Advertisement
E-Paper

বন্ধুত্ব থেকে বিনোদন, ভর করেছে ‘ভার্চুয়াল’

নেট দুনিয়ায় পারস্পরিক ব্যবহার সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র বলছে, বিশ্ব জু়ড়ে বিবাহ-বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ হয়ে উঠছে সোশ্যাল মিডিয়া। কারণ, সঙ্গীর তুলনায় ভার্চুয়াল বন্ধুরাই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। যার জেরে বাড়ছে সন্দেহ। এ সবই সম্পর্কে জটিলতা বাড়াচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২১
মশগুল: পাশাপাশি বসেও মন স্মার্টফোনে। বৃহস্পতিবার, পার্ক স্ট্রিটে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

মশগুল: পাশাপাশি বসেও মন স্মার্টফোনে। বৃহস্পতিবার, পার্ক স্ট্রিটে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

বাড়িতে রোজ রান্না হওয়া কিছু পদ। কিন্তু খেতে বসার আগে তার ছবিও দেওয়া চাই সোশ্যাল মিডিয়ায়। বাড়িতে অতিথি এসেছেন। তাঁর সঙ্গে সময় কাটানো, কথা বলার আগেই তোলা চাই সেলফি। এবং যত ক্ষণ তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট না করা হচ্ছে, তত ক্ষণ যেন শান্তি নেই। কথা বলতে বলতে ক্রমাগত স্মার্টফোনে খুটখুট তো রয়েছেই। রেস্তোরাঁয় দু’জনে খেতে গিয়ে বা কোথাও বেড়াতে গিয়েও প্রাধান্য পায় ছবি তুলে টাইমলাইনে পোস্ট করা। আর তাতে ‘লাইক’ কম পড়লে অনেকেই ডুবে যান অবসাদে। নিজের চারপাশের মানুষগুলোর চেয়ে এ ভাবেই ভার্চুয়াল জগৎ ক্রমশ গ্রাস করছে মানুষের ব্যক্তিগত পরিসরকে। ভাঙন ধরছে সম্পর্কে। চেতলার গৃহবধূ খুনের ঘটনাতেও সোশ্যাল মিডিয়ার আগ্রাসনকেই দায়ী করছেন অনেকে।

কিছু দিন আগে এই শহরেই ‘পাত্রপাত্রী’ সম্পর্কিত কলামে দেখা গিয়েছে, ‘ফেসবুকে আসক্ত বৌ চাই না’। চেতলার খুনের তদন্তে নেমেও পুলিশ জানতে পারছে, এর পিছনে ফেসবুক-আসক্তির বড়সড় ভূমিকা রয়েছে। দিনের বেশির ভাগ সময়ে ভার্চুয়াল জগতে বুঁদ হয়ে থাকতেন স্ত্রী। পুলিশের ধারণা, সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ত্রীর জনপ্রিয়তা সহ্য করতে পারছিলেন না স্বামী। দু’জনের খিটিমিটি লেগেই থাকত। যার চরম পরিণতি দেখা গিয়েছে খুনে।

মনোবিদ বা সমাজতত্ত্বের শিক্ষকদের পর্যবেক্ষণ, সোশ্যাল মিডিয়া বা ভার্চুয়াল পরিসর বাস্তবের সম্পর্কগুলোর উপরেও ছাপ ফেলছে। আর পাঁচ জন কী করছে, সব সময়ে তা দেখতে দেখতে নিজের জীবন নিয়ে অসন্তোষ জন্মাচ্ছে। ভার্চুয়াল বন্ধুদের নিয়ে মেতে থাকার জেরে চারপাশের মানুষদের মধ্যে যোগাযোগহীনতা তৈরি হচ্ছে। নেট দুনিয়ায় পারস্পরিক ব্যবহার সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র বলছে, বিশ্ব জু়ড়ে বিবাহ-বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ হয়ে উঠছে সোশ্যাল মিডিয়া। কারণ, সঙ্গীর তুলনায় ভার্চুয়াল বন্ধুরাই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। যার জেরে বাড়ছে সন্দেহ। এ সবই সম্পর্কে জটিলতা বাড়াচ্ছে।

মনোরোগের চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ার বিরোধী নন। বরং সোশ্যাল মিডিয়া অনেকের জীবনেই নতুন কিছু জানার বা বোঝার জানলা খুলে দিচ্ছে বলে তাঁর অভিমত। তাঁর মতে, ‘‘একটু অন্য ভাবে দেখলে সব সময়ে স্বামী-স্ত্রী বা দম্পতিরা দু’জন দু’জনকে নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও সমস্যা তৈরি হতে পারে। সম্পর্কের মধ্যেও নিঃশ্বাস ফেলার ‘স্পেস’ দরকার হয়। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়াই জীবনের অগ্রাধিকার হয়ে উঠলে বিপদ।’’ জয়রঞ্জনবাবু মনে করেন, আজকের দুনিয়ায় সোশ্যাল মিডিয়া নিয়েই বাঁচতে শিখতে হবে। তাকে কে, কতটা গুরুত্ব দেবেন, সেটাই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।

আবার সোশ্যাল মিডিয়াই অনেকের ভাঙাচোরা জীবনে আনন্দের খড়কুটো। মনোরোগ চিকিৎসক সঞ্জয় গর্গের পর্যবেক্ষণ, ‘‘অনেকেই অফিস কিংবা পরিবারে বেশি গুরুত্ব পান না। তাঁরা অনেক সময়ে সেই গুরুত্ব ভার্চুয়াল জগতে খোঁজেন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া-নির্ভরতা নেশার মতো হয়ে উঠলে কিন্তু বিপদ।’’

তবে ফেসবুক কিংবা হোয়াট্সঅ্যাপের সমস্যাকে নিছক ‘ভার্চুয়াল’ বলতে নারাজ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ কুণ্ডু। তাঁর মতে, পরিবারকে সময় দেওয়ার বদলে কেউ ফেসবুকে বুঁদ হয়ে থাকলে বুঝতে হবে সমস্যা অনেক গভীর। কেন সে পরিবারের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে, সেটা বিচার করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্ব বাড়ছে। প্রতিবেশীর সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও ভার্চুয়াল বন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত কথা হয়। অভিজিৎবাবুর কথায়, ‘‘কেউ ভার্চুয়ালের টানে বাস্তবকে ভুলতে বসলে সেটা কেন ঘটছে, তা তলিয়ে ভাবতে হবে! কাদের জীবনে এমন ঘটছে, তা খুঁটিয়ে না দেখলে সমস্যা বাড়বে।’’

Facebook Social Media Virtual World Relationship সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy