কথা মতো ১১টি গান গাওয়ার পরেও দু’টি গান গেয়ে ফেলেছেন। মঞ্চের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। অতিরিক্ত তিন নম্বর গানটিও শেষ করে নেমে আমার হাত ধরে বললেন, ‘‘তোর জন্য টেনে দিলাম রে!’’
আমার প্রস্তাবেই পাইকপাড়া আমরা ক’জনের কালীপুজোর মঞ্চে সে বার কালিকাদা (কালিকাপ্রসাদ) গাইতে রাজি হয়েছিলেন। উনি জানেন আমি ওঁর গান শুনতে পাগল। তাই সে দিন অনুষ্ঠান শুরুর সময়ে আমাকে না দেখে ফোন করেছিলেন। আমি না আসা পর্যন্ত একটার পর একটা গান গেয়ে গিয়েছেন। এতবড় একজন বিখ্যাত এবং ব্যস্ত মানুষ অথচ শিশুর মতো সরল! এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তাঁর সঙ্গে পরিচয়। এতটুকু বাড়িয়ে বলছি না, কালিকা-দা’র মতো এতবড় মন না থাকলে এই উচ্চতায় পৌঁছনো যায় না।
ছাত্র আন্দোলন করার সময় থেকেই কালিকাদা-র সঙ্গে পরিচয়। ২০১১ সাল থেকে একসঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের একটি টাস্ক ফোর্স রয়েছে। যারা রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সরকারি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা, বিন্যাস করে। সেই কমিটিতে ২০১১ সাল থেকে কালিকাদার সঙ্গে আমিও ছিলাম। নন্দনে টাস্ক ফোর্সের অফিস রয়েছে। সেখানে আমরা অফিস করতাম। কত বিষয়ে কত আলোচনা হতো। কালিকাদার শিল্পী সত্তা নিয়ে আমার কিছু বলা সাজেই না। বরং কয়েকটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলি।
আগেই বলেছি কালিকাদার গানের অসম্ভব ভক্ত আমি। বছর তিনেক আগে কলকাতায় পৌষমেলায় কালিকাদা গাইবেন। আমিও অপেক্ষায় রয়েছি। রাত বাড়তে থাকে। শেষে রাত তিনটেয় মঞ্চে উঠলেন তিনি। আমি ঠায় বসে। ভোর পাঁটচার সময় গান শেষ হল। মঞ্চ থেকে নেমে জড়িয়ে ধরলেন।
খুব অভিমানীও ছিলেন। একবার কোচবিহারে গাইতে এসে আমাকে ফোন করেছিলেন। কাজ থাকায় যেতে পারিনি। পরদিন আমি জলপাইগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার যাচ্ছি। কালিকাদা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ট্রেন ধরার জন্য উল্টো পথে আসছেন। ধূপগুড়িতে আমরা গাড়িতে পরস্পরকে অতিক্রম করি। আমাকে দেখে ফোন করে থামতে বলে। গাড়ি থেকে নেমে সে কী চোটপাট। কেন আমি যাইনি সে কথা বারবার বলছেন। বললেন, ‘‘তোর এলাকায় এসেছি। তুই দেখা করতে গেলি না। আর কোনও দিন আসব না।’’
সে অভিমান অবশ্য পথেই ভেঙেছিল। বিধানসভা ভোটের আগে আলিপুরদুয়ারে নিয়ে যাই অনুষ্ঠানে। পরদিন কোচবিহারে মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিতে গেলাম দু’জনে। কিছুদিন আগে আমাকে ফোন করে ঢোল বাদক বলরাম হাজরার অসুস্থতার কথা বলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর অনুরোধ করেন। আমার এলাকায় উনি থাকেন অথচ তাঁর অসুস্থতার খবর আগে পান কালিকাদা। এমনই মানুষ তিনি।
বলরাম হাজরাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যাবেন ভেবেছিলেন। অসুস্থতার কারণে যেতে পারবেন না বলে বলরামবাবু জানিয়েছিলেন। কালিকাদারও আর যাওয়া হল না।
লেখক আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক