স্বাস্থ্য ভবনের সামনে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। ছবি: পিটিআই।
নবান্নে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে বৈঠকের নির্যাস লিখিত আকারে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পাঠালেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। জুনিয়র ডাক্তারদের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোরে এই নির্যাস- সম্বলিত একটি মেল মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। নবান্নের উত্তর পাওয়ার অপেক্ষা করছেন ওই ডাক্তারেরা।
বুধবার সন্ধ্যায় মুখ্যসচিবের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে বিষয়গুলি উঠে এসেছে, তার নির্যাসের একটি খসড়া লিখিত আকারে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, চিকিৎসকদের পাঠানো মেলে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ১৫টি বিষয় রয়েছে। বুধবারের বৈঠকে এই ১৫টি বিষয়ে দু’পক্ষ সহমত হয়েছে বলে জুনিয়র ডাক্তারদের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে।
নিরাপত্তা সংক্রান্ত পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে হুমকির সংস্কৃতি বন্ধ করা। রাজ্যের মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের যে সমস্ত সদস্য হুমকির সংস্কৃতিতে জড়িত বলে অভিযোগ, তাঁদের তদন্তের আওতায় আনার জন্য কমিটি গঠন। তা ছাড়া হাসপাতালের সব বিভাগে পর্যাপ্ত মহিলা পুলিশ রাখা, মেয়েদের জন্য আলাদা শৌচাগার, বিশ্রামকক্ষ রাখার মতো বিষয়ও ওই খসড়ায় রাখা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, বুধবারের আলোচনার পর তাঁদের নিরাপত্তার জন্য সরকার যে পদক্ষেপগুলি করবে বলে জানিয়েছে, তার সম্ভাব্য রূপরেখা অনেকটা এমনই হতে পারে।
• কলেজের স্নাতক স্তরের পড়ুয়া এবং রেসিডেন্ট ডাক্তারদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন।
• কলেজগুলিতে রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন গঠন করতে এবং ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি বেছে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করা।
• কলেজ স্তরের টাস্ক ফোর্সে জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, পড়ুয়া এবং নার্সিং স্টাফদের প্রতিনিধি রাখা।
• হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে ‘প্যানিক কল বাটন’ এবং অ্যালার্মের ব্যবস্থা রাখা।
• সরকারি হাসপাতালে কোথায় কখন কত শয্যা ফাঁকা রয়েছে, রোগীদের স্বার্থে তা ডিসপ্লে বোর্ডের মাধ্যমে দেখানো।
• শূন্যপদে স্বচ্ছ ভাবে ডাক্তার, নার্স এবং অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়োগ করা ইত্যাদি।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার আরজি কর-মামলার শুনানিতে জুনিয়র ডাক্তারদের আর্জি রাজ্য সরকারকে শুনতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তা ছাড়াও প্রতিটি হাসপাতালে একটি নজরদার কমিটি গঠন, যৌন নির্যাতনের অভিযোগ জানানোর জন্য অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত।
আরজি কর-কাণ্ডের আবহে রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের নিরাপত্তা বিষয়ক একাধিক দাবিদাওয়ার কথা জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারদের। এই বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়ে বুধবার সকালেই মেল করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। দুপুরে মেল করে মুখ্যসচিব জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশে বলেন, “বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের নিরাপত্তা বিষয়ক আপনাদের যে দাবিদাওয়া রয়েছে, তা বিবেচনা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে টাস্ক ফোর্স গঠন করেছেন। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, দক্ষিণবঙ্গের অনেক জেলায় এই মুহূর্তে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা আবার আপনাদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। আমি এবং টাস্ক ফোর্সের বাকি সদস্যেরা আপনাদের ৩০ জন প্রতিনিধির সঙ্গে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নবান্নের সভাঘরে বৈঠকে বসব। আপনাদের ৬টা ১৫ মিনিটের মধ্যে নবান্নে পৌঁছে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে।’’
বুধবার মুখ্যসচিবের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের দীর্ঘ বৈঠকের পরেও সমাধানসূত্র মেলেনি। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর নবান্ন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে অনিকেত মাহাতো বলেন, “আন্দোলনের ৪০ দিনের মাথায় এসে স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণ ও বাকি দুই দাবিতে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক ছিল আমাদের। হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তা, থ্রেট কালচার, ছাত্র সংসদ নির্বাচন, কলেজে কলেজে টাস্ক ফোর্স গঠন— এই সব দাবি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কার্যবিবরণী নিয়ে মুখ্যসচিবের সঙ্গে কিছু জায়গায় ঐকমত্য তৈরি হয়নি। বৈঠকের ‘মিনিট্স’ দেননি মুখ্যসচিব, শুধু মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আমাদের সব দাবি ফের খসড়া আকারে বৃহস্পতিবার ইমেল মারফত পাঠাতে বলেছেন। আমরা কাজে ফিরতে চাই। কিন্তু কিছু বিষয়ে সমাধানসূত্র বেরোয়নি। যত ক্ষণ না দাবি পূরণ হচ্ছে, আমরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy