ করিয়েছিলেন।’’ কাকলির অভিযোগ, বর্তমানে সেখানে আইএসএফের সদস্য এসে ফের ব্যবসা শুরু করিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Injury Firecracker Blast
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE