Advertisement
E-Paper

দক্ষিণ ২৪ পরগনার পরে দু’টি জেলার সম্মেলন ঘিরে চিন্তায় সিপিএম, দুই নেতা নিয়ে ‘চাপে’ আলিমুদ্দিন

সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনে নতুন কমিটি থেকে নাম প্রত্যাহারের ‘সংক্রমণ’ দেখা গিয়েছিল শনিবার। একাধিক তরুণ নেতাকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে জেলা কমিটি থেকে নাম তুলে নেন ১৮ জন নেতানেত্রী।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭
After South 24 Parganas, WB CPM Leadership is under pressure around the conference of two districts

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

দলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনে ঘটে যাওয়া ‘নজিরবিহীন অশান্তি’ নিয়ে বিড়ম্বনায় রাজ্য সিপিএম। তার মধ্যেই দলের অন্দরে আলোচনা শুরু হয়েছে আরও দু’টি জেলার সম্মেলনে কী হতে চলেছে, সেই বিষয়ে। একটি উত্তর ২৪ পরগনা। দ্বিতীয়টি পশ্চিম মেদিনীপুর। আগামী এক মাসের মধ্যেই এই দুই জেলায় সম্মেলন হবে। সিপিএমের প্রথম সারির নেতৃত্বের অনেকেরই আশঙ্কা, এই দুই জেলায় দু’জন নেতার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তার ভিত্তিতে রাজ্য নেতৃত্ব যে পদক্ষেপ করেছেন, সেই সূত্রে সম্মেলনে গোলমাল হতে পারে।

গত বার সম্মেলন থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক হয়েছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ। জেলা সম্পাদক নির্বাচনে ভোটাভুটি পর্যন্ত হয়েছিল। প্রাক্তন যুবনেতা তাপস সিংহকে হারিয়ে সম্পাদক হন সুশান্ত। কিন্তু সেই সুশান্তকেই জেলা সম্পাদক পদ থেকে ছুটিতে পাঠিয়েছে সিপিএম। গত অগস্ট মাসে সুশান্তের বিরুদ্ধে ‘মহিলাঘটিত’ অভিযোগ পেয়েছিল দল। তার পরেই জেলা সম্পাদকের পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে অন্তর্বর্তী দায়িত্ব দেওয়া হয় বিজয় পালকে। সুশান্তের আর দলের মূলস্রোতে ফেরার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই দাবি সিপিএম নেতৃত্বের বড় অংশের। তবে সম্মেলনে উল্টো দিকের লোকজন ‘হাঙ্গামা’ করতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর ‘আমন্ত্রিত সদস্য’ তন্ময় ভট্টাচার্যকে এক মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থার অভিযোগে ছ’মাসের জন্য নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করেছে দল। তিনি জেলা সম্মেলনে থাকতে পারবেন না। তাঁর বিরুদ্ধে দলের অভ্যন্তরীণ কমিটি (আইসিসি) তদন্ত করেছিল। সেই তদন্ত চলাকালীন তাঁকে নিলম্বিত করে রেখেছিল সিপিএম। তদন্ত শেষ হতেই তন্ময়ের উপর থেকে সাসপেনশন তুলে নেয় আলিমুদ্দিন। তার এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ছ’মাসের জন্য তন্ময়কে নিলম্বিত করা হয়েছে। যা নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। সেই প্রশ্ন জেলা সম্মলনে ‘ঝড়’ হয়ে আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা নেতৃত্বের অনেকেরই।

ঘটনাচক্রে, তিন বছর আগে যখন সিপিএমের সাংগঠনিক সম্মেলন প্রক্রিয়া হয়েছিল, তখন উত্তর ২৪ পরগনায় জেলা কমিটি নির্বাচনে ভোটাভুটি হয়েছিল। সম্মেলন শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পরে বারাসতে ভোটগ্রহণ এবং গণনা হয়েছিল। ‘তন্ময়কাণ্ড’ ঘিরে এ বারও অশান্তির আশঙ্কা করছেন নেতৃত্বের অনেকে। অশান্তি এড়াতে বিকল্প কী পথ নেওয়া যায়, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমে এখনও একাধিক গোষ্ঠী রয়েছে। সেই সব অভ্যন্তরীণ সমীকরণ সময় বিশেষে বদলে যায়। ধরা যাক, রাম এবং শ্যাম দুই নেতার গোষ্ঠী সারা বছর যুযুধান। কিন্তু যুব সম্মেলন হলে রাম-শ্যাম জোট বেঁধে যদুর গোষ্ঠীকে কোণঠাসা করতে চায়। আবার ছাত্র সংগঠনের সম্মেলন হলে জোট বেঁধে ফেলে রাম-যদু। তখন তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে শ্যামের গোষ্ঠী।

সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনে নতুন কমিটি থেকে নাম প্রত্যাহারের ‘সংক্রমণ’ দেখা গিয়েছিল শনিবার রাতে। একাধিক তরুণ নেতাকে জেলা কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার ‘প্রতিবাদে’ নাম তুলে নেন ১৮ জন নেতানেত্রী। সেই তালিকায় রয়েছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের প্রাক্তন সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী মিলি চক্রবর্তীও। প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের পুত্র সাম্য গঙ্গোপাধ্যায়ও নতুন জেলা কমিটি থেকে নাম তুলে নিয়েছেন।

দলের অনেকের বক্তব্য, পূর্ব মেদিনীপুর বা মালদহের মতো কিছু জেলায় নতুন সম্পাদক কে হবেন, তা নিয়ে নেতৃত্ব ভিন্নমত। কিন্তু সেগুলি শেষমেশ সামাল দেওয়া যাবে বলেই মনে করছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। তবে উত্তর ২৪ পরগনা এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের মধ্যে সেই সুযোগ কম বলেই অভিমত প্রথম সারির নেতাদের অনেকের। সরকারে থাকার সময়ে যে যে জেলা কোন্দলে ‘কিংবদন্তি’ হয়ে উঠেছিল, তার মধ্যে উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা ছিল অন্যতম। তার মধ্যে একটি জেলায় এ বারও অশান্তি হয়েছে। তার পর উত্তর নিয়ে চাপ বেড়েছে আলিমুদ্দিনের উপরেও। যদিও হাওড়া, হুগলির মতো জেলায় একদা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকলেও এখন তা অনেকটা কেটেছে। অন্তত উপরে উপরে নেতাদের মধ্যে বনিবনা রয়েছে।

দল যখন ভোটের অঙ্কে প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে, তখন এই ‘দলাদলি’ নিয়ে শঙ্কিত সিপিএম নেতৃত্বের বড় অংশ। তাঁদের বক্তব্য, একে ভোট নেই। তার উপর বড় বড় জেলায় এই ঘটনা ঘটতে থাকলে দলের মৌলিক কাঠামো টিকিয়ে রাখা মুশকিল হবে। কারণ, এক গোষ্ঠী কর্মসূচি ঘোষণা করলে অন্য গোষ্ঠী তা বাস্তবায়নে গুটিয়ে থাকবে বলে আশঙ্কা তাঁদের। এক সিপিএম নেতার কথায়, ‘‘ভোটের কথা এখন ভাবনার মধ্যেও আনা যাচ্ছে না। চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে টিকে থাকা!’’ সিপিএমের অনেকেরই বক্তব্য, সরকারি ক্ষমতা উপভোগ করার দিন অতীত হলেও দলের একটা বড় অংশ কমিটির ক্ষমতা উপভোগ করতে এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছেন। সংখ্যার জোরেই কোথাও কোথাও ‘একপেশে’ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলেও মনে করছেন দলের অনেক প্রবীণ নেতৃত্ব।

CPM CPM Leaders South 24 Parganas Tanmoy Bhattacharya Sushanta Ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy