Advertisement
E-Paper

সরকারি অর্থে নিত্য উৎসব গ্রন্থাগারেও

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের জোয়ারে ভাসতে শুরু করল সরকারি গ্রন্থাগারও।এ বার থেকে রাজ্যের ২৪৮০টি সরকারি গ্রন্থাগারে প্রায় প্রতি সপ্তাহে একটি করে উৎসব হবে! ৫২ সপ্তাহে ৫১টি উৎসব!

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় ও রোশনী মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২১

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের জোয়ারে ভাসতে শুরু করল সরকারি গ্রন্থাগারও।

এ বার থেকে রাজ্যের ২৪৮০টি সরকারি গ্রন্থাগারে প্রায় প্রতি সপ্তাহে একটি করে উৎসব হবে! ৫২ সপ্তাহে ৫১টি উৎসব!

গত ১১ জানুয়ারি গ্রন্থাগার পরিষেবা অধিকর্তার জারি করা নির্দেশিকা অনুযায়ী, জানুয়ারিতে নববর্ষ থেকে শুরু করে ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস পর্যন্ত সব উৎসব, এমনকী মনীষীদের জন্মদিনও পালন করা হবে। তালিকায় স্বামী বিবেকানন্দ, চৈতন্য মহাপ্রভু, সারদা দেবী, তিতুমীর, গোষ্ঠ পাল, বিদ্যাসাগরের জন্মদিন যেমন আছে, তেমনই আছে বুদ্ধ পূর্ণিমা, রাখী পূর্ণিমা, গুরুপরব, ইদ-উল-ফিতর, ইদুজ্জোহা, ফতেয়া দোহাজ দহম বা নবি দিবস, বিজয়া দশমী, বড়দিন— এক কথায় সবই।

তবে শিবরাত্রি পালিত হবে শুধু জলপাইগুড়ি জেলায়। যেমন নেপালি কবি ভানুভক্তের জন্মদিন পালিত হবে শুধু দার্জিলিঙে। সরস্বতী পুজোর দিন গ্রন্থাগারগুলিতে শুধু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার কথা বলা হয়েছে। পুজো নয়, সে দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্যই অনুদান দেবে রাজ্য।

গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বছরভর উৎসব পালনের এই ব্যবস্থা করতে পেরে বেশ উৎফুল্ল। শুক্রবার বিধানসভার লবিতে তিনি জানান, আগামী বার আরও কিছু জন্মদিন যুক্ত হবে তালিকায়।

কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানে এ ভাবে জন্মদিন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন কি করা যায়? গ্রন্থাগার মন্ত্রীর জবাব, ‘‘আমরা সংবিধান লঙ্ঘন করে কিছু করছি না। মানুষের পড়ার অভ্যাস কমে যাচ্ছে। তার ফলে জ্ঞানও কমছে। সেই কারণেই গ্রন্থাগারগুলিতে বিশেষ দিনগুলিতে শিক্ষামূলক আলোচনাসভা হবে। যাতে মানুষ সেই দিনের তাৎপর্য জানতে পারেন। যেমন— জওহরলাল নেহরু, সারদা দেবী, হজরত মহম্মদ প্রমুখের জন্মদিনে তাঁদের জীবনী এবং অবদান আলোচনা করবেন শিক্ষাবিদরা। ক্রিসমাসের তাৎপর্য আলোচনা করা হবে।’’ এই নির্দেশ যে ‘ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট’, তা জানিয়ে প্রতি মাসে গ্রন্থাগারগুলিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

অনুষ্ঠান পালনে যে কোনও বাছবিচার করা চলবে না, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছে, প্রতিটি দিবস পালনের জন্য প্রত্যেক গ্রন্থাগারকে এক হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। যার অর্থ, এ বছরে প্রত্যেকটি গ্রন্থাগার উৎসব পালন করতে ৫১ হাজার টাকা করে পাবে। ওই টাকায় না কুলালে গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় ভাবে অর্থ সংগ্রহ করতে পারবেন বলেও জানানো হয়েছে নির্দেশিকায়। বিরোধীদের অভিযোগ, এর ফলে স্থানীয় ভাবে শাসক দলের কিছু লোক সরকারি অনুষ্ঠানের নাম করে ঘুরপথে তোলা আদায়ের সুযোগ পেয়ে যাবে।

কিন্তু রাজ্যের গ্রন্থাগারগুলিতে যেখানে পাঠক কমে গিয়েছে, পরিকাঠামোর অভাব, সেখানে ঘটা করে উৎসব পালন করার কারণ কী?

গ্রন্থাগার মন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘উৎসব পালন করার জন্য ১২ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা কি এমনি এমনি খরচ করছি? গ্রন্থাগার যাতে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়, সেই কারণেই তো সমস্ত সম্প্রদায়ের উৎসব করা হচ্ছে।’’

বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর যা কাজ, সেটা কেন সরকার করতে যাচ্ছে?’’ কংগ্রেস পরিষদীয় দলের সচেতক মনোজ চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘এ সব যত অকাজের কাজ!’’

Festivals Celebration Govt Libraries
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy