E-Paper

কাজের জন্য বেরিয়ে পাঁচ মাস ধরে নিখোঁজ, হাওড়ার ফ্ল্যাটে আটকে রেখে তরুণীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ

উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা ওই তরুণীকে সঙ্কটজনক অবস্থায় কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাওড়ার বাঁকড়ার বাসিন্দা এক যুবক, তার মা ও বোনের বিরুদ্ধে খড়দহ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন বছর চব্বিশের ওই তরুণী।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৫ ০৬:২২

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

মাথার চুল এবড়োখেবড়ো করে কাটা। সারা মুখে কালশিটে। আঘাতের চোটে দু’টি চোখ ফুলে গিয়ে প্রায় বন্ধ। শীর্ণকায় তরুণীকে দেখে প্রথমে চিনতেই পারেননি মা। শেষে হাতে থাকা উল্কি (ট্যাটু) দেখে বুঝতে পারেন, ওই তরুণী তাঁরই মেয়ে। কাজের জন্য বেরিয়ে গত পাঁচ মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন তরুণী। অভিযোগ, হাওড়ার একটি ফ্ল্যাটে আটকে রেখে অকথ্য অত্যাচারের পাশাপাশি যৌন নির্যাতনও চালানো হয়েছে।

উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা ওই তরুণীকে সঙ্কটজনক অবস্থায় কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাওড়ার বাঁকড়ার বাসিন্দা এক যুবক, তার মা ও বোনের বিরুদ্ধে খড়দহ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন বছর চব্বিশের ওই তরুণী। ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের উপ-নগরপাল (মধ্য) ইন্দ্রবদন ঝা শনিবার বলেন, ‘‘ঘটনাস্থল ডোমজুড় থানা এলাকায়। তাই অভিযোগটি সেখানেপাঠানো হয়েছে।’’

অভিযোগ পাওয়ার পরেই পুলিশবাহিনী বাঁকড়া এলাকায় গিয়ে দেখে, ওই যুবকের ফ্ল্যাট তালাবন্ধ। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’ সূত্রের খবর, বাঁকড়ার ওই যুবকের বিরুদ্ধে ছিনতাই-সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তার মায়ের বিরুদ্ধেও অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে। পাশাপাশি, কাজের প্রলোভন দেখিয়ে কমবয়সি মেয়েদের ফাঁদে ফেলে অসামাজিক কাজ করানোরও অভিযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার হয়ে কাজ করা ওই তরুণীর সঙ্গে গত নভেম্বরে সমাজমাধ্যমে অভিযুক্ত যুবকের পরিচয় হয়। তরুণীর দাবি, ওই যুবক তাঁকে অনেক কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখায় এবং তার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থায় যোগ দিতে বলে। অভিযোগ, সেই মতো গত ৩১ ডিসেম্বর ওই তরুণী বাঁকড়ায় গেলে মোবাইল কেড়ে নিয়ে তাঁকে আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ। তরুণীর দাবি, পানশালায় নর্তকীর কাজ করার জন্য তালিম দেওয়া হবে বলে জানানো হলে তিনি রাজি হননি। তখন ওই যুবকের মা ও বোন তাঁকে বেধড়ক মারধর করে বলেঅভিযোগ তরুণীর।

তরুণীর মায়ের দাবি, বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার কিছু দিন পরে তাঁকে ভিডিয়ো কল করে মেয়ে আটকে থাকার কথা জানান। সে কথা পুলিশকে জানাবেন বললে খুন হয়ে যাওয়ার ভয়ে তা বারণ করেছিলেন তরুণী। মা এ দিন বলেন, ‘‘মেয়ে বলেছিল, কিছু দিন পরে ফিরে আসবে। কিন্তু আর আসেনি। আমরাও ভয়ে কিছু করতে পারিনি। অপেক্ষা করে ছিলাম।’’ তরুণীর দাবি, ওই ফ্ল্যাটে চার দিকে সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। তাই এক বার কোনও মতে বেরিয়ে পালানোর চেষ্টা করলেও তিনি ধরা পড়ে যান।

তরুণীর অভিযোগ, প্রতি দিন তাঁর উপরে দফায় দফায় অত্যাচার চালাত ওই যুবক ও তার মা-বোন। ঠিক মতো খেতে দেওয়া হত না। বাড়ির কাজে সামান্য কোনও ভুল হলেই মারধর করা হত, কখনও বা জোর করে চুল কেটে দেওয়া হত। পুলিশকে অভিযোগে ওই তরুণী জানিয়েছেন, হামানদিস্তা এবং লোহার রড দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করা হত। অনেক বার গোপনাঙ্গেও লোহার রড ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তরুণীর আরও অভিযোগ, কখনও কোদালের হাতল বা কাটারি দিয়েও আঘাত করা হত। চিৎকার করলেই অত্যাচারের মাত্রা বাড়ত। গত ৫ জুন সকালে ওই যুবকের মা কাটারি দিয়ে তাঁর গোপনাঙ্গে আঘাত করে।

তরুণীর দাবি, শুক্রবার ভোরে তিনি দেখেন, ঘরের দরজা খোলা। ওই যুবক ও তার বাড়ির লোকেরা ঘুমোচ্ছে। সেই সুযোগে তিনি প্রথমে সিসি ক্যামেরার সুইচ বন্ধ করেন। পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা, ওই যুবকের এক আত্মীয় তাঁকে ১০০ টাকা দেন পালানোর জন্য। হাওড়া থেকে বাস ধরে বাড়িতে চলে আসেন তরুণী। আত্মীয়রা স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে আঘাত পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা তরুণীকে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে পাঠান।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sexual Harassment woman harassment police investigation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy