E-Paper

আবার বাংলায় নজর বিজেপির

বড় আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ, দান-বণ্টন আর ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা— এই তিন প্রধান উপাদানেই দিল্লির সঙ্গে মিল রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির। সেই সুতোয় বেঁধে দিল্লিতে জয়পতাকা ওড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় চাপ তৈরিতে নেমেছেন বিজেপির রাজ্য নেতারা।

রবিশঙ্কর দত্ত , বিপ্রর্ষি চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৪০
দিল্লির ভোটে জয়ের পর সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে বিজেপি কার্যালয়ের বাইরে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উচ্ছ্বাস।

দিল্লির ভোটে জয়ের পর সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে বিজেপি কার্যালয়ের বাইরে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উচ্ছ্বাস। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের হারের পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ‘ভবিষ্যৎ’ নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। রাজ্যের বিজেপি নেতা-কর্মীরা শনিবার সমাজমাধ্যমে লিখতে শুরু করেছেন, ‘এ বার লক্ষ্য বাংলা!’ প্রত্যাশিত ভাবেই ২০২৬-এ রাজ্য বিধানসভার ভোটে দলের আসন সংখ্যা আরও বাড়বে বলে পাল্টা জবাব দিয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসও। তবে বন্ধু-দলের বিপর্যয় নিয়ে এ দিন নীরবই থাকলেন তৃণমূলনেত্রী।

বড় আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ, দান-বণ্টন আর ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা— এই তিন প্রধান উপাদানেই দিল্লির সঙ্গে মিল রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির। সেই সুতোয় বেঁধে দিল্লিতে জয়পতাকা ওড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় চাপ তৈরিতে নেমেছেন বিজেপির রাজ্য নেতারা। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “মমতা ক্ষমতায় রয়েছেন ধর্মান্ধতার উপরে দাঁড়িয়ে। একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁদের শিক্ষার কারণে তাঁকে ভোট দিচ্ছেন! তাঁরা সচেতন হলে মমতার অবস্থাও কেজরীওয়ালের মতোই হবে।” বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বার্তা, “বাংলায় বেকারদের যন্ত্রণা, দুর্গাপুজো থেকে সরস্বতী পুজোয় যে ঘটনা ঘটেছে, তা দেখে দিল্লির বাঙালি সুদে-আসলে জবাব দিয়েছেন। দিল্লি আমাদের হয়েছে। নভেম্বরে বিহারে ভোটেও জয় আসবে। তার পরে ছাব্বিশে বঙ্গ-জয়।” তাঁর খোঁচা, “দিল্লিতে বিদায় আপের, ছাব্বিশে শেষ পাপের!”

দিল্লিতে বিজেপির বিরুদ্ধে তুলনায় শক্তিশালী হিসেবে কেজরীওয়ালের দলকেই সমর্থন করেছিল তৃণমূল। আপের পরাজয়ের পরে দিল্লির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ফারাক চিহ্নিত করেছে তারা। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কথায়, “দিল্লির সঙ্গে বাংলার কোনও মিল নেই। ওই ভোটের ফলের কোনও প্রভাব এখানে পড়বে না।” তাঁর দাবি, ২০২৬-এর ভোটে মমতা আড়াইশোর বেশি আসনে জিতে সরকার গড়বেন। সমাজমাধ্যমে বিজেপি নেতাদের উচ্ছ্বাসকে তৃণমূল সমর্থকদের খোঁচা, ‘হেরেছেন কেজরীওয়াল, মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন শুভেন্দু!’

দেশ জুড়ে ‘মোদী-হাওয়া’ চললেও প্রায় তিন দশক ধরে দিল্লি অধরা ছিল বিজেপির কাছে। সে দিক থেকে এই ‘যুদ্ধ’ জয়ের পরে অধরা পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে উৎসাহ তৈরি হয়েছে রাজ্য বিজেপির মধ্যে। বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, “আবাস যোজনায় এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। এই টাকায় ঘর হয় না। বিজেপি ক্ষমতায় এলে আবাস যোজনায় এক লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। যাঁদের আবাস যোজনা দেওয়া হল না, তাঁদের সরাসরি তিন লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। তালিকা তৈরি করুন।” ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প নিয়ে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা বলেছি, বর্তমান সরকার যা দিচ্ছে তার থেকে বেশি দেব। কল্যাণকর রাষ্ট্রের দায়িত্ব পিছিয়ে পড়া মানুষকে সাহায্য করা। এখন যা অনুদান, তা-ই আইন হওয়া উচিত।”

শাসক হিসেবে আপ ও তৃণমূলের কাজের ধরনেও ফারাক কম। গত ১০ বছর দিল্লিতে কেজরীওয়ালকে ঘিরে যে ভাবে প্রশাসনিক বিষয় আবর্তিত হয়েছে, এখানে তা মমতাকে ঘিরে। সেই কাজের ধরন কি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে? তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, “মনে রাখতে হবে, দেশের বিজেপি-বিরোধী আন্দোলন মমতাকে কেন্দ্র করেই সারা দেশে ছড়িয়েছে।” আপ ও তৃণমূল সরকারের বিলি-বণ্টনের রাজনীতির মধ্যেও ফারাক করে তিনি বলেছেন, “রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই এখানে সমাজের সব মানুষকে একই স্রোতে ধরে রাখতে সরকারি প্রকল্প নিয়েছেন মমতা। দিল্লি আর বাংলার প্রেক্ষিতও এক নয়। এই দিবাস্বপ্ন দেখবেন না।”

দিল্লির ভোটে বাঙালিদের সমর্থন পেতে শুভেন্দু, সুকান্ত, শমীকদের মতো নেতারা প্রচারে গিয়েছিলেন। জয়ের পরে তাঁরাই বাংলার নেতাদের সেই ‘ভূমিকার’ কথা উল্লেখ করতে ভোলেননি। দিল্লির ভোটে তুলনায় কম হলেও প্রচারে ছিলেন তৃণমূলেরও একাধিক নেতা। মমতা বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় না গেলেও দলের সাংসদ মহুয়া মৈত্র, শত্রুঘ্ন সিন্‌হা প্রমুখ আপের সমর্থনে প্রচার করেন।

আপের হারের পরে রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূলকে নতুন করে নিশানা করলেও এই রাজ্যে দলের সংগঠন নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে বিজেপির অন্দরেই। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা দলীয় আলোচনায় স্বীকারও করেছেন, দিল্লিতে এ বারে যে ভাবে বুথস্তর পর্যন্ত সংগঠনকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল, বাংলায় সেখান থেকে তাঁরা এখনও অনেকটাই পিছিয়ে। যদিও সুকান্ত একে সমস্যা বলে দেখতে নারাজ। তাঁর পাল্টা যুক্তি, “পশ্চিমবঙ্গে যে ভয়ের পরিবেশ, রাজনৈতিক সন্ত্রাস রয়েছে, তাতে বিরোধী দলের পক্ষে পোক্ত সংগঠন তৈরি করা সম্ভব নয়। তৃণমূল যখন ক্ষমতায় এসেছিল, তখনও তাদের অনেক জায়গায় বুথে বসার লোক ছিল না। তা-ও তৃণমূল জিতেছে। তাই পশ্চিমবঙ্গে ভাল ফল করতে গেলে সংগঠন একটা অংশ ঠিকই। কিন্তু সেটাই সব নয়।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Delhi Assembly Election 2025 PM Narendra Modi BJP Aam Aadmi Party APP Congress West Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy