কিন্তু সুদীপ্ত দেবকৃপা সম্পর্কে অন্য যা তথ্য দিয়েছেন তদন্তকারীদের, তার সঙ্গে শুভাপ্রসন্নর দাবির প্রভূত ফারাক। কী রকম? গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শ্যামল সেন কমিশনে দেওয়া বয়ানে সুদীপ্ত বলেছেন, ওই চ্যানেলটি সারদা ১৫ কোটি টাকায় কেনে। সিবিআইয়ের কাছেও তিনি একই দাবি করেছেন। রাজ্য সরকারের ‘সিট’ সুপ্রিম কোর্টে যে হলফনামা দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, সুদীপ্ত ১৪ কোটি টাকা দিয়ে চ্যানেলটি কেনে। কিন্তু শুভাপ্রসন্ন নিজে ইডি এবং সিবিআই-কে অন্য কথা বলছেন। তদন্তকারীদের কাছে তিনি দাবি করেছেন, চ্যানেল বিক্রি করে সুদীপ্তর কাছ থেকে তিনি সাড়ে ৬ কোটি টাকা পেয়েছিলেন। তার ৬ কোটি টাকাই তিনি তাঁর অংশীদার বা শেয়ারহোল্ডারদের দিয়েছেন।
অথচ অংশীদারদের একাংশ দাবি করছেন, তাঁরা টাকা পাননি। কারও দাবি, দেবকৃপা যে বিক্রি করা হয়েছে, সেটাই তাঁরা জানেন না। ইডি-র একটি সূত্রের ধারণা, অংশীদারদের কাউকে সুদীপ্ত সেন নিজে সাড়ে তিন কোটি টাকা দিয়েছেন। এই চারটি সম্ভাবনার মধ্যে কোনটি ঠিক বা অংশত ঠিক, তা স্পষ্ট করে বলার সময় আসেনি বলে তদন্তকারীদের মত।
তবে সুদীপ্তর বয়ানে চ্যানেল বিক্রির টাকা কী ভাবে দেওয়া হয়েছিল, তার হদিস কিছুটা মিলেছে। সিবিআই সূত্রের খবর, ঢাকুরিয়ার এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা থেকে টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে জেরায় জানান সারদা-কর্তা। তদন্তকারীরা ২০১২ সালে জুলাই মাসের পর থেকে ওই ব্যাঙ্কে সারদার অ্যাকাউন্টের লেনদেনের নথি খতিয়ে দেখেছেন। সিবিআইয়ের দাবি, ওই অ্যাকাউন্ট থেকে যে ১৫ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছিল, তার প্রমাণ রয়েছে। এবং যাঁদের নামে ওই টাকা দেওয়া হয়েছে, সেই নামগুলি খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা বুঝতে পেরেছেন, দেবকৃপা কেনা বাবদই ওই টাকা খরচ করা হয়েছে। কারা ওই টাকা পেয়েছেন, তা এখনই বলতে চাননি তদন্তকারীরা। যেমন বলতে চাননি, দেবকৃপা বিক্রি সংক্রান্ত ঠিক কী কী নথি জমা দিয়েছেন শুভাপ্রসন্ন।
আপাতত দেবকৃপা নিয়ে এক রাশ প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে তদন্তকারীরা। যেমন, একটি চালু না হওয়া চ্যানেল কিনতে কেন এত টাকা ঢেলেছিলেন সুদীপ্ত, সেটা স্পষ্ট নয়। আরও বিচিত্র বিষয় হলো, চালু না-হওয়া চ্যানেলে মোটা বেতনে চাকরি করেছেন এক তৃণমূল নেত্রী ও এক দাপুটে ছাত্র নেতা। কী কাজের জন্য এত টাকা বেতন দেওয়া হল, তা-ও স্পষ্ট হয়নি।
সব মিলিয়ে সারদা তদন্তে দেবকৃপা যে বড় জট, সেটা মানছেন তদন্তকারীরা। সারদা মামলার আবেদনকারীদের একটি অংশও ইডি এবং সিবিআইয়ের কাছে দেবকৃপা নিয়ে আলাদা অভিযোগ করতে চলেছেন। অন্যতম আবেদনকারী অমিতাভ মজুমদার বলেন, “এই সংস্থাটি অত্যন্ত গোলমেলে। সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারদার বহু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হলেও এই চ্যানেলটির কোটি টাকার সম্পত্তি কিন্তু এখনও বাজেয়াপ্ত করা হয়নি।”
এ দিন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কলেজ স্ট্রিট শাখায় ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকারের (নিতু) একটি লকার খোলে সিবিআই। অগস্ট মাসে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রয়াত কর্তা পল্টু দাসের বাড়িতে লকারের চাবি পাওয়া যায়। এ দিন পল্টু দাসের স্ত্রীর উপস্থিতিতে লকারটি খোলা হয়। তা থেকে নগদ টাকা ও সোনার গয়না পাওয়া গিয়েছে।