E-Paper

অশান্তির আবহে আমরা-ওরা ভুলে কার্গিল শহিদকে নিয়ে স্মৃতিচারণ

কণাদকে মাথায় করে রেখেছেন এখানকারই কিছু মানুষ। যাঁরা বর্তমানে রাজ্য রাজনীতির দুই প্রধান বিরোধী দলের সদস্য। রাজনীতিতে পরস্পরের বিরোধী হলেও কণাদের আবেগ ঘিরে তাঁরা এককাট্টা।

স্মরণে: টালার এই বাড়িতেই ছোটবেলায় থাকতেন কণাদ ভট্টাচার্য। শনিবার।

স্মরণে: টালার এই বাড়িতেই ছোটবেলায় থাকতেন কণাদ ভট্টাচার্য। শনিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৫ ০৯:৫১
Share
Save

সমস্ত পথই এসে যেন মিশেছে একটি নামে। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের শহিদ তিনি। কলকাতার বাসিন্দা, সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট। সেই কণাদ ভট্টাচার্যের মৃত্যুর ২৬ বছর পরে তাঁর পরিবারের সদস্যেরা আর কেউ এ শহরে নেই। কিন্তু কণাদকে মাথায় করে রেখেছেন এখানকারই কিছু মানুষ। যাঁরা বর্তমানে রাজ্য রাজনীতির দুই প্রধান বিরোধী দলের সদস্য। রাজনীতিতে পরস্পরের বিরোধী হলেও কণাদের আবেগ ঘিরে তাঁরা এককাট্টা।

বর্তমানে কাশ্মীর-সহ দেশের একাংশে যুদ্ধের এই পরিস্থিতিতে কণাদের কথা মনে করাচ্ছেন অনেকেই। শনিবার বিকেলে ভারত ও পাকিস্তান সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা করলেও রাতের দিকে পাকিস্তান তা লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ।

টালা পার্কের বাসিন্দা কল্যাণ চৌধুরী কিংবা অনুজিৎকুমার নানেরা জানালেন, যুদ্ধ কেউই চান না। কিন্তু বারংবার আঘাত এলে এক সময়ে রুখে দাঁড়াতেই হয়। সেই রুখে দাঁড়ানোর সম্মুখ ভাগে থাকেন কণাদের মতো অসংখ্য মানুষ। কার্গিলে পাকিস্তানের দখলে চলে যাওয়া শৃঙ্গ উদ্ধারে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল কণাদের। বরফের ভিতর থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করে ভারতীয় সেনা। কণাদের কফিনবন্দি দেহ কলকাতায় পৌঁছয়। বনহুগলিতে কণাদের ফ্ল্যাট ঘুরে দেহ নিয়ে আসা হয় টালা পার্কে তাঁর মামার বাড়িতে। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগে টালাতেই ছিলেন কণাদ।

এ দিন বনহুগলির আবাসনে গিয়ে জানা গেল, সেখানে কণাদের কোনও আত্মীয় থাকেন না। আবাসনের অদূরে একটি মাঠের বাইরে কণাদের মূর্তি বসানো হয়েছে। একটি বাস স্টপে রয়েছে তাঁর নামের ফলক। আবাসনের কেয়ারটেকার গোবিন্দ দাস জানালেন, টালা পার্কেই ছোটবেলা কেটেছিল কণাদের। ২০১৩ অবধি সেখানেই ছিলেন কণাদের মামা বিনোদবিহারী চক্রবর্তী। সে বছর তিনি বাড়ি বিক্রি করলে তা কিনে নেন স্থানীয় বাসিন্দা কল্যাণ চৌধুরী। কল্যাণ তাঁর বাড়ির বিভিন্ন ঘরে কণাদের ছবি রেখেছেন। তিনি বললেন, ‘‘আমার সৌভাগ্য যে, আমি কণাদের বাড়িতে থাকি। পরিবারের কাছ থেকে কণাদের একটি মাত্র ছবি পেয়েছিলাম। বাকি ছবিগুলি পাই ইন্টারনেট থেকে। যুদ্ধ তো কাম্য নয়। কিন্তু বার বার একই ঘটনা ঘটলে তো শত্রুকে বার্তা দিতেই হবে। যুদ্ধ মানে তো আবারও কণাদের মতো অনেককে তাঁদের পরিবার হারাবে।’’

কল্যাণ বিজেপির নেতা। কণাদের আত্মীয়দের ফোন নম্বর তাঁর কাছে নেই। সেই নম্বরের হদিস পেতে কল্যাণ সন্ধান দিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা অনুজিৎকুমার নানের। কল্যাণের বাড়ির কাছেই ‘টালা ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশন’ ক্লাব। ক্লাবের সামনে রয়েছে কণাদের আবক্ষ মূর্তি। ক্লাবের সম্পাদক অনুজিতের কথায়, ‘‘কণাদকে ওঁর ছোটবেলা থেকে চিনতাম। কার্গিলে কণাদ গুলিতে ক্ষতবিক্ষত হয়েও ওঁর শিখ রেজিমেন্টের জওয়ানদের রক্ষা করেছিলেন। আমরা যখন কার্গিল দিবস পালন করি, তখন সাংবাদিকেরা এলে বলি, কণাদের বাড়িটা দেখে আসতে, কল্যাণের সঙ্গে কথা বলতে। এখানে আমরা রাজনীতির ঊর্ধ্বে।’’ ২০১২ সালে ক্লাবের তেতলা বাড়ির নাম রাখা হয় ‘ক্যাপ্টেন কণাদ ভবন’।

অনুজিতেরও মত, ‘‘বারংবার নিরীহ মানুষ অকারণে মারা গেলে কঠিন পথ ধরতেই হবে। আবার এটাও ঠিক, যুদ্ধ হলে সাধারণ মানুষ আর কণাদদের মতো সৈনিকেরই মৃত্যু হয়। সংঘর্ষ বিরতি পাকিস্তান যদি মানতে পারে, খুব ভাল হয়।’’

কার্গিলের মতো এ বারেও পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি ভারতীয় সেনা উড়িয়ে দেওয়ার পরে গোটা দেশের সব রাজনৈতিক দল একসঙ্গে কেন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়েছে। টালার দুই নেতার বক্তব্যও স্পষ্ট, ‘‘যেখানে দেশের আবেগ জড়িয়ে, সেখানে রাজনীতির প্রশ্ন নেই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kargil War army

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।