পুরসভার অনুমোদিত নকশা না মেনে যত্রতত্র বেআইনি বহুতল তৈরির অভিযোগ হাওড়া শহরের প্রোমোটারদের একাংশের বিরুদ্ধে আগেও উঠেছে। কিন্তু পুর আইনকে তোয়াক্কা না করে এ বার ছ’ফুট চওড়া গলির মধ্যে বহুতল তৈরির অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ উঠল পুরসভার বিরুদ্ধেই। তা-ও আবার রাজ্যের প্রধান সচিবালয় নবান্নের কাছেই!
নবান্নকে ঘিরে ৫০০ মিটার পরিসরের মধ্যে বহুতল তৈরিতে একাধিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেই নিষেধাজ্ঞা উড়িয়েই হালদারপাড়া লেনে একটি সরু গলিতে মাথা তুলেছে পাঁচতলা বহুতল। ওই এলাকার বাসিন্দাদের প্রশ্ন, যেখানে আগুন লাগলে দমকল ঢোকার রাস্তা পর্যন্ত নেই, সেখানে কী ভাবে পুর বিল্ডিং দফতর নকশা অনুমোদন করে? আরও প্রশ্ন, পুরসভার কাছে চারতলা পর্যন্ত তৈরির অনুমোদন মেলার পরে সেই বহুতল কী ভাবে পাঁচতলা হয়ে যায়? তার পরেও পুরসভা ব্যবস্থা নেয় না কেন? তা হলে কি সর্ষের মধ্যেই ভূত?
এর আগে বেআইনি বহুতল নিয়ে বার বার একাধিক কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শোনা গিয়েছে হাওড়া পুরসভার মুখে। বিশেষত, অনলাইনে নকশা অনুমোদনের ব্যাপারে পুর বিল্ডিং দফতরকে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে বলা হয়েছিল বলে সূত্রের খবর। সেই সঙ্গে জানানো হয়েছিল, যে সব নতুন বহুতল তৈরি হবে, সেগুলির ক্ষেত্রে একটি সাইনবোর্ডে পুরসভার অনুমোদিত নকশা-সহ নির্মাণকারী সংস্থার নাম, জমির বিবরণ, জমির মালিকের নাম ও ফোন নম্বর লিখে রাখতে হবে। অথচ, হালদারপাড়া লেনের নির্মীয়মাণ ওই বহুতলের বাইরে এমন বোর্ড টাঙানো হয়নি। এলাকার বাসিন্দা সমরেশ হালদার বলেন, ‘‘ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় এত সরু গলিতে যে ভাবে বাড়িটি তৈরি হচ্ছে, তাতে কখনও আগুন লাগলে সবাই বিপদে পড়ব। অবিলম্বে বাড়িটি ভেঙে দেওয়া হোক।’’
সংশ্লিষ্ট বহুতলটি প্রসঙ্গে পুরসভার বিল্ডিং দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘পুর আইন মেনে ছ’ফুট রাস্তার জন্য আড়াই মিটার জমির একটি ফালি পুরসভাকে ‘গিফট’ করেছেন জমির মালিক। তাই চারতলা তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে বাকি একতলা যে হেতু বেআইনি, তাই সেটি ভাঙার নোটিস আমরা পাঠিয়েছি।’’
ওই আধিকারিক এ কথা বললেও পুরসভার বিল্ডিং আইনের ৭৪/১ ধারা বলছে, কমন প্যাসেজের দু’পাশে ন্যূনতম তিন মিটার বা ১০ ফুট রাস্তা থাকলে তবেই আড়াই মিটার পুরসভাকে ‘গিফট’ করা যায়। অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে অনুমোদিত হওয়া নকশায় দেখা যাচ্ছে, বহুতলটির সামনে মাত্র আট ফুট রাস্তা দেখানো হয়েছে। পুর ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের মত, সে ক্ষেত্রে চারতলা বাড়ির অনুমোদন দেওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া, ওই বহুতলে গিয়ে দেখা যায়, যে অংশটি পুরসভাকে দেওয়া হয়েছে, সেখানে একটি মন্দির রয়েছে। ফালি জমিটির শেষ ভাগে কমন প্যাসেজের জন্য জমি ছাড়ের তোয়াক্কা না করেই তৈরি হয়েছে বাড়িটির একাংশ।
হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিষয়টি যখন নজরে এসেছে, তখন আমরা প্রশাসনিক ভাবে সব রকমের ব্যবস্থা নেব। যদি নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে কোনও ভুল-ত্রুটি থাকে, তা হলে যিনি এটা করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)