ওবিসি সংক্রান্ত সংরক্ষণের বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন থাকায় এ বার সরকারি স্কুলগুলিতে একাদশে ভর্তি প্রক্রিয়া পরবর্তী নির্দেশ না-আসা পর্যন্ত স্থগিত হয়ে গেল। একই কারণে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রেও তৈরি হয়েছে চূড়ান্ত জটিলতা।
রাজ্যের ৩৯টি সরকারি স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে মেধা তালিকার ভিত্তিতে ভর্তি নেওয়া হয়। সরকারি স্কুলের শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, শিক্ষা দফতর তাদের নির্দেশিকায় জানিয়েছিল, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য এ বছরের ১০ মে পর্যন্ত আবেদনপত্র দেওয়া হবে এবং পড়ুয়ারা তা পূরণ করে স্কুলে জমা দেবে। সেই কাজ শেষ হয়েছে। ওই নির্দেশিকাতেই জানানো হয়েছিল, সরকারি স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হবে ১৩ মে। সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রধান শিক্ষকদের ওয়টস্যাপ গ্রুপে শিক্ষা দফতর থেকে জানানো হয়েছে, ওবিসি সংরক্ষণের বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন হওয়ায় পরবর্তী নির্দেশ না-আসা পর্যন্ত কোনও মেধা তালিকা যেন প্রকাশ করা না হয়। এর ফলে যারা সরকারি স্কুলে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে, সেই পড়ুয়ারা আতান্তরে পড়েছে।
কল্যাণীর বিধানচন্দ্র মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শম্পা নায়েক সাহা বললেন, ‘‘মেধা তালিকা প্রকাশ না-করার জন্য আমরা মৌখিক নির্দেশ পেয়েছি। মেধা তালিকা প্রকাশে দেরি হলে বহু পড়ুয়া অন্যান্য স্কুলে ভর্তি হতে চলে যেতে পারে। এমনিতেই সরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষকের অভাব। তাই অনেকেই সরকারি স্কুলে ভর্তি হতে চায় না। তার উপরে আবার মেধা তালিকা প্রকাশে দেরি হলে স্কুলে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়বে।’’
হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্তের কথায়, ‘‘আমরা অভিভাবক এবং পড়ুয়াদের বলে দিয়েছি যে, উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য যে মেধা তালিকা ১৩ মে প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল, তা পরবর্তী নির্দেশ না-পাওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকছে। এ-ও বলেছি, উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া আমরা কিছু করতে পারব না।’’ শুভ্রজিতের মতে, আপাতত ওবিসি সংরক্ষণ বাদ রেখে মেধা তালিকা প্রকাশ করা যেতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, ‘‘মেধা তালিকা প্রকাশে দেরি হলে সরকার-পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে পড়ুয়ারা ভর্তি হয়ে যাবে। বিজ্ঞান বিভাগের বহু পড়ুয়া সর্বভারতীয় আইএসসি এবং সিবিএসই বোর্ডে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। মেধা তালিকা প্রকাশে যত দেরি হবে, ৩৯টি ঐতিহ্যশালী সরকারি স্কুলের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সংখ্যা তত কমবে।’’ সৌগত জানাচ্ছেন, তথ্য বলছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর সরকারি স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। এ বছর একাদশে ভর্তির সমস্যা না মিটলে বহু পড়ুয়া সরকারি স্কুল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে বলে আশঙ্কা। তাতে সরকারি স্কুলের ছবিটা আরও বেশি ম্লান হবে।
একই কারণে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করার ক্ষেত্রেও চূড়ান্ত জটিলতা দেখা দিয়েছে। স্নাতক স্তরে ভর্তির অভিন্ন পোর্টাল কবে খোলা সম্ভব, তা-ও স্পষ্ট নয়।
বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের পরামর্শ নিচ্ছে প্রশাসন। বুধবার রাজ্য কারিগরি শিক্ষা দফতর রাজ্যের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির আসন বণ্টন নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে কোনও প্রশ্নেরই উত্তর পাওয়া যায়নি।
এই পরিস্থিতিতে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে কী করণীয়, তা জানতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েক দিন আগে চিঠি দিয়েছিল অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ এবং উচ্চশিক্ষা দফতরে। কিন্তু এখনও কোনও উত্তর কোনও দফতর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেনি বলে খবর।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও ওই দুই দফতরের কাছে তাদের কী করণীয়, তা জানতে চেয়েছে কয়েক দিন আগে। কিন্তু এখনও উত্তর আসেনি। আবার এরই মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয় এম-টেকে ভর্তির যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, তাতে ওবিসি-র জন্য আসন সংরক্ষণের উল্লেখ রয়েছে। এ নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘আমরা রাজ্য সরকারের উত্তরের অপেক্ষায় আছি। ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। তবে, রাজ্যের উত্তর যা হবে, সেই মতোই আমরা চলব।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)