E-Paper

করমণ্ডল-দুর্ঘটনার পরে বাড়তি সতর্কতা জারি পূর্ব রেলেও

দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রেল বোর্ড সারা দেশে রিলে রুমের নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি সিগন্যালিং ব্যবস্থার নিয়মিত পরীক্ষা, ট্রেন চলাচলের সঙ্গে যুক্ত সেকশন কন্ট্রোলার উপরে জোর দিয়েছে।

ফিরোজ ইসলাম 

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২৩ ০৭:৫০
An image of Coromandel Express Accident

করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনার দৃশ্য। —ফাইল চিত্র।

করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনা যেন রেল প্রশাসনের শিরদাঁড়া দিয়ে আশঙ্কার হিমেল স্রোত বইয়ে দিয়েছে। ঘরের কাছে, পড়শি দক্ষিণ-পূর্ব রেলের দুর্ঘটনা দেখে পূর্ব রেলেও তড়িঘড়ি বইতে শুরু করেছে সতর্কতার হাওয়া। ট্রেনচালক থেকে স্টেশন মাস্টার, সেকশন কন্ট্রোলার থেকে সেকশনের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার-সহ সব ধরনের ‘ফিল্ড স্টাফ’দের আলাদা করে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিতে মাঠে নেমেছেন শীর্ষ আধিকারিকেরা।

করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রেল বোর্ড সারা দেশে রিলে রুমের নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি সিগন্যালিং ব্যবস্থার নিয়মিত পরীক্ষা, ট্রেন চলাচলের সঙ্গে যুক্ত সেকশন কন্ট্রোলার এবং ট্রেন ম্যানেজারদের (গার্ড) সচেতন করার উপরে জোর দিয়েছে। সেই মতো ওড়িশার দুর্ঘটনার পরে যে কোনও ধরনের ‘শর্টকার্ট’ এড়িয়ে, বিধি মেনে কাজ করার উপরে জোর দিচ্ছেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যেই রিলে রুমের নিরাপত্তা বাড়াতে ডানকুনি জংশন সংলগ্ন রিলে রুমে বসানো হয়েছে ডিজিটাল লক (দেশে প্রথম)। এর ফলে ওই রিলে রুমের দরজা নির্দিষ্ট কয়েক জন ছাড়া আর কেউ খুলতে পারবেন না। কে, কখন সেই দরজা খুলছেন, তা-ও ধরা থাকবে সার্ভারে। মোবাইলের অ্যাপ নিয়ন্ত্রিত এই ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট ওটিপি দিয়ে খুলবে দরজা। কে কখন দরজা খুলছেন, তার বার্তা এসএমএস মারফত পৌঁছবে অন্যদের কাছে। ধাপে ধাপে এই ব্যবস্থা অন্য সব গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের রিলে রুমেও কার্যকর করা হবে বলে রেল সূত্রের খবর।

পূর্ব রেলে মূলত যাত্রী পরিবহনই করা হয়ে থাকে। হাওড়া, শিয়ালদহের মতো ডিভিশন মিলে দৈনিক প্রায় ১৩০০টি লোকাল ট্রেন চলে। সঙ্গে রয়েছে কয়েকশো দূরপাল্লার এক্সপ্রেস ট্রেন। শহরতলির ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে ২৭ লক্ষের কাছাকাছি। ফলে যাত্রী-নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই ট্রেন চলাচল ও রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় রাখার পাশাপাশি, তাঁদের কাজের সময়ে বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ব্যস্ততম শিয়ালদহ ডিভিশনে ব্যারাকপুর, রানাঘাট-কৃষ্ণনগর, বনগাঁ-হাসনাবাদ শাখা ছাড়াও রয়েছে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখা। চারটি শাখার সর্বত্রই লাইনে ট্রেনের সংখ্যা অত্যধিক বেশি। ফলে ট্রেন পারাপার করানোর সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকতে হয় কর্মীদের। কোথায় কত গতিতে ট্রেন চালাতে হবে, তার বিস্তারিত নির্দেশ ছাড়াও পথের যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য থাকে ট্রেনের গার্ড তথা ম্যানেজারের কাছে। ফলে চালককে ঠিক পথে পরিচালিত করা ছাড়াও যে কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রেনের গার্ডের ভূমিকা নেহাত কম নয়। তাই ট্রেনের চালক ও গার্ড যাতে তাড়াহুড়ো না করে বিচক্ষণতার সঙ্গে সর্বদা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তা দেখতে বলেছে রেল বোর্ড। সেই নির্দেশ মেনে সব মহলের সকলকে সজাগ থাকার বার্তা দিয়েছেন শীর্ষ আধিকারিকেরা।

গত ১১ জুন হাওড়ায় ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার মণীশ জৈন ফিল্ড স্টাফদের সঙ্গে বৈঠকে তাঁদের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। যাত্রী-নিরাপত্তার প্রশ্নে কেউ যাতে শিথিলতা না দেখান, সে কথাও বলেছেন তিনি। কাজের সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে যাতে কোনও ভুল না হয়, সে কথাও বলা হচ্ছে। কর্মীদের নিয়ে একই রকম সভা করেছেন পূর্ব রেলের প্রিন্সিপ্যাল চিফ অপারেশন্স ম্যানেজার প্রভাস দানসানা।

করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ঠারেঠোরে যা উঠে আসছে, তাতে আশঙ্কায় আপাতত রাতের ঘুম উড়েছে রেল আধিকারিকদের। এ প্রসঙ্গে এক রেলকর্তা বলেন, ‘‘সতর্কতা সারা বছরই বজায় থাকে। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে সেটাই সকলকে আর এক বার মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’

দ্রুতগামী ট্রেনে সফর নিয়ে যাত্রীদের ভয় দূর করতে এ দিন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানান, হাওড়া ও শিয়ালদহ- রাজধানী ছাড়াও হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে টিকিটের চাহিদা রয়েছে ১০০ শতাংশেরও বেশি।নিরাপত্তা প্রস্তুতির উপরে ভরসা রেখে যাত্রীরা যে কোনও ট্রেনে সফর করতে পারেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Coromandel Express accident safety measures Eastern Railway

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy