—ফাইল চিত্র
‘মেহমান’ বলে কথা!
সেই মেহমানের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার খেয়াল রাখতেন কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ। জোব্বা পরা অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ধরা অচেনা মুখও এসে জেনে যেত অতিথিদের সুবিধে-অসুবিধের কথা।
এখন সেই অচেনা মুখই বাহালনগরের ছ’জনকে ঘর থেকে নিয়ে গিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালানোয় হতবাক দুলাল শেখ, মেহরাজউদ্দিন শেখ, আইনাল শেখেরা। মুর্শিদাবাদের বাহালনগরের সঙ্গে কাশ্মীরের সম্পর্ক পাঁচ দশকেরও বেশি। বাহালনগর থেকে প্রতি বছর দেড়শো থেকে দু’শো জন কাশ্মীরের বিভিন্ন প্রান্তে যান মূলত আপেল পাড়ার কাজ নিয়ে। এক সকালে আপেল বাগানে কাজ করছিলেন বাহালনগরের আপেল শেখ। আচমকা জঙ্গল ফুঁড়ে বাগানে হাজির হয়ে গম্ভীর গলায় জানতে চেয়েছিলেন তাঁরা
—‘হালচাল সব ঠিক হ্যায়? রোজ সাম কো পিনে কে লিয়ে দুধ মিলতা হ্যায় ক্যায়া?’
ঠান্ডা চোখের চাহনির সামনে কোনও রকমে আমতা আমতা করে বাহালনগরের আপেল শেখ উত্তর দিয়েছিলেন—‘দুধ মিলতা নেহি।’
যেমন বলা তেমনি কাজ। ওই রাতেই সেই বাগান মালিকের বাড়িতে ঢুকে ‘মেহমানদের খাতির-যত্নের যাতে কোনও অসুবিধে না হয়, তার সমস্ত দিকে নজর দেওয়ার’ কথা জানিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে যান তাঁরা। পর দিন সকাল থেকে বাগান মালিকের ব্যবহারে অদ্ভুত পরিবর্তন! আপেলের মরসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপেল শেখদের খাতির-যত্নের কোনও ত্রুটি রাখেননি সেই বাগান মালিক। ‘আপ লোগ মেহমান। কুছ গলতি হুয়া তো মাপ কর দেনা’, বলেছিলেন সেই বাগান মালিক। সেই কাশ্মীরে পাঁচ জন শ্রমিক খুন হলেন!
ভারী কুয়াশায় ঢাকা ছিল বাহালনগরের আকাশ—এমনই এক নিঝুম রাতের নৈঃশব্দ খানখান করে পুলিশের গাড়ি বাহালনগরের রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। ঝুপ ঝুপ করে একটার পর একটা বাড়িতে আলো জ্বলে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যে গোটা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে কাশ্মীরের কুলগ্রামের কাতরাসুলে উগ্রপন্থীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বাহলনগরের পাঁচ জন। এক জন গুরুতর জখম হয়ে কাশ্মীরের রাজা হরি সিংহ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ খবরে রাত জাগে গোটা গ্রাম।
বাহালনগর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার শেষ প্রান্তে ধূ-ধূ মাঠ। হালকা হিমেল হাওয়ায় দুলছে হেমন্তের ধানের শিস। মৃত মুরসালিম শেখের বাড়ির সামনের রাস্তায় বসে দুলাল শেখ বলছেন, ‘‘কেন এমনটা হল বুঝতে পারছি না। উল্টে তারা ভাল ব্যবহার করত। ‘বাগান মালিক নিয়মিত দুধ কিংবা খাবার ঠিক মতো খেতে দেয় কিনা থেকে কোনও রকম খাতির-যত্নের অভাব হলে তাদের জানানোর কথা বলে যেমন ভাবে এসেছিল, সে ভাবেই বাতাসে মিলিয়ে গিয়েছিল আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy