Advertisement
E-Paper

‘দিদি’র কানে তুলতেই আশ্বাস

কাজ হল তাতেই। নতুন বছরে জমি-বাড়ি দুই-ই কুন্তীকে দেবে বীরভূম জেলা প্রশাসন।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৭
একতারা হাতে: কঙ্কালীতলায় পুজো দিয়ে ফেরার পথে বোলপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

একতারা হাতে: কঙ্কালীতলায় পুজো দিয়ে ফেরার পথে বোলপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

সাহস জুটিয়ে, চিৎকার করে কুন্তী সাউ বলেই ফেলেছিলেন, ‘‘দিদি, বাড়িটা তো পেলাম না।’’ বোলপুরের খোয়াইয়ের হাটে তখন কে নেই! পুলিশ, নেতা, মন্ত্রী তো বটেই, আরও কত শত লোক। কিন্তু, যাঁর কানে পৌঁছনোর, ঠিক পৌঁছল। পাশে থাকা আধিকারিকদের কাছে জানতে চাইলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘‘উনি এখনও ঘর পাননি কেন?’’

কাজ হল তাতেই। নতুন বছরে জমি-বাড়ি দুই-ই কুন্তীকে দেবে বীরভূম জেলা প্রশাসন। একতারা, মাটির পুতুল, পেনদানি, কখনও বা আমড়ার আঁটি দিয়ে তৈরি নকশা বিক্রি করে সংসার চালান ওই মহিলা। স্বামী মারা গিয়েছেন। বড় মেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরে এসেছে কোলে মেয়ে নিয়ে। রয়েছে আরও এক মেয়েও। গত বছর মুখ্যমন্ত্রী যখন বোলপুরে এসেছিলেন, তখন সুযোগ বুঝে ঘরের আর্জি জানিয়েছিলেন কুন্তীর কথায়, ‘‘না বলে উপায় ছিল না? বোলপুরের গোয়ালপাড়ার কাছে একটা জায়গায় কোনও মতে রাতটুকু কাটাই। খুব কষ্ট হয়।’’ সে বার মুখ্যমন্ত্রী বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু, বছর ঘুরলেও তা হয়নি।

মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী বর্ধমানের মাটি উৎসব থেকে পৌঁছন বোলপুর। কঙ্কালীতলায় পুজো দিয়ে ফেরার পথে শ্যামবাটি ক্যানাল থেকে খোয়াই হাট পর্যন্ত হেঁটে যান। কুন্তীও কাছাকাছি আসার চেষ্টা করেন। খানিকটা চেঁচিয়েই মুখ্যমন্ত্রীকে ঘর না হওয়ার কথা মনে করিয়ে দেন। পরে জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলেন, ‘‘টাকা এসে গিয়েছে। কিন্তু, ওঁর নিজের কোনও জমি নেই। তাই পাট্টার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাট্টা পেয়ে গেলেই বাড়ি পেয়ে যাবেন।’’

নিজের বানানো একটা একতারা কুন্তী উপহার হিসেবে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। সানন্দে তা নিয়ে মমতা ১০০ টাকার একটা নোট গুঁজে দেন কুন্তীর হাতে। আনন্দে ডগমগ কুন্তী বলছেন, ‘‘আর যাই হোক, এই টাকাটা কোনও দিন খরচ করব না!’’

মঙ্গলবারের বিকেলটা অন্য রকম কেটেছে প্রান্তিকের কাছে বনডাঙার বাহামনি মুর্মুরও। এ দিন তিনি উঠোনে দাঁড়িয়েছিলেন হুশ করে চলে যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রীকে একঝলক দেখবেন বলে। স্বপ্নেও ভাবেননি, ‘কী গো কেমন আছো’ ডাক দিয়ে মমতাই চলে আসবেন তাঁর ঘরে! ঘুরে ঘুরে দেখবেন নিকোনো উঠোন, আদিবাসী কলকায় ভরিয়ে রাখা বাড়ির দেওয়াল। মু্খ্যমন্ত্রী গাড়ির দরজা খুলে নামতেই বাহামনির স্বামী রবি মাটি কাটা ফেলে কোদাল হাতেই স্বাগত জানান তাঁকে। মমতা জানতে চান, কী করে সংসার চলে, ১০০ দিনের কাজ পান কি না। তার পরেই প্রশ্ন, কী রান্না হয়েছিল দুপুরে? হেসে বাহামনি জানান, কপির ঝুল আর ডাল। মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি বলেছেন, ‘‘ভালই আছি এখন।’’

এর আগেই মা-মাটি-মানুষ গোত্রের নামে সঙ্কল্প করে পুজো দিয়েছেন। পথে এক আদিবাসী পরিবারে গিয়ে তাঁদের ভাল থাকার খবরে তাই খুশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা।

সহ প্রতিবেদন: দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়

Mamata Banerjee Birbhum মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীরভূম
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy