শাসক দলের তরফে মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় তাঁদের কাউকে পাশে প্রয়োজন নেই। বিজেপি-সহ সব বিরোধীর বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস আগে একা লড়েই জিতেছে, আগামী ২০২৬ সালেও ফের জিতবে। কিন্তু ভোটার কার্ডে ‘জালিয়াতি’র অভিযোগ-সহ কিছু প্রশ্নে দিল্লিতে তৃণমূলের পাশে গিয়েই দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস। এমতাবস্থায় বাংলার কংগ্রেস নেতাদের এ বার ডাক পড়ল দিল্লিতে। রাজ্যে আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতির আগে বঙ্গের দলীয় নেতাদের মত শুনতে চান কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
যে সব রাজ্যে বিধানসভা ভোট আসন্ন, তার মধ্যে বিহার, অসম, কেরলের প্রদেশ নেতাদের সঙ্গে ইতিমধ্যে বৈঠক সেরে ফেলেছে কংগ্রেস। যেখানে বিধানসভা ভোট এখনও দেরি আছে, সেই গুজরাতে গিয়েও দলের ব্লক স্তর পর্যন্ত নেতাদের মুখোমুখি হয়ে বার্তা দিয়ে এসেছেন রাহুল গান্ধী। সূত্রের খবর, আগামী ১৯ মার্চ দিল্লির নতুন এআইসিসি দফতরে এ বার বৈঠকে ডাকা হয়েছে বাংলার কংগ্রেস নেতাদের। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, বিরোধী দলনেতা রাহুল, এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপাল এবং বাংলার ভারপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষকেরা সেই বৈঠকে থাকতে পারেন। বাংলার কংগ্রেস থেকে ২৯ জন প্রতিনিধির ওই বৈঠকে হাজির থাকার কথা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে শুভঙ্কর সরকার দায়িত্ব পাওয়ার পরে এমন বৈঠক এই প্রথম। তবে সভাপতি নিয়োগের পরে প্রায় ৬ মাস হয়ে গেলেও প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন কমিটি এখনও হয়নি। দিল্লির বৈঠকে সাংগঠনিক বিষয়েও আলোচনা হতে পারে বলে কংগ্রেস সূত্রের ইঙ্গিত।
এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে, দলের কিছু কর্মসূচিতে আগামী ১৬ ও ১৭ মার্চ কলকাতায় থাকতে পারেন এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক ও বাংলার পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মীর। দিল্লির বৈঠকের আগে সেই সময়েই প্রস্ততি আলোচনা সেরে রাখতে চান প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা। চলতি মাসের গোড়াতেই প্রদেশ কংগ্রেসের কর্মশালায় এসে সংগঠনকে শক্তিশালী করার বার্তার সূত্রেই বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতির কথা বলে গিয়েছিলেন মীর। সূত্রের খবর, কর্মশালায় এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক বলেছিলেন, গত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে কংগ্রেস গোটা কুড়ি বিধানসভা আসনে ভাল জায়গায় আছে। তার সঙ্গে আরও ২৫টি আসন যোগ করে (অর্থাৎ ৪৫) ধাপে ধাপে তার দ্বিগুণ আসন (৯০) ধরে বিশেষ নজর দিতে হবে। সেই মতো প্রস্তুতি নিতে হবে। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী অবশ্য সেখানে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, যে আসনগুলিতে কংগ্রেস ভাল জায়গায় আছে, সেখানে বিগত নির্বাচনের নিরিখে বাম ভোটও মিশে আছে। আপাতত কংগ্রেস রাজ্যে সংগঠনকে চাঙ্গা করার দিকে নজর দিয়েছে। আগামী বিধানসভা ভোটে তারা একা লড়বে, নাকি কোনও জোটের পথে যাবে, সেই ব্যাপারে দিল্লির মন আরও ভাল করে বুঝে নিতে চান প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা।
রাজ্যে কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, ‘‘দলের মধ্যে একটা অংশ আছে, মূলত একটু পুরনো নেতা, যাঁরা চান প্রয়োজনে তৃণমূলের সঙ্গে গিয়েও কংগ্রেস অন্তত শূন্য থেকে বেরোক! একটা অংশ বামেদের সঙ্গেই চলতে চায়, আগের কয়েকটা ভোটের মতো। আবার তরুণ নেতা-কর্মীদের বড় অংশের মনোভাব একা চলার। সব মত শুনে দিল্লি কী সঙ্কেত দেয়, দেখা যাক!’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)