E-Paper

নাচ-গান-সাক্ষাৎ: সায়নীদের কড়া ধমক দিলেন অভিষেক

তৃণমূল সূত্র আজ মনে করিয়ে দিচ্ছে, নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রসিকতা করে একটা কথা বলতেন যে, ‘দিল্লির জল পেটে পড়লে মানসিকতা বদলে যায়’। তা যেন এ ক্ষেত্রে না হয়, সে জন্যই সাংসদদের সতর্ক করে দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:১১
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

আজ সকালে সংসদীয় দলের সঙ্গে বৈঠকে বসে, রীতিবিরুদ্ধ আচরণ করার অভিযোগ ওঠা সাংসদদের খুবই কড়া ভাষায় সতর্ক করলেন তৃণমূলের লোকসভার নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, বৈঠকের ভিতরে তিনি যাদবপুরের সাংসদ সায়নী ঘোষ-সহ আরও দু’-এক জন সাংসদকে উদ্দেশ করে বলেন, দিল্লিতে সংসদীয় অধিবেশনে হাজির থাকতে হবে যতটা সম্ভব, তার পরে বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নেওয়াই কাম্য। নিজের দলের সতীর্থদের কোনও অনুষ্ঠান থাকলে অবশ্যই যেতে হবে, কিন্তু অন্য কোনও দলের ডাকা নৈশ উৎসবে দলের অনুমতি ছাড়া যাওয়া চলবে না। সূত্রের বক্তব্য, তিনি এটাও বলেন যে, সংসদ অত্যন্ত জরুরি কাজের জায়গা। এখানে অন্য দলের নেতা বা মন্ত্রীদের সঙ্গে জনসংযোগ করাটা জরুরি নয় বা বিজেপি সাংসদের পার্টিতে গিয়ে নাচগান করাটাও ঠিক নয়। অভিষেক মনে করিয়ে দেন, যদি কেউ ভেবে থাকেন যে, তাঁর জনপ্রিয়তার জন্যই সবাই ডাকাডাকি করছে, তা হলে তিনি ভুল ভাববেন। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ বলেই তাঁকে সর্বত্র ডাকা হচ্ছে। তা যদি না হত, তা হলে দু’বছর আগেও দিল্লির বিভিন্ন বৈভবশালী পার্টিতে তাঁরা ডাক পেতেন।

পরে সাংবাদিকদের অভিষেক বলেন, “কোনও মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন সাংসদদের থাকতেই পারে, তাঁর নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্রের জন্য। কিন্তু সেই প্রয়োজন তো সব সাংসদেরই আসতে পারে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। আবার অনেক সমস্যা রয়েছে, যা রাজ্য সরকার নিজেরাই সরাসরি কথা বলে সমাধান করে নিতে পারে। অতীতেও এমনটা হয়ছে। তাই দলকে না জানিয়ে সরাসরি মন্ত্রীর কাছে সময় চাওয়া বা দেখা করা চলবে না। লোকসভা বা রাজ্যসভার সাংসদরা তাঁদের সংসদীয় নেতার কাছে প্রয়োজন জানাবেন। সেই মতো সময় স্থির হবে। এই অনুশাসন এবং শৃঙ্খলায় অনেক ভাল ভাবে কাজ হয়।” এই বিষয়টি নিয়ে সাংসদদের বৈঠকেও সরব হয়েছেন অভিষেক।

তৃণমূল সূত্র আজ মনে করিয়ে দিচ্ছে, নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রসিকতা করে একটা কথা বলতেন যে, ‘দিল্লির জল পেটে পড়লে মানসিকতা বদলে যায়’। তা যেন এ ক্ষেত্রে না হয়, সে জন্যই সাংসদদের সতর্ক করে দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সাংসদরা এখানে ‘সোশাল বাটারফ্লাই’ হতে আসেননি— এ কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

প্রশ্ন উঠছে, কিছুটা অভিনব ভাবেই কেন অভিষেককে এতগুলো কথা বলতে হল তাঁর দলীয় সাংসদদের? সম্প্রতি বিজেপি সাংসদ তথা শিল্পপতি নবীন জিন্দলের মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে আয়োজিত নাচের অনুষ্ঠানের মহড়ায় মহুয়া মৈত্রের ছবি প্রকাশ্যে আসার পরে বিতর্ক তৈরি হয়, যা তৃণমূল নেতৃত্ব ভাল ভাবে নেননি। প্রশ্ন ওঠে, মহুয়া মৈত্র, কঙ্গনা রানাউতের সঙ্গে নাচছেন, যিনি পঞ্জাবের কৃষকদের সন্ত্রাসবাদী বলেছিলেন! ধনকুবের বিজেপি সাংসদ নবীন জিন্দলের মেয়ের জন্য নাচের রিহার্সালে যোগ দেওয়াকে ‘দ্বিচারিতা’ হিসাবে তুলে ধরা হয়।

পাশাপাশি তৃণমূলের লোকসভার সাংসদদের একাংশের মধ্যে সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে পারস্পরিক ক্ষোভ, অভিযোগ, বাদানুবাদ। অধিবেশন চলাকালীনও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। তৃণমূলের সংসদীয় অফিসেও সেই ক্ষোভের নিদর্শন দেখা গিয়েছে। সূত্রের খবর, হুগলির সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্রের দাবি পূরণের জন্য রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের কাছে দেখা করার সময় চান। দলকে না জানিয়ে নিজে থেকেই রেলমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক কাকলি ঘোষদস্তিদার তাঁর ক্ষোভ সরাসরি জানিয়েছিলেন রচনাকে। এর পর রচনার পাশাপাশি বেশ কিছু নতুন সাংসদ কাকলির ব্যবহারে পাল্টা হতাশা প্রকাশ করেন নিজেদের মধ্যেই। লোকসভায় তৃণমূলের উপনেতা শতাব্দী রায় অধিবেশন কক্ষেই এই নতুন সাংসদদের কাছে বিষয়টি নিয়ে মিটমাট করে নেওয়ার চেষ্টা করলে, যাদবপুরের সায়নী ঘোষ প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করেন শতাব্দীর কাছে এবং তাঁর মাধ্যমে কাকলিকেও। সূত্রের খবর, তিনি নারদ কাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে জানিয়েছেন, কার কোন দুর্নীতির জন্য দলের মুখ পুড়েছে, সব তিনি জানেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Abhishek Banerjee Lok Sabha parliament TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy