Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
saraswati puja

ছক ভেঙেই বৃত্ত জুড়ে দিলেন মহিলা পুরোহিত

পৌরোহিত্যে রিতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পৌরোহিত্যে রিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

রঞ্জন পাল
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৩৯
Share: Save:

একটি ছকভাঙা দৃশ্য। যা আসলে সম্পূর্ণ করল একটি বৃত্তকে।

নারী শিক্ষা সমিতি পরিচালিত ঝাড়গ্রাম বিদ্যাসাগর বাণীভবনে মঙ্গলবার নিজে হাতে সরস্বতী পুজো করলেন সংস্থার কর্ত্রী রিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেবীর ঘটস্থাপন, প্রাণ প্রতিষ্ঠা থেকে হোম সবই একা হাতে সামলেছেন তিনি।

সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা ছবি ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’তেও দেখা গিয়েছে পুরোহিত না আসায় কলেজের সরস্বতী পুজো করেছেন মহিলা অধ্যাপক। যিনি মনে করেন, পৌরোহিত্যে সবার সমান অধিকার। সেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঋতাভরী চক্রবর্তী। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর স্ত্রী অবলা বসু প্রতিষ্ঠিত নারী শিক্ষা সমিতির সহ-সম্পাদিকা রিতাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘বৈদিক যুগে নারীরাই ছিলেন যজ্ঞের হোতা। আমার প্রয়াত বাবাও মেয়েদের পুজোর অধিকারের স্বপক্ষে ছিলেন। ছোটবেলায় বাড়িতে আমিই সরস্বতী পুজো করতাম। কিন্তু বড় আয়োজনে এমন মূর্তি পুজো করার অভিজ্ঞতা এই প্রথমবার।’’

ঝাড়গ্রাম বিদ্যাসাগর বাণীভবনে অন্যান্য বছর যিনি (পুরুষ পুরোহিত) সরস্বতী পুজো করতেন, বয়সের ভারে এ বার তিনি পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন। তারপরেই পুজো করার সিদ্ধান্ত নেন রিতা। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েরা বাজার করতে পারে, পুজোর জন্য নৈবেদ্য সাজাতে পারে, আলপনা দিতে পারে, তাহলে পুজো করতে পারবে না কেন? আমাদের মহিলা প্রতিষ্ঠান। তাই ভাবলাম অন্য নতুন কাউকে ডাকব কেন! তাই নিজেই পুজো করেছি।’’

এই ঘটনায় খুশি বিদ্যাসাগর বাণীভবনের সভাপতি তথা ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন পুরপ্রধান শিবেন্দ্রবিজয় (দুর্গেশ) মল্লদেব। তাঁর কথায়, ‘‘এ দিন সংস্থায় গিয়ে রিতাদেবীর পুজো দেখেছি। এই প্রথমবার কোনও মহিলা পৌরোহিত্য করলেন। প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য পূরণের বৃত্তটা বাস্তবিকই আজ সম্পূর্ণ হল।’’ চিল্কিগড় কনকদুর্গা মন্দিরের প্রবীণ পূজারী আতঙ্কভঞ্জন ষড়ঙ্গীও বলছেন, ‘‘মহিলাদের শাস্ত্রীয় পুজো করার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ থাকলেও এখন এ যুগে সে সব আর চলে না। রিতাদেবী শুদ্ধমনে পুজো করে থাকলে অবশ্যই সে পুজো সিদ্ধ।’’

ঝাড়গ্রামের বিদ্যাসাগর বাণীভবনের অধীনে স্কুল, মহিলা শিক্ষক-শিক্ষণ কেন্দ্র, ভোকেশনাল কোর্স ছাড়াও পাঁচটি ইউনিট রয়েছে। নারী শিক্ষা সমিতির কলকাতা ও ঝাড়গ্রাম দু’টি কেন্দ্রের সহ-সম্পাদিকা রিতা ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত। বছর ছাপান্নর ওই মহিলার জন্ম উত্তর ২৪ পরগনার বাগুইহাটির অর্জুনপুরে।

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীতের স্নাতক ও কীর্তনের স্নাতকোত্তর রিতার বড় হয়ে ওঠা কলকাতায়। তিনি জানালেন, পরাধীন দেশে মহিলাদের শিক্ষিত করতে নারী শিক্ষা সমিতি তৈরি করেছিলেন অবলা বসু। ১৯৩৯ সালে ঝাড়গ্রাম রাজ পরিবারের আমন্ত্রণে ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন তিনি। তখনই রাজা অবলার সংস্থার জন্য ২৩ বিঘা জমি দিয়ে বাড়ি ঘর তৈরি করে দেন। সেখানেই তৈরি হয় বিদ্যাসাগর বাণীভবন। ১৯৯৭ সালে আচার্য জগদীশচন্দ্রের সম্পর্কিত নাতি দেবব্রত বসুর সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে নারী শিক্ষা সমিতির কাজকর্মে জড়িয়ে পড়েন রিতা। ২০০৩ সালে ঝাড়গ্রামে আসেন তিনি।

নারী শিক্ষা নিয়ে কাজ করা কোনও প্রতিষ্ঠানের সরস্বতী পুজো যখন সেই প্রতিষ্ঠানের সহ সম্পাদিকা নিজেই করেন, তা তো বৃত্ত সম্পূর্ণ করাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram saraswati puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE