Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

অশোক-খুনে ফের ধৃত তৃণমূলেরই নেতা-কর্মী

বীরভূমে তৃণমূল নেতা অশোক মুখোপাধ্যায় খুনে দলেরই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তাঁরা সকলেই অশোকবাবুর বিরোধী গোষ্ঠীর লোক বলে পরিচিত। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ বীরভূমে এই ঘটনায় তৃণমূলের অস্বস্তি আরও বাড়ল। পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার সকাল থেকেই যৌথ অভিযান শুরু করেছিল খয়রাশোল ও কাঁকরতলা থানা। কাঁকরতলারই সাহাপুর থেকে একটি রিভলভার-সহ পলাতক নেতা-কর্মীদের পাকড়াও করা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫২
Share: Save:

বীরভূমে তৃণমূল নেতা অশোক মুখোপাধ্যায় খুনে দলেরই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তাঁরা সকলেই অশোকবাবুর বিরোধী গোষ্ঠীর লোক বলে পরিচিত। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ বীরভূমে এই ঘটনায় তৃণমূলের অস্বস্তি আরও বাড়ল।

পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার সকাল থেকেই যৌথ অভিযান শুরু করেছিল খয়রাশোল ও কাঁকরতলা থানা। কাঁকরতলারই সাহাপুর থেকে একটি রিভলভার-সহ পলাতক নেতা-কর্মীদের পাকড়াও করা হয়। ধৃতদের অন্যতম স্বপন সেন স্থানীয় হজরতপুর পঞ্চায়েত এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত। বাকি চার জনের নাম হাবুল শেখ, লক্ষ্মীকান্ত পাল, কেদার আলি এবং শেখ সইবুল। আজ, রবিবার তাঁদের দুবরাজপুর আদালতে হাজির করানোর কথা। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “নিহত নেতার ছেলের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়ে পুলিশ ওঁদের গ্রেফতার করেছে। এ ব্যাপারে দল আগেও হস্তক্ষেপ করেনি, এখনও করবে না।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, খয়রাশোলে তৃণমূলের দুই প্রাক্তন ব্লক সভাপতি অশোক ঘোষ এবং অশোক মুখোপাধ্যায়ের অনুগামীদের দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। অবৈধ কয়লা কারবারের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, সেটাই দ্বন্দ্বের মূলে বলে অভিযোগ। গত বছর অগস্টে দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হন অশোক ঘোষ। গত ১৬ অগস্ট রাতে প্রায় খুন করা হয় ওই খুনে মূল অভিযুক্ত, তৃণমূলের প্রাক্তন খয়রাশোল ব্লক সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায়ও। গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের কথা যাতে প্রকাশ্যে না আসে, তার জন্য অবশ্য দলের জেলা নেতৃত্ব চেষ্টা চালাতে কসুর করেননি। নিহত নেতার পরিবার দলেরই ৪৪ জন নেতা-কর্মীর (প্রত্যেকেই অশোক ঘোষ গোষ্ঠীর) বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করলেও অনুব্রত দাবি করেছিলেন, “ওই ঘটনায় দলের কেউ যুক্ত নন। তার পরেও কেন দীপক ঘোষ বা বিশ্বজিৎদের নাম (অশোক ঘোষের ভাই ও ছেলে) অভিযুক্তের তালিকায় রাখা হল, তা বুঝতে পারছি না।” খয়রাশোলে নিজের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে অনুব্রত নিজেও দু’গোষ্ঠীকে সমঝে চলছেন বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি।

অশোক মুখোপাধ্যায় খুনের প্রায় এক মাসের মাথায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রথম তিন জন ধরা পড়ে। তারা প্রত্যেকেই এলাকার সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। দিন কয়েকের মধ্যেই অশোকবাবুর গ্রাম পাঁচড়া থেকে পুলিশ বিশ্বরূপ চট্টোপাধ্যায় নামে আরও এক জনকে গ্রেফতার করে। তবে তিনি তৃণমূলের কেউ নন, এফআইআর-এ নামও ছিল না। কিন্তু মোবাইলে অশোকবাবুর গতিবিধির খবর দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ তাঁকে ধরে। প্রথম তিন জন গ্রেফতার হওয়ার সময়েই জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তে ধৃতদের ঘটনায় যুক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তাঁদের জেরা করলে অনেক সূত্র মিলতে পারে বলে ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। সেই সব সূত্র ধরেই এ বার আরও পাঁচ তৃণমূল নেতা-কর্মীকে ধরা হল বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

তবে জেলা পুলিশেরই একটি সূত্রের দাবি, শাসকদলের চাপ থাকায় তারা খুনের তদন্তে ধীর গতিতে এগোতে চাইছে। যে কারণে খুনে অভিযুক্ত বড় নেতাদের (দীপক ঘোষ প্রমুখ) এখনও ধরা হয়নি, জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি। তবে প্রকাশ্যে কেউই কিছু বলতে নারাজ। বারবার চেষ্টা করা হলেও পুলিশ সুপার ফোন ধরেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE