Advertisement
E-Paper

ঋণ করে ঘি-এর নীতি ছাড়েননি অমিত

যথা আয়, তথা ব্যয়। আদর্শ গৃহস্থের এটাই নীতি। ধরেই নেওয়া যায়, রাজ্যের সংসার চালানোর ভার যে ব্যক্তির হাতে তিনিও এমন নীতিই গ্রহণ করবেন। কিন্তু শুক্রবার বিধানসভায় রাজ্য বাজেট পেশ করে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বুঝিয়ে দিলেন, এ নীতি তিনি মানেন না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৩৭
খোশ মেজাজে। বাজেট চলাকালীন অমিত মিত্র ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার বিধানসভায়। ছবি: সুমন বল্লভ।

খোশ মেজাজে। বাজেট চলাকালীন অমিত মিত্র ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার বিধানসভায়। ছবি: সুমন বল্লভ।

যথা আয়, তথা ব্যয়। আদর্শ গৃহস্থের এটাই নীতি। ধরেই নেওয়া যায়, রাজ্যের সংসার চালানোর ভার যে ব্যক্তির হাতে তিনিও এমন নীতিই গ্রহণ করবেন। কিন্তু শুক্রবার বিধানসভায় রাজ্য বাজেট পেশ করে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বুঝিয়ে দিলেন, এ নীতি তিনি মানেন না। তিন ঋণ করে ঘি খাওয়ার পথেই হাঁটবেন। তার ফল হল, ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরের শেষে রাজ্যের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩ লক্ষ ৬৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রত্যেক রাজ্যবাসীর মাথায় থাকছে ৩৩ হাজার টাকারও বেশি ঋণ।

ঋণের এই ফাঁদে পড়ার জন্য অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র দায়ী করেছেন আগের বামফ্রন্ট সরকার এবং নোট বাতিলের ঘটনাকে। বাজেট ভাষণেই এ কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট কথা, ‘‘সিপিএম সরকার বাজেট নিয়ন্ত্রণ আইন না মেনে যত খুশি বাজার থেকে ঋণ নিয়েছে। আর এখন আমাদের টাকা কেটে নিচ্ছে। আমাদের তো টাকা ছাপানোর ক্ষমতা নেই। তার মধ্যেও কষ্ট করে চালাচ্ছি।’’ মুখ্যমন্ত্রী এর পরেই বলেন,‘‘যত কষ্টই হোক কর্মীরা মাস পয়লায় বেতন পাবেন। যা শুরু করেছি সব চলবে। খাদ্যসাথী, সবুজসাথী, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, শিক্ষাশ্রী থেকে বৈতরণী-সমব্যথী সব চলবে।’’ অর্থ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, মেলা, খেলা, উৎসব, অস্থায়ী নিয়োগ, দু’টাকা কেজি চাল, সাইকেল বিলির মতো প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এ বারও বিভিন্ন খাতে রাজ্যের ভর্তুকি ধরা হয়েছে ৫৮০০ কোটি টাকা। পরিকল্পনা বর্হিভূত খাতে খরচ ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা। শুধুমাত্র রাজ্যের আয় আর দিল্লির পাওনা দিয়ে এই বিপুল খরচ মেটানো সম্ভব নয়। তাই বাজারি ঋণই ভরসা।

বছরের পর বছর ঋণ যত বাড়ছে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শোধ করার পরিমাণ। সেই ঋণ শুধতে আবার ঋণ। এই ফাঁদেই ২০১১ সালে যেখানে ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লক্ষ কোটি টাকা, তা বেড়ে হতে চলেছে ৩ লক্ষ ৬৬ হাজার কোটি টাকা। ছ’বছরে রাজ্যকে ঋণ নিতে হচ্ছে ১ লক্ষ ৬৬ হাজার কোটি টাকা। এর থেকে পরিত্রাণের পথ নেই বলেই মত অর্থ কর্তাদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, খরচ কমিয়ে আর রাজস্ব বাড়িয়ে সেই পথ থেকে মুক্তি পাওয়া যেত। কিন্তু খরচে লাগাম নেই। শিল্প কারখানা তেমন না হওয়ায় সেই হারে রাজস্বও বাড়ছে না। ফলে সঙ্কট সামলাতে বাজারি ঋণে ভরসা না রাখলে কেন্দ্রীয় অনুদানেও হাত পড়তে পারে বলে আশঙ্কা অর্থ কর্তাদের।

আরও আছে। ২০০৭-০৮ সাল থেকে বাম সরকার বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার জন্য বাজার থেকে দেদার ঋণ নিতে শুরু করে। সেই সব ১০ বছরের ঋণপত্রের আসল অংশটা মেটানোর সময় এসেছে এখন। ফলে এক ধাক্কায় ঋণ শোধের পরিমাণও আগামী অর্থবর্ষ থেকে অনেকটাই বেড়ে যাবে। অর্থমন্ত্রীর দাবি, চলতি ২০১৬-১৭ সালে ঋণ শোধের পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা হলেও পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়াবে ৪৭ হাজার কোটিতে। ঋণ শোধের এই অঙ্ক বাড়ার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা। ২০১৬-১৭ সালের বাজেটে ২৬ হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব করেছিল রাজ্য। সংশোধিত বাজেটে তা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ সালের বাজেটে বাজার থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা হবে বলে প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থ দফতরের কেউ কেউ জানিয়েছেন, বছর শেষে এই ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি ছাড়াতে পারে।

সরকারি কর্মীদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, বাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ঋণ নেওয়ার সংস্থান রেখে সরকার বেতন কমিশনের সুপারিশ চালু করার পথও খোলা রাখছে।

Mamata Banerjee Amit Mitra Loan State Budget
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy