Advertisement
E-Paper

বিরোধী চাপের মাঝেই ২১শে অভিষেক-মঞ্চ

প্রতি বছর তৃণমূলের রাজনৈতিক বার্তা ঘোষণার বৃহত্তম মঞ্চ এটাই। এ বারও ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে প্রস্তুত দশাসই মঞ্চ। যে মঞ্চ থেকে ২১ জুলাইয়ের বার্তা দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে আগামী বিধানসভা ভোটের আগে এটাই শেষ ২১ জুলাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০৩:১৫
জোরকদমে চলছে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি। ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে। রবিবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

জোরকদমে চলছে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি। ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে। রবিবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

প্রতি বছর তৃণমূলের রাজনৈতিক বার্তা ঘোষণার বৃহত্তম মঞ্চ এটাই। এ বারও ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে প্রস্তুত দশাসই মঞ্চ। যে মঞ্চ থেকে ২১ জুলাইয়ের বার্তা দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে আগামী বিধানসভা ভোটের আগে এটাই শেষ ২১ জুলাই। তাই শাসক দলের কাছে তার গুরুত্বও বেশি।

দলের কর্মী-সমর্থকদের জন্য বিধানসভা ভোটের লক্ষ্য ও কর্তব্য বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশিই এ বার ২১শের মঞ্চ থেকেই অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেরে ফেলতে চলেছে তৃণমূল। দল হিসাবে তৃণমূলের বৃহত্তম মঞ্চ থেকেই সংগঠনের মধ্যে এ বার অভিষেক-বার্তা ঘোষণা হতে চলেছে যুবরাজের! তৃণমূল নেত্রী মমতা মুখ্য বক্তা হলেও এ বারের ২১শের সমাবেশের সভাপতি তাঁর ভাইপো তথা তরুণ সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছর লোকসভা ভোটে জয়ী হয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ ঘটেছে অভিষেকের। তার পরে গত এক বছরে সংগঠনের রাশ তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চালিয়ে গিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। দলের অন্দরে মুকুল রায় যত কোণঠাসা হয়েছেন, তত গুরুত্ব বেড়েছে অভিষেকের। এ বার মুকুলের অনুপস্থিতিতেই ২১শের মঞ্চ থেকে মমতার প্রধান সেনাপতি হয়ে ওঠার ব্যাটন আনুষ্ঠানিক ভাবে হাতে নিতে চলেছেন অভিষেক। এবং তা ঘটতে চলেছে অভিষেকের সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে বিরোধীদের হইচইয়ের মধ্যেই!

রাজ্য জুড়ে নানা জেলায় এ বার চরকি-পাক খেয়েছেন অভিষেক। গত ২২ জুন থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় এক মাস ১৬টি জেলায় প্রস্তুতি সভা করতে প্রায় ৪২৩০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছেন মমতার ভাইপো। ঘুরেছেন দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলায়। উত্তরবঙ্গে দুই দিনাজপুর বা মালদহের মতো জেলায় গিয়ে সভা করেছেন। এই জেলা সফরের মূল উদ্দেশ্যই ছিল ২১শের সমাবেশকে উপলক্ষ করে জেলায় জেলায় দলের নেতৃত্বের সঙ্গে যুব সভাপতির সমীকরণ মসৃণ করা। কিন্তু এই লাগাতার সফরের মাঝেই অভিষেককে তাড়া করেছে বিতর্কও। কয়েকটি সভায় তাঁর মন্তব্যের জেরে এমন বিতর্ক বেধেছে যে, পরে আসরে নামতে হয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। দু’দিন আগেই যেমন অভিষেক বলে ফেলেছিলেন, জঙ্গলমহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার হত্যা করেছিল মাওবাদী নেতা কিষেনজি’কে। যার জেরে অভিষেককে ‘ছোট ছেলে’ বলে কটাক্ষ করে মুকুল মন্তব্য করেছেন, কোন কথা কী ভাবে বলতে হয়, রাজনীতিকদের সেই জ্ঞান থাকা উচিত! তৃণমূলে মুকুলের পতনের মূলে অভিষেকের উত্থানই। তাই সুযোগ পেয়ে মুকুলও যুবরাজকে বেঁধার সুযোগ হাতছাড়া করেননি।

বস্তুত, শাসক এবং বিরোধী দুই শিবিরের অনেকেই বুঝছেন, কিষেনজি প্রসঙ্গে অভিষেক যা বলে ফেলেছেন, তা নেহাতই মুখ ফস্কে। ঘনিষ্ঠ মহলে অভিষেক নিজেও তা-ই বলছেন। কিন্তু বিষয়টি এমনই স্পর্শকাতর যে, মমতার সরকারের উপরে চাপ বাড়াতে ওই মন্তব্যকে অস্ত্র করছে বিরোধীরা। সিপিএম যেমন কিষেনজি-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতার জবাব দাবি করেছে। রবিবার দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘এটা পিসি-ভাইপোর ঘরোয়া ব্যাপার নয়! কিষেনজির মৃত্যুর পরে মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছিলেন আর এখন তাঁর সাংসদ ভাইপো যা বলছেন— দু’টো পাশাপাশি রাখলেই বোঝা যাচ্ছে, এক জন ঠিক বলছেন, এক জন ভুল। কে মিথ্যাবাদী, সেটা জানা দরকার! মুখ্যমন্ত্রীই জানান, তাঁর সরকারের বক্তব্য কী।’’ বিতর্কের মুখে তৃণমূল নেতারা পাল্টা প্রশ্ন তুলছিলেন, কিষেনজির অপরাধ কি বিরোধীরা ভুলে গিয়েছে? সেলিম এ দিন জবাব দিয়েছেন, ‘‘বাংলার মানুষের কাছে কিষেনজি অবশ্যই অপরাধী। জঙ্গলমহলে তিনি খুনখারাবি করেছেন, সন্ত্রাস চালিয়েছেন। সেই সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীকে বাংলার মসনদে বসানোর জন্য সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন! কিন্তু অপরাধী হলেই কি কাউকে খুন করতে পারে সরকার? তার বিচারের প্রক্রিয়া আছে।’’ মাওবাদী নেতা আজাদ ‘সংঘর্ষে’ নিহত হওয়ার পরে লালগড়ে দাঁড়িয়ে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা যে ‘ঠান্ডা মাথায় খুনে’র কথা বলেছিলেন, মনে করিয়ে দিয়েছেন সেলিম।

তৃণমূল নেতৃত্বও বুঝতে পারছেন, তরুণ নেতার ‘অতি উৎসাহে’র জন্য কিছু অস্বস্তি তাঁদের হচ্ছে। তবু দলের এক শীর্ষ নেতা বলছেন, ‘‘বক্তব্যে পরিণত হতে অভিষেকের আরও একটু সময় লাগবে। কিন্তু এটাও ঠিক, দলের জন্য এত পরিশ্রম করতে এখন চট করে কেউ রাজি হয় না! যেটা এ বার ২১শের আগে অভিষেক করে দেখিয়েছে।’’ ধর্মতলায় বিপুল ভিড় টেনে অভিষেকের এই পরিশ্রমের ফসলই ঘরে তুলতে চাইছে তৃণমূল। প্রতিটি জেলায় গিয়ে এ বার যুবরাজ বার্তা দিয়েছেন বিধানসভা ভোটের আগে বিপুল মানুষকে ধর্মতলায় জড়ো করে বুঝিয়ে দিতে হবে, বাংলার জনতা মমতার সঙ্গেই রয়েছে। প্রতি বারই ২১শে কলকাতার রাজপথ উপচে পড়ে। কিন্তু এ বার অভিষেকের জন্যই সেই ভিড় বাড়ানোর তাগিদ আরও বেশি। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘সব বিতর্কের জবাব মানুষই দেবেন!’’

Abhishek Banerjee Trinamool Congress BJP dharmatala mamata banerjee 21 july
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy