লক্ষাধিক টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে দুই কর্মী গ্রেফতার হতেই চাপ বাড়াতে সুর মেলালেন বিরোধীরা। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের বিপুল অঙ্কের বরাদ্দ ঠিকঠাক খরচ হয়েছে কি না তা নিয়ে একই দিনে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানাল সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি। বিরোধীদের অভিযোগ, নানা প্রকল্পে অনেক টাকা নয়ছয় হয়েছে। গত পুরভোটে হারের পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব কটাক্ষ করেছিলেন, বিরোধীরা ‘রামধনু’ জোট করেছে। ঘটনাচক্রে, আগামী ৩ অক্টোবর মহকুমা পরিষদের ভোট। তার প্রাক্কালে সেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর বিরুদ্ধেই তদন্তের দাবি তুলে আসরে নেমে পড়েছে সেই ‘রামধনু’ জোটই।
গৌতম দেবের দফতরের দুর্নীতিই যে ভোটের প্রচারের প্রধান অস্ত্র হবে, তারও ইঙ্গিত দিয়েছেন বিরোধী নেতারা। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সম্ভাব্য দুর্নীতির তদন্ত দাবি করে শিলিগুড়ির মেয়র তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আগামী পঞ্চায়েত ভোটে এটাই মানুষের সামনে তুলে ধরব।’’
সিপিএমের তরফে মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, নির্দিষ্ট কয়েকটি সংস্থাকে দিয়েই রাস্তা, ভবন নির্মাণের মতো কয়েকশো কোটি টাকার কাজ করানো হয়েছে কেন, তা নিয়ে তদন্ত হোক। ওই সব সংস্থা স্থানীয় যাঁদের দিয়ে কাজ করিয়েছে, তাঁদের তালিকা ও সম্পদ গত চার বছরে কতটা বেড়েছে তা খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছে বিজেপি। এমনকী, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী একদা ছায়াসঙ্গী, ডেকরেটর ব্যবসায়ে যুক্ত এক তৃণমূল কর্মী কেন দফতরের অধিকাংশ মণ্ডপ তৈরি কাজ পেয়েছেন, তা নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন কংগ্রেস নেতা জীবন মজুমদার।
তবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘নিয়ম মেনেই সব করা হয়েছে। দফতরের আধিকারিকেরা সে সব বলে দেবেন। বিধিবদ্ধ ভাবে অডিট করানো হচ্ছে। অশোকবাবুদের ভাবতে হবে না।’’ তাঁর দাবি, ১০০ শতাংশ স্বচ্ছতার সঙ্গে সব করা হচ্ছে। তাঁর লুকনোর কিছু নেই।
গত বুধবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের দুই কর্মী গ্রেফতার হন। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, টেন্ডার ফর্ম বিলির টাকা নয়ছয় করেছেন। পুলিশের দাবি, ধৃতকর্মী রঞ্জন রাউত এবং অলক মিনজ রসিদ এবং টাকা জমা করার দায়িত্বে ছিলেন। এই ঘটনা সামনে আসতেই মহকুমা পরিষদের ভোটে তা সামনে রেখে আসরে নেমে পড়েছে বিরোধীরা। দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জীবন মজুমদার, সুবীন ভৌমিক, কুন্তল গোস্বামীরা সোমবার একযোগে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন।
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবু দলীয় অফিসে গৌতমবাবুর দফতরের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। অশোকবাবু বলেন, ‘‘এসজেডিএ-এর দুর্নীতি প্রায় ২০০ কোটি টাকার বলে অভিযোগ শুনেছি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে তো কয়েকশো কোটি টাকার কাজ হয়েছে। তা হলে এখানে কী হয়েছে তা নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত জরুরি।’’
বিজেপি-কংগ্রেসের অনেকে অভিযোগ করেছেন, বিবেকানন্দ ভবনে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের অফিসের আশেপাশে সক্রিয় রয়েছে একাধিক ‘সিন্ডিকেট’। তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ লোকদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সিন্ডিকেটের সঙ্গে ওই দুই কর্মীর যোগাযোগ ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন কংগ্রেস নেত্রী তথা প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত।
পরে পৃথক ভাবে বিজেপি-র দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন বসু প্রশ্ন তোলেন, এসজে়ডিএ দুর্নীতি সামনে এলে চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যকে সরে যেতে হয়। তা হলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী সরবেন না কেন?
এ ব্যাপারে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী পাল্টা অভিযোগ করেন, ‘‘পুরসভায় করের টাকা জমা না করা, পার্কিংয়ের ফি জমা না করা নিয়ে নানা সময়েই অভিযোগ ওঠে। সে সব ক্ষেত্রে কি মেয়রকে সরে যেতে হয়েছে? অশোকবাবু যখন মন্ত্রী ছিলেন এসজেডিএ ও দফতর কী ভাবে চালিয়েছেন সমস্ত তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। আমাদের দফতরের কাজ সততার সঙ্গে করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy