ভেঙে পড়া কংক্রিটের সেই গার্ডার। রবিবার মগরায়। —নিজস্ব চিত্র
ফের ভেঙে পড়ল নির্মীয়মাণ সেতু। কলকাতার গণেশ টকিজের পরে এ বার হুগলির মগরা। মাঝে ব্যবধান মাত্র সাত মাস।
গত মার্চে গণেশ টকিজে সেতু ভেঙে মৃত্যু হয়েছিল বেশ কয়েক জনের। প্রশ্ন ওঠে নির্মাণ কাজে নজরদারির গাফিলতি ও ব্যবহৃত কাঁচামালের মান নিয়ে। মামলা করা হয় নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে। সরকারি ভাবে ঠিক হয়, এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য পুরনো সেতুর পাশাপাশি নির্মীয়মাণ সেতুগুলিরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। রবিবার মগরায় জিটিরোডে উড়ালপুলের একাংশ ভেঙে পড়ার ঘটনায় সরকারি ওই সিদ্ধান্ত কতটা মানা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ আচমকাই সেতুর প্রায় ৪০ ফুট লম্বা কংক্রিটের গার্ডার ভেঙে পড়ে। সেই সময় সেতুর নীচে দাঁড়িয়েছিল একটি ডাম্পার। গাডারটি সরাসরি তার উপর এসে পড়ে। একটি মোটরবাইকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদিও কেউ হতাহত হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। যথারীতি এ ক্ষেত্রেও নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রশ্ন সামনে এসেছে।
কী করে ভেঙে পড়ল সেতুর গার্ডার?
প্রশাসন ও নির্মাণকারী সংস্থা সূত্রে খবর, এ দিন সকালে সেতুর নীচের রাস্তা জেসিবি মেশিন দিয়ে সমান করার কাজ চলছিল। সেই সময় যন্ত্রের ধাক্কায় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে কংক্রিটের গার্ডার। বিকট আওয়াজে ছুটে আসেন লোকজন। মুহূর্তে চারদিকে কলকাতার ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কায় আতঙ্ক ছড়ায়। দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই বহু দোকান, গ্যারাজ রয়েছে। অনেকে সাইকেল, মোটরবাইক বা গাড়ি রাখেন নির্মীয়মাণ ওই সেতুর নীচে। বাসিন্দাদের বক্তব্য, ঘটনাচক্রে এ দিন কাজ চলছিল বলে সেতুর নীচে লোকজন ছিল না। তবে ভাঙার পর এক জনকে সেতুর নীচ থেকে ছুটে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। স্থানীয় দোকানদার মহম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ‘‘হঠাৎই বিকট আওয়াজ করে অতবড় কংক্রিটটা যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। তলায় লোকজন থাকলে কী হত, ভেবে শিউরে উঠছি।’’ ঘটনার পর পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ। এর কিছুক্ষণ পর কংক্রিটের গার্ডারটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিন ঘটনাস্থলে আসেন মহকুমাশাসক (সদর) সুদীপ সরকার। তিনি বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে এটা দুর্ঘটনা। আজকেই গার্ডারগুলি জোড়া লাগানোর কাজ শুরু করার কথা ছিল। মেশিনের ধাক্কাতেই কংক্রিটের গার্ডার ভেঙে পড়ে। তবে সবকিছুই তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হবে।’’
গণেশ টকিজে সেতু ভাঙার পর উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করেই নির্মাণ কাজ চলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এলাকার মানুষ। মগরাতেও সেই একই অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারা। যদিও নির্মাণকারী সংস্থার কর্তারা ওই অভিযোগ মানেননি। সংস্থার সাইট ইনচার্জ সেখ আলমের দাবি, ‘‘শ্রমিকেরা সব সময় হেলমেট পরে কাজ করেন। নির্মাণ কাজের সময় রাস্তায় যান চলাচলও আমরা নিয়ন্ত্রণ করি। এ দিন নিছকই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, সেতুটি নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে ‘দীনেশচন্দ্র আর অগ্রবাল ইনফোকম প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে গুজরাতের একটি বেসরকারি সংস্থা। বছর দেড়েক ধরে কাজ চলছে। আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। গত শুক্রবার কংক্রিটের গার্ডারগুলি সেতুর উপরে রাখা হয়েছিল। রবিবার সকালে তা জোড়া লাগানোর কাজ হওয়ার কথা ছিল। নির্মাণকারী সংস্থার আধিকারিকদের দাবি, উপযুক্ত মানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়েই কাজ করা হচ্ছে। সংস্থার সুপারভাইজার সঞ্জয় শর্মা বলেন, ‘‘ঠিক কী কারণে ওই ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy