E-Paper

পুলিশের লাঠিতে জখম, লড়াই জারি

রক্তাক্ত পায়ে হুইল চেয়ারে বসা ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে এখন সল্টলেকের ভাড়াবাড়িতে আছেন সোমনাথ।

সমীরণ পাণ্ডে

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৫ ০৯:০২
আহত সোমনাথ।

আহত সোমনাথ। ছবি: সমাজমাধ্যমের সৌজন্যে।

ওড়িশার ‘নাইসার’ (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ) থেকে পিএইচডি। ‘নেট’ ও ‘গেট’-ও পাশ করেছেন। ভিন‌্-রাজ্যে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ইন্টারভিউতে বসার আগে, পরিবারের প্রয়োজনে বেছে নেন রাজ্যের স্কুলে শিক্ষকতা। আদালতের নির্দেশে সে চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিন কাটছে প্রতিবাদ-আন্দোলনে। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবনের সামনে পুলিশ লাঠির বাড়ি মারে তাঁকে। পুরুলিয়া ২ ব্লকের ছড়রা উচ্চ বিদ্যালয়ের রসায়নের এই শিক্ষক ঠিক মতো হাঁটতেও পারছেন না। তবে ফের লড়াই নামবেন, অটুট প্রত্যয় তাঁর।

রক্তাক্ত পায়ে হুইল চেয়ারে বসা ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে এখন সল্টলেকের ভাড়াবাড়িতে আছেন সোমনাথ। শুক্রবার ফোনে বলেন, ‘‘পায়ে সেলাই পড়েছে। চিকিৎসক হাঁটতে নিষেধ করেছেন। একটু সুস্থ হলেই আন্দোলনে ফিরব।’’

পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের বারিকবাঁধ পল্লির বাসিন্দা সোমনাথ ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ—দু’টি বিভাগেই পাশ করেন। ২০১৯ সালে পশ্চিম বর্ধমানের বার্নপুরে সুভাষপল্লি বিদ্যানিকেতন স্কুলে নবম-দশম বিভাগে যোগ দেন। পরে সে বছরেই যোগ দেন ছড়রা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ-দ্বাদশ বিভাগে। সোমনাথ জানান, তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে স্নাতকোত্তরের পরে বিএড করেন। তার পরে পাশ করেন ২০১৭ সালের প্রাইমারি ‘টেট’ ও উচ্চ প্রাথমিক ‘টেট’-ও।

আদালতের রায়ে চাকরি হারানোর পরে সব বদলে যায়। সোমনাথের ক্ষোভ, ‘‘বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবনের এক পাশে ছিলাম। হঠাৎ পুলিশ লাঠি চালায়। দুই পা, পিঠ ও কনুইয়ে আঘাত লাগে। ডান পা ফেটে যায়। রক্ত ঝরছিল। সেলাই করাতে হয়েছে।’’ তাঁর সঙ্গী রঘুনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক কৈলাস বাউরি জানান, সোমনাথকে প্রথমে বিধাননগর হাসপাতালে ও পরে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা করানো হয়। তবে এখনও ভাল করে হাঁটতে পারছেন না।

সোমনাথের বাড়িতে রয়েছেন বয়স্ক বাবা-মা, স্ত্রী ও এক ভাই। সোমনাথের স্ত্রী সুদীপ্তার প্রশ্ন, ‘‘নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হলে তার দায় কার? বাড়ি তৈরির জন্য স্বামী ঋণ নিয়েছেন। কী হবে জানি না!’’ সোমনাথের মা শান্তি বলেন, ‘‘ছেলে পরিশ্রম করে চাকরি পেয়েছে। চাকরি বাঁচানোর আন্দোলনে গিয়ে এ ভাবে মার খাবে ভাবিনি!’’

সোমনাথের পাশে দাঁড়িয়েছেন পড়শি গৌতম ঘোষ থেকে সহকারী শিক্ষক কৃত্তিবাস রাজোয়াড় প্রমুখ। ছড়রা স্কুলের এক পড়ুয়ার অভিভাবক চিরঞ্জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যা শিক্ষাগত যোগ্যতা, তাতে সোমনাথ নিশ্চিন্তে কলেজে পড়াতে পারতেন। তাঁকে কি না স্কুলশিক্ষকের চাকরি বাঁচাতে গিয়ে মার খেতে হল!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Recruitment Case protests harassment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy