বিধানসভা ভোটে বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে কি তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে দেখা যাবে অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়কে? সোমবার শহিদ দিবসের মঞ্চে টালিগঞ্জের কলাকুশলীদের সঙ্গে প্রথম সারিতে বসেছিলেন এই অভিনেত্রী। সমাবেশে বার বার শ্রাবন্তীর নাম ঘুরেফিরে এসেছে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। সমাবেশ শেষ হতে না হতেই তৃণমূলের অন্দরে এই মর্মে আলোচনা শুরু হয়েছে যে, পার্থের আসনটি ধরে রাখতে মুখ্যমন্ত্রী ‘সেলিব্রিটি তাস’ ফেলতে পারেন ভোটের ময়দানে।
তৃণমূলের অন্দরে এই মর্মে জল্পনা শুরু হয়েছে যে, পার্থ গ্রেফতার হওয়ায় শাসকদলের ভাবমূর্তি ক্ষতি মমতা ঢেকে দিতে চান শ্রাবন্তীর ‘গ্ল্যামার’ দিয়ে। উল্লেখ্য, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শ্রাবন্তী বিজেপি প্রার্থী হিসাবে পার্থের বিরুদ্ধেই লড়েছিলেন। সেই নির্বাচনে ৫০ হাজারেরও বেশি ব্যবধানে হেরে নিজেকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। পরাজয়ের পরে বিজেপির সঙ্গে কোনও যোগাযোগও রাখেননি। তার পরে গত সোমবার তাঁকে দেখা গেল তৃণমূলের শহিদ দিবসের মঞ্চে প্রথম সারিতে। যখন আরও একটি বিধানসভা ভোট দরজায় কড়া নাড়ছে।
প্রসঙ্গত, শ্রাবন্তী বেহালা পশ্চিম বিধানসভারই অন্তর্গত পর্ণশ্রী এলাকার আদি বাসিন্দা। তাঁর মা-বাবা বেহালার বাড়িতেই থাকেন। দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, শ্রাবন্তীকে তৃণমূলের মঞ্চে দেখতে পাওয়ার পরেই দলের বেহালার নেতারা তাঁর বেহালার বাড়ির বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছেন। তবে এখনই এই বিষয়ে কেউ প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বেহালা পশ্চিমের এক যুবনেতার কথায়, ‘‘২০২১ সালে দল শ্রাবন্তীর বিরুদ্ধে পার্থদাকে জয়ী করতে আমাদের নির্দেশ দিয়েছিল। আমরা সেটা সাফল্যের সঙ্গে করেছিলাম। এখন যদি তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে শ্রাবন্তীকে বিধানসভায় পাঠানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়, সেই নির্দেশও আমাদের মেনে নিতে হবে।’’
আরও পড়ুন:
ঘটনাচক্রে, ২০০১ সালে পার্থের বেহালা পশ্চিম বিধানসভায় প্রার্থী হওয়ার ঘটনাটিও ছিল নাটকীয়। ‘‘এবার নয় নেভার’ স্লোগান দিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে ‘মহাজোট’ গড়ে সেই নির্বাচনে লড়েছিলেন মমতা। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, প্রাক্তন ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে (বর্তমানে হাওড়ার তৃণমূল সাংসদ) বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তিনি রাজি না হওয়ায় বহুজাতিক সংস্থার চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে ফিরে আসা পার্থকে প্রার্থী করেন তৃণমূল নেত্রী। ১০ বছরের বিধায়ক সিপিএমের নির্মল মুখোপাধ্যায়কে ১৯ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়ে প্রথম বার বিধায়ক হন পার্থ। পর পর পাঁচ বার বেহালা পশ্চিম থেকে বিধায়ক হয়ে কখনও বিরোধী দলনেতা আবার কখনও রাজ্যের শিল্প বা শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন তৃণমূলের তৎকালীন মহাসচিব। কিন্তু ২০২২ সালের ২২ জুলাই গভীর রাতে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থকে তাঁর নাকতলার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। সেই থেকে তিনি কারাবন্দি। যদিও আপাতত অসুস্থতার কারণে বাইপাসের ধারে এক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি।
গ্রেফতারির পর ২০২২ সালে দল থেকে নিলম্বিত করা হয়েছিল পার্থকে। ফলে তাঁর বেহালা পশ্চিমে প্রার্থী হওয়ার আর প্রশ্ন নেই। তাঁর বদলি হিসেবে অভিনেত্রী শ্রাবন্তী বেহালা পশ্চিমে প্রার্থী হলে তা একেবারে অসম্ভব হবে না বলেই মনে করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
তবে পার্থের জেলযাত্রার পর অনেক তৃণমূল নেতাই বেহালা পশ্চিমে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। দলের অন্দরে যে যাঁর মতো করে সে কথা জানানও দিচ্ছেন। সম্প্রতি বেহালা পশ্চিমের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যাতায়াত শুরু করেছেন কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। নাট্যব্যক্তিত্ব তথা প্রাক্তন সাংসদ অর্পিতা ঘোষের নামও রয়েছে তালিকায়। তিনি বেহালা পূর্বের ১২১ নম্বর ওয়ার্ডের বামাচরণ রায় রোডের বাসিন্দা। রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা (সদর) তৃণমূলের সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তীও বেহালা পশ্চিমের টিকিটের দৌড়ে রয়েছেন। রয়েছেন বেহালা পশ্চিমের আরও দুই নেতা অঞ্জন দাস এবং বর্তমান মেয়র পারিষদ (রাস্তা) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। ১১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ (নিকাশি) প্রবীণ তারক সিংহকেও প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে রেখেছেন কেউ কেউ। বেহালার নেতৃত্বের একাংশ আবার মনে করছেন, বেহালা পশ্চিমের প্রার্থী হিসেবে ফিরতে পারেন প্রাক্তন মেয়র তথা প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। উত্তর ২৪ পরগনার তিন তৃণমূল নেতাও বেহালা পশ্চিমের টিকিটের দিকে নজর রাখছেন। আবার তৃণমূলের এক নেতা-দম্পতি চান, তাঁদের পুত্রকে বেহালা পশ্চিমে প্রার্থী করুক দল।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মমতাই। তবে অনেকের মতে, দলের অন্দরে ওই আসন নিয়ে যে পরিমাণ দৌড়ঝাঁপ চলছে, তাতে শ্রাবন্তীকে প্রার্থী করলে দলের কারও কিছু বলার থাকবে না। উল্টে সকলকেই শ্রাবন্তীকে জেতানোর জন্য ময়দানে নামিয়ে দেওয়া যাবে।