Advertisement
E-Paper

কংগ্রেসের বন্‌ধ রুখতে প্রস্তুত প্রশাসন

রাজ্য জুড়ে শক্তির বিচারে কংগ্রেস হয়তো অনেকটাই হীনবল। কিন্তু কেতুগ্রামে ছাত্রী ও সবংয়ে ছাত্র-হত্যা এবং গোটা রাজ্যে খুন, ধর্ষণ-সহ আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রতিবাদে আজ, মঙ্গলবার কংগ্রেসের ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ মোকাবিলায় কোমর বেঁধেই নামল রাজ্য প্রশাসন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৪১

রাজ্য জুড়ে শক্তির বিচারে কংগ্রেস হয়তো অনেকটাই হীনবল। কিন্তু কেতুগ্রামে ছাত্রী ও সবংয়ে ছাত্র-হত্যা এবং গোটা রাজ্যে খুন, ধর্ষণ-সহ আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রতিবাদে আজ, মঙ্গলবার কংগ্রেসের ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ মোকাবিলায় কোমর বেঁধেই নামল রাজ্য প্রশাসন। অন্যান্য বন্‌ধের মতো এ বারও সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সরকারি কর্মচারীরা আজ কাজে যোগ না দিলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।

স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার বন্‌ধ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মন্তব্য করেছেন, ‘‘কীসের বন্‌ধ, কার বন্‌ধ! বন্‌ধ-ধর্মঘট-হরতালের রাজনীতি থেকে আমরা সরে এসেছি। সাধারণ মানুষই কাল জনজীবন স্বাভাবিক রাখবেন।’’ সাধারণ মানুষের সদিচ্ছার হাতে সবটা ছেড়ে দিয়ে অবশ্য বসে নেই তাঁর সরকার! জনজীবন স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে জারি হয়েছে সরকারি বিজ্ঞপ্তি। তাতে জানানো হয়েছে, সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সমস্ত দফতর আজ খোলা থাকবে। কোনও সরকারি কর্মচারী আজ কাজে যোগ না দিলে এক দিনের বেতন কাটা যাবে। চাকরি জীবন থেকেও এক দিন কমে যাবে (সরকারি পরিভাষায় ‘ডায়েজ নন’)।

পরিবহণ দফতর জানিয়েছে, যাত্রী সাধারণের সুবিধার্থে অন্য দিনের থেকে বেশি বাস চলবে আজ। দফতর সূত্রের খবর, অন্য দিন সিটিসি-র ২৯০টি বাসের জায়গায় আজ প্রায় ৩৩০টি বাস চালানো হবে। সিএসটিসি-র ৪৫০ বাস চললেও আজ রাস্তায় নামানো হবে প্রায় ৫৫০টি। রেল ও মেট্রোর তরফে জানানো হয়েছে, পরিষেবা অন্য দিনের মতোই স্বাভাবিক থাকবে। বন্‌ধের দিনে স্কুল-কলেজ রোজকার মতোই খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে ক্যালকাটা গার্লস স্কুলে আজ কয়েকটি ক্লাসের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। বন্‌ধের কারণে সেই পরীক্ষা পিছিয়ে বুধবার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ডিপিএস নিউটাউনের মতো আরও কিছু স্কুল আজ বন্ধ থাকবে বলে আগামা জানিয়ে দিয়েছে।

বন্‌ধ ভাঙতে রাজ্য সরকার যে ভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, তাকে অবশ্য তাঁদের ‘নৈতিক জয়’ হিসাবেই দেখছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা এবং সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়া প্রশ্ন তুলেছেন, বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতার দল যে রাস্তা কেটে প্রতিবাদ করতো, গাছ ফেলে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ হতো, বন্‌ধ-অবরোধ হতো— সে সব দিন কি মুখ্যমন্ত্রীর মনে নেই? একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘যে ভাবে প্রশাসনিক ভাবে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে সরকারি কর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে সরকারই ভয় পেয়েছে! কোনও অশান্তি নয়, আমরা সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন করছি সার্বিক নৈরাজ্যের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ ভাবে বন্‌ধে সামিল হোন।’’

উত্তরবঙ্গে জলপাইগু়ড়ি, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ বা দক্ষিণবঙ্গে মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশ-সহ যে সব জায়গায় কংগ্রেসের সংগঠন এখনও কিছুটা আছে, সেখানে আজ বন্‌ধের প্রভাব স্বাভাবিক ভাবেই বেশি পড়বে। বন্‌ধের সমর্থনে নানা জায়গায় যেমন মিছিল হবে, তেমনই বেশ কিছু জায়গায় রেল ও সড়ক অবরোধের প্রস্তুতিও নিয়েছে কংগ্রেস। আর বামেরা জানিয়েছে, সক্রিয় ভাবে সমর্থন না করলেও তারা এই বন্‌ধের বিরোধিতা করছে না। মঙ্গলবার পার্সিদের নববর্ষ। সে দিনেই বন্‌ধ ডাকায় তাঁদের একাংশ বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

প্রশ্ন, শুধু সরকারি পরিবহণের ভরসায় কি থাকতে হবে যাত্রীদের? বেসরকারি বাস মালিক ও ট্যাক্সি সংগঠনগুলি জানাচ্ছে, বন্‌ধের সকালে গাড়ি নামানো হবে। কিন্তু কোথাও অশান্তির ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গেই যানবাহন তুলে নেওয়া হবে। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট্স-এর সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের দীপক সরকার বা মিনিবাস অপারেটর্স ইউনিয়নের সম্পাদক অবশেষ দাঁ-র বক্তব্য, বাস-শ্রমিকদের কাজে যোগদান এবং রাস্তাঘাটের পরিস্থিতির উপরেই বাস চলাচল নির্ভর করবে। ওয়েস্টবেঙ্গল ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ও কলকাতা ট্যাক্সি অপারেটার্স ইউনিয়নও পথে নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলেছে।

কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, শহরের সমস্ত বাজার, বিপনি, মেট্রো স্টেশন এবং বাস ও ট্রাম ডিপোর সামনে সকাল ৬টা থেকেই পুলিশ পিকেটিং থাকবে। চলবে টহলদারিও। বন্‌ধের দিন শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এ দিন লালবাজারে উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ।

রাজ্য সরকার কংগ্রেসের বন্‌ধ মোকাবিলায় ব্যস্ত। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সব ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা ২ সেপ্টেম্বরের সাধারণ ধর্মঘট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আগাম হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে ১৭টি বাম দলের তিন দিনের ধর্না-অবস্থানের প্রথম দিনে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে সূর্যবাবুর মন্তব্য, ‘‘আপনি ওই দিন কিছু করার চেষ্টা করবেন না! যদি করেন, তা হলে আমরাও মোকাবিলা করব। তার ফল ভাল হবে না!’’

congress police adhir chowdhury mamata bandopadhyay cpm murshidabad kolkata surya kanta mishra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy