হরিয়ানা সরকার যে ৫২ জন পরিযায়ী শ্রমিকের তথ্য চেয়েছিল বঙ্গের কাছে, তাঁদের একাংশ ছাড়া পেলেও সে রাজ্যে এখনও আটক অনেকে। তার উপরে বৃহস্পতিবার নতুন করে বঙ্গের আরও কিছু শ্রমিককে আটকানো, ‘পুশ-ব্যাক’-এর অভিযোগ মিলেছে।
হরিয়ানার গুরুগ্রামে এ দিন যান দক্ষিণ মালদহের কংগ্রেস সাংসদ ইশা খান চৌধুরী। তাঁর দাবি, “চিঠি পাঠালে, ফোন করা হলে, হরিয়ানা সরকার উত্তর দিচ্ছে না। তাই বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করেছি।” হরিয়ানার তালিকায় থাকা মালদহের ১৩ জন ছাড়া পেলেও, অভিযোগ, নতুন করে আটক করা হয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরের রাঙাইপুরের সাত শ্রমিককে। সেই অভিযোগে রাঙাইপুরে এ দিন বিক্ষোভ হয়। বাংলাদেশি সন্দেহে রাজস্থানে কর্মরত কালিয়াচকের এক পরিযায়ীকে ‘পুশ ব্যাক’-এর অভিযোগও উঠেছে। হরিশ্চন্দ্রপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী তজমুল হোসেন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সব জানাচ্ছি।” তবে উত্তর মালদহের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, “ভিন্ রাজ্যে কোথাও হেনস্থা করা হচ্ছে না। নথি যাচাই করা হচ্ছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাঙালিকে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অপপ্রচার করছেন। আর ভিন্ রাজ্যে যদি রাজ্যের শ্রমিকদের হেনস্থা হতে হয়, তা দুর্ভাগ্যজনক। কারণ, রাজ্য তাঁদের কাজ দিতে পারছে না।”
মালদহের যে সব পরিযায়ী শ্রমিক হরিয়ানা থেকে ছাড়া পেয়েছেন তাঁদের অন্যতম চাঁচলের আলম আলির দাবি, “প্রথম ২৬ ঘণ্টা খেতে দেওয়া হয়নি। গালিগালাজ করা হয়েছে। স্রেফ অন্তর্বাস পরতে দেওয়া হয়। পরে দিনে দু’বার রুটি, সামান্য ভাত ও ডাল দেওয়া হয়েছে। পুলিশ আবাসন, শৌচাগার, আধিকারিকদের জুতো সাফ করানো হয়েছে আমাদের দিয়ে।”
মুর্শিদাবাদের চার জনের মধ্যে তিন, দক্ষিণ দিনাজপুরের ২৫ জনের মধ্যে ছ’জন ছাড়া পেয়েছেন। তবে উত্তর দিনাজপুরের চার জন এখনও হরিয়ানায় আটক বলে অভিযোগ। নতুন করে বুধবার সে রাজ্যের পানিপথে আটক করা হয়েছে গোয়ালপোখরের ৪৫ শ্রমিককে—এমন অভিযোগে এবং তাঁদের মুক্তির দাবিতে গোয়ালপোখর ব্লক অফিস চত্বরে বিক্ষোভ দেখান আত্মীয়েরা। ইটাহারের তৃণমূল বিধায়ক মোশারফ হোসেনের উদ্যোগে এ দিন বহু পরিযায়ীর পরিবারের হাতে এলাকায় বসবাসের শংসাপত্র দেওয়া হয়।
কোচবিহারের শীতলখুচির হালাল মিয়া চার দিন হরিয়ানায় আটক থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তাঁর দাদা নুরবক্ত মিয়া বলেন, “হরিয়ানা পুলিশ কোচবিহার প্রশাসনের কাছে ফের নথি চেয়েছে।” সূত্রের খবর, হরিয়ানা পুলিশ যাঁদের আটক করেছে, তাঁদের অনেকে রাজবংশী, অনেকে তেলি সম্প্রদায়ের। রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলামও জানান, বার বার জানানো সত্ত্বেও গুরুগ্রামের পুলিশ জানাচ্ছে, তাদের আরও তথ্য চাই পরিযায়ীদের সম্পর্কে। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর নাজিমুল সর্দারের নাম ছিল হরিয়ানার তালিকায়। ছাড়া পেলেও তাঁর ক্ষোভ, “বাংলায় কথা বলা কি অন্যায়? ভারতীয় পরিচয়পত্রের কোনও মূল্য নেই ওদের কাছে!”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)